কোহলির সঙ্গে নিজের পার্থক্যটা বুঝিয়ে দিলেন রোহিত

অধিনায়কত্বের কৌশলে কোহলির চেয়ে অনেকটা আলাদা রোহিতছবি: আইপিএল ওয়েবসাইট

নতুন পথচলা এরই মধ্যে শুরু হয়ে গেছে ভারতের। কোচ হিসেবে রাহুল দ্রাবিড় এসেছেন, এরপর টি-টোয়েন্টির পর ওয়ানডেতেও অধিনায়কত্বে এল বদল। বিরাট কোহলি স্বেচ্ছায় টি-টোয়েন্টির অধিনায়কত্ব ছেড়ে দেওয়ার পর সেটি তো রোহিত শর্মাকে দেওয়া হয়েছেই, এরপর গত বুধবার ভারতের ওয়ানডে দলের নেতৃত্ব থেকে কোহলিকে সরিয়ে সেখানেও রোহিতকেই নিয়ে আসে ভারতের ক্রিকেট বোর্ড (বিসিসিআই)।

টেস্টে কোহলি, ওয়ানডে আর টি-টোয়েন্টিতে রোহিত...সাদা আর লাল বলের ক্রিকেটে অধিনায়কত্বের ধরনটা তো মাঠেই দেখা যাবে। তার আগে সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথায়ও কোহলির সঙ্গে নিজের পার্থক্যটা অনুচ্চারে বুঝিয়ে দিলেন রোহিত।

সীমিত ওভারের ক্রিকেটে ভারতের নতুন অধিনায়ক কোহলির অধীন খেলার সময়ের প্রশংসা করেছেন অনেক। সময়টা উপভোগ করেছেন জানিয়ে রোহিত বলেছেন, কোহলি জয়কেই সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিতেন। তবে তাঁর অধীন খেলোয়াড়দের সঙ্গে যোগাযোগ ও সমন্বয় আর জয়ের চেয়েও এর আগের প্রক্রিয়াতেই বেশি মনোযোগ দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন রোহিত।

রোহিত শর্মা ও রাহুল দ্রাবিড়ের হাত ধরে নতুন পথচলা শুরু ভারতের
ছবি: বিসিসিআই

কদিন পর দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে যাবে ভারত। তার আগে তাদের টেস্ট দলের অনুশীলন চলছে। সেখানেই মাঠের পাশে দাঁড়িয়ে কাল বিসিসিআইটিভির সঙ্গে কথা বলেছেন রোহিত। সাদা বলের নেতৃত্বের পাশাপাশি টেস্টেও কোহলির পাশে সহ-অধিনায়ক করা হয়েছে রোহিতকে।

বিসিসিআইটিভিতে কাল রোহিতের কণ্ঠে কোহলির অধিনায়কত্বের প্রশংসাই থাকল, ‘পাঁচ বছর ও দলটাকে নেতৃত্ব দিয়েছে। সব সময়ই সামনে থেকেই ও উদাহরণ তৈরি করেছে। আমরা যখনই মাঠে নামতাম, সব সময়ই প্রতিটি ম্যাচ জেতার একটা চোয়ালবদ্ধ প্রতিজ্ঞা থাকত আমাদের। পুরো দলের উদ্দেশে (কোহলির) বার্তাই থাকত এমন।’

কোহলির অধীন খেলার পুরোটা সময় কেমন লেগেছে, সেটিও জানিয়েছেন রোহিত, ‘কোহলির অধীন খেলার সময়টা দারুণ কেটেছে আমাদের। ওর অধীন অনেক ম্যাচ খেলেছি আমি। প্রত্যেকটা মুহূর্তই উপভোগ করেছি, এখনো করি।’

তবে কোহলি যেখানে জয় পাওয়াকেই সবার আগে বিবেচনায় রাখতেন, সেটিকেই অর্ঘ্য করে রেখেছিলেন, রোহিত সেদিক থেকে কিছুটা ছাড় দিচ্ছেন দলকে। জয় তাঁর কাছেও বড় চাওয়া, তবে তার আগে জয়ের প্রক্রিয়ায় বেশি মনোযোগ দিতে চান।

