জোহানেসবার্গকে আফিফ–মিরাজের ‘চট্টগ্রাম’ বানানোর চেষ্টা
চট্টগ্রাম থেকে জোহানেসবার্গ—দূরত্বটা প্রায় ৯ হাজার কিলোমিটার। আফগানিস্তানের বিপক্ষে সিরিজের প্রথম ওয়ানডে থেকে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় ওয়ানডে—মধ্যে তিন ম্যাচ। দুই ম্যাচের মধ্যে পার্থক্য আছে আরও। তবে আফিফ হোসেন ও মেহেদী হাসান মিরাজ জোহানেসবার্গে চট্টগ্রাম ফিরিয়ে আনলেন ‘প্রায়’। অষ্টম উইকেট জুটিতে দুজন লড়াই করলেন, ১১২ বলে তুললেন ৮৬ রান, দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে যেটি সর্বোচ্চ। ১০৭ বলে ৭২ রান করা আফিফকে দারুণ সঙ্গ দিলেন ৪৯ বলে ৩৮ রান করা মিরাজ। কিন্তু পার্থক্যটা আসলে ওই ‘প্রায়’ শব্দটার মধ্যেই।
আফগানিস্তানের বিপক্ষে দেশের মাটিতে ২১৫ রানতাড়ায় ব্যাটিং করছিল বাংলাদেশ, এবার ব্যাটিং করতে হলো আগেই। সেবার ৫ উইকেট পড়েছিল ২৮ রানে, এবার ৩৪ রানে। সেবার মিরাজের সঙ্গে আফিফের জুটিটা শুরু হয়েছিল ৪৫ রানে ৬ উইকেট পড়ে যাওয়ার পর, আজ ৯৪ রানে ৬ উইকেট যাওয়ার পর। সেবার বাংলাদেশ পেয়েছিল ৪ উইকেটের দুর্দান্ত জয়। আজ সংগ্রহটা গেল ১৯৪ রান পর্যন্ত, শেষ পর্যন্ত যথেষ্ট হবে সেটি? রেকর্ড অবশ্য পক্ষে কথা বলে না, ওয়ান্ডারার্সে এত কম রান নিয়ে জেতার রেকর্ড আছে মাত্র দুইটি।
জোহানেসবার্গের বাউন্সি উইকেটে বাংলাদেশ ব্যাটসম্যানদের কঠিন এক পরীক্ষাই নিল দক্ষিণ আফ্রিকা। বিশেষ করে ফাস্ট বোলার কাগিসো রাবাদা। রাবাদা ও তাঁর সহকারীদের শর্ট বলের কোনো উত্তর যেন ছিল না বাংলাদেশের কাছে। সাকিব আল হাসান, লিটন দাস, ইয়াসির আলীর পর আফিফ ও মিরাজের উইকেট নিয়ে বাংলাদেশকে তো বলতে গেলে একা হাতেই গুঁড়িয়ে দিলেন রাবাদা। লিটন শুরুটা ইতিবাচক করেছিলেন, তবে বাড়তি বাউন্সে ভড়কে গেছেন তিনিও।
শুরুটা অবশ্য হয়েছিল লুঙ্গি এনগিডির বলে অধিনায়ক তামিম ইকবাল ভড়কে যাওয়ার মধ্য দিয়ে। ওয়ান্ডারার্সের অসম বাউন্সের উইকেটে পাওয়ারপ্লের মধ্যেই সাকিব ও লিটনকে ফিরিয়েছেন রাবাদা, ১২তম ওভারে ইয়াসির আলীও তাঁর শিকার। এদের সবাই ক্যাচ দিয়েছেন। মুশফিকুর রহিমকে টিকতে দেননি ওয়েইন পারনেল, তিনি অবশ্য হয়েছেন এলবিডব্লু। ২০১৭ সালের পর পারনেলের এটি প্রথম আন্তর্জাতিক উইকেট।