টেস্টের নেতৃত্ব থাকছে কোহলির হাতেই
ছবি: এএফপি

‘শেষ পর্যন্ত ফলটা নিজেদের পক্ষে আনতে চাইলে তার আগে অনেকগুলো কাজ আমাদের ঠিকভাবে করতে হবে। আমরা সর্বশেষ আইসিসি টুর্নামেন্ট (চ্যাম্পিয়নস ট্রফি) জিতেছি ২০১৩ সালে। তবে সেই চ্যাম্পিয়নস ট্রফির পর আমরা যেভাবে এগিয়েছি, তাতে ভুল কিছু দেখি না আমি। একটা দল হিসেবেই খেলেছি আমরা, শুধু শিরোপা জিততে যে বাড়তি কিছু লাগে, সেটা ছিল না আমাদের’—বলেছেন রোহিত।

আগামী কয়েক বছরে অনেকগুলো বৈশ্বিক শিরোপা আছে। এ সময় ভারতের কোনো বিশ্ব আসরে জেতার স্বপ্নপূরণ হওয়ারই সম্ভাবনা বেশি। তবে শিরোপায় চোখ রেখেও রোহিত আগে ঠিক করতে চাইছেন লক্ষ্য ছোঁয়ার প্রক্রিয়াটা, ‘বেশ কয়েকটি বিশ্বকাপ আসছে, সেগুলোতে ভারত ভালো করার চেষ্টা সব সময়ই করবে। আমাদের মূল মনোযোগ শিরোপা জেতা, তবে সেখানে একটা প্রক্রিয়া আছে। দল হিসেবে সেটা আগে মানতে হবে আমাদের। আইসিসির টুর্নামেন্ট জিততে হলে তার আগের অনেকগুলো কাজ ঠিকভাবে করতে হবে, তারপরই পারব শিরোপা জেতার কথা ভাবতে।’

আগে সে জায়গায় ভারতের দুর্বলতা ছিল বলেই উঠে আসছে রোহিতের বিশ্লেষণে, ‘যখন চ্যালেঞ্জ আসে, তখন ওই কঠিন পরিস্থিতিতে আমরা কী করতে পারছি, সেটা গুরুত্বপূর্ণ। আমার মনে হয়, আগে আমরা যখনই তেমন পরিস্থিতিতে পড়েছি, ১০ রানে ৩ উইকেট পড়ে গেল বা ১৫ রানে ২ উইকেট, আমরা সেখান থেকে ফিরে আসতে পারিনি।’

এসব দিকে উন্নতি করতে গেলে আগে দলের খেলোয়াড়দের মধ্যে নিজেদের ভূমিকা নিয়ে পরিষ্কার ধারণা, দলের পরিকল্পনা বোঝা জরুরি বলেই মানেন রোহিত। সে কারণে দলের ভেতরে যোগাযোগ ও সমন্বয় ঠিক করতে চান রোহিত, ‘আমি আগেও সীমিতভাবে ভারতের নেতৃত্ব দেওয়ার সুযোগ পেয়েছি। আর যখনই সুযোগ পেয়েছি, তখন চেষ্টা করেছি সবকিছু সরল রাখতে। একটা দিক সব সময়ই ঠিক রাখতে চেয়েছি, তা হলো খেলোয়াড়দের সঙ্গে যোগাযোগের ক্ষেত্রে পরিষ্কার থাকা। চেষ্টা করেছি, ওরা যেন ওদের ভূমিকা ঠিকমতো বোঝে, সেটা নিশ্চিত করতে। আমি এটাই নিশ্চিত করতে চাই, খেলোয়াড়েরা যেন বোঝে তাদের ঠিক কী কারণে দলে নেওয়া হয়েছে।’

নতুন কোচ রাহুল দ্রাবিড়ের অধীন রোহিতের নেতৃত্বে এরই মধ্যে নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে টি-টোয়েন্টি সিরিজ খেলেছে ভারত। সিরিজটি জিতেছে তারা। রাহুলের সঙ্গে কাজ করার অভিজ্ঞতা জানাতে গিয়ে রোহিতের কথায়ই বোঝা গেল, কোহলির সঙ্গে তাঁর অধিনায়কত্বে পার্থক্য হবে দলের ভেতরে খেলোয়াড়দের কিছুটা স্বস্তি দেওয়ার ক্ষেত্রেও।

রোহিত বললেন, ‘রাহুল ভাইয়ের সঙ্গে তিন ম্যাচে কাজ করার অভিজ্ঞতা অসাধারণ। তিনি ক্রিকেটটা কীভাবে খেলতেন, সেটা তো আমরা সবাই জানি। নিয়মের মধ্যে থেকে লড়াই করতেন। তবে (কঠোর নিয়মের মধ্যে) স্বস্তিতে নিশ্বাস নেওয়ার জায়গাও রাখেন তিনি। এটা গুরুত্বপূর্ণ, এতে দলের আবহটা হালকা, আনন্দপূর্ণ থাকে।’