সেই পারনেল চোট পেয়ে উঠে গিয়েছিলেন ২.৫ ওভার করেই। তাঁর অসমাপ্ত ওভার সম্পন্ন করতে এসে অধিনায়ক টেম্বা বাভুমা করেছেন আরও ৬ ওভার, শেষ পর্যন্ত আফিফের কঠিন একটা ফিরতি ক্যাচ নিতে গিয়ে চোট পেয়েছেন তিনিও। দক্ষিণ আফ্রিকা এ দিন ফিল্ডিংয়ে কাটিয়েছে মিশ্র দিন। ৪৯তম ওভারে রাসি ফন ডার ডুসেনকেও বোলিংয়ে এনেছেন বাভুমা, ফন ডার ডুসেন পেয়েছেন উইকেটও।
সেটি অবশ্য আফিফ-মিরাজ ফেরার পর। ১৩তম ওভারে ক্রিজে এসেছিলেন আফিফ, মাহমুদউল্লাহর সঙ্গে তাঁর জুটিতে ওঠে ৬০ রান। আফিফকে ভালোই সঙ্গ দিচ্ছিলেন মাহমুদউল্লাহ, কিন্তু এ ম্যাচ দিয়ে একাদশে ফেরা বাঁহাতি রিস্ট স্পিনার তাব্রেইজ শামসির ফাঁদে পড়ে লেগ স্লিপে ক্যাচ দিয়ে ফিরতে হয়েছে তাঁকে।
লড়াইয়ের ভারটা তাই আবার গিয়ে পড়েছে আফিফ-মিরাজের ওপর। আফিফ শুরু থেকেই ইতিবাচক ছিলেন, মুখোমুখি তৃতীয় ও পঞ্চম বলেই রাবাদাকে চার মারেন। এর মধ্যে পরেরটি ছিল অফ স্টাম্পের বাইরে শর্ট বল, আফিফ সেটিতে চার দিয়েই ইঙ্গিত দিয়েছিলেন তাঁর মানসিকতার। দুই স্পিনার কেশব মহারাজ ও শামসির ওপর সুযোগ পেলেই চড়াও হয়েছেন এ বাঁহাতি। ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় ও দেশের বাইরে প্রথম অর্ধশতকটি পূর্ণ করেন ৭৯ বলে। এরপর মহারাজকে দারুণ কাভার ড্রাইভে মারা চারে ইঙ্গিত দিচ্ছিলেন ইনিংস আরও বড় করার। তবে রাবাদার শেষ ওভারটা ঝুঁকি না নিয়ে খেলার কৌশলটা মিস করে গেছেন, শর্ট বলে চড়াও হতে গিয়ে ক্যাচ তুলেছেন ১০৭ বলে ৭২ রান করার পর।
ইতিবাচক ছিলেন মিরাজও, ৪৯ বলে ৩৮ রানের ইনিংসে মহারাজকে স্লগ সুইপে মেরেছেন দুইটি ছয়। তবে আফিফের মতো তিনিও ফিরেছেন রাবাদার বলেই, এবার মিড-অফে দারুণ ক্যাচ নিয়ে ‘দায়মোচন’ করেছেন ইয়ানেমান ম্যালান। এর আগে ২১ রানে মিরাজের সহজ ক্যাচ ফেলেছিলেন ম্যালান। মিরাজ ফেরার পর বাংলাদেশ যোগ করতে পেরেছে আর ১৩ রান। তাসকিন আহমেদ ও মোস্তাফিজুর রহমান অল-আউট হতে দেননি, শেষদিকে প্রাপ্তি সেটিই।
তবে এ ম্যাচে বাংলাদেশের সিরিজ জয় নিশ্চিত করতে তাসকিন-মোস্তাফিজুর ও বাকি বোলারদের যে দারুণ কিছু করে দেখাতে হবে, সেটি নিশ্চিত। চাইলে আফিফ-মিরাজের ব্যাটিং থেকে অনুপ্রেরণা নিতে পারেন তাঁরা।