জয়ে শুরুর সুবর্ণ সুযোগ আজ

গাজী আশরাফ হোসেনফাইল ছবি

বিশ্বকাপের আসল পর্বটা শুরু হলো। বেশ কিছুদিন পর টুর্নামেন্টটা হচ্ছে বলে সবাই তাকিয়ে ছিল। তবে ক্রিকেটাররা কি উপভোগ করতে পারছে? যখন লিখছি, দক্ষিণ আফ্রিকা-অস্ট্রেলিয়ার খেলা হচ্ছে। টি-টোয়েন্টির আমেজে হচ্ছে না। আদর্শ উইকেটের ধারেকাছেও না। এখন সবচেয়ে বড় ভূমিকা হবে দলের বিশ্লেষকের। বোলিংয়ের আদর্শ জায়গাটা তিনি ধরিয়ে দেবেন, বোলারদের সেটা করতে হবে। দিন গড়ালে বিশ্বকাপের উইকেটের উন্নতি হওয়ার সুযোগ কম। সে ক্ষেত্রে ব্যাটসম্যানদের চেয়ে বোলারদের ভূমিকাটাই বেশি গুরুত্বপূর্ণ হতে যাচ্ছে। নায়ক হতে পারে বোলাররাই।

বাংলাদেশ নতুন করে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ শুরু করছে। ক্রিকেটাররা মানসিকভাবে কতটা চাঙা, জানি না। আজ মাঠে শরীরী ভাষা দেখলে বোঝা যাবে সেটা। ফর্মে না থাকার চাপ কাটিয়ে কে কতটা পারফর্ম করতে পারছে, সেটাও দেখার বিষয়। আমার মনে হয়, একাদশে তেমন কোনো পরিবর্তন আসবে না। সৌম্যকে আশা করা বোকামি। মিডল অর্ডারে শামীম অনভিজ্ঞ। মোস্তাফিজ তেমন ভালো না করলেও আমাদের প্রধান বোলার। অন্যরা মোটামুটি ভালোই করেছে।

আজ বাংলাদেশের পরিকল্পনা কী হবে?
ছবি: বিসিবি

শারজার উইকেটটা একটু জটিল মনে হয়েছে। প্রথম পর্বে দেখেছি, মন্থর থেকে মন্থরতম হয়েছে এটা। অন্যদিকে শ্রীলঙ্কার বোলিং আক্রমণ পেসার ও স্পিনারদের সমন্বয়ে বেশ শক্তিশালী বলতে হবে। মহীশ তিকশানার যেমন পারফরম্যান্স, তাঁর না খেলাটা বাংলাদেশের জন্য ভালো সংবাদই। শ্রীলঙ্কা আকিলা দনাঞ্জয়া বা ধনঞ্জয়া ডি সিলভাকে বেছে নেবে হয়তো। ডি সিলভাকে নিলে ব্যাটিংয়ে শক্তিমত্তা বাড়বে একটু।

অবশ্য নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে ৪৪ রান তাড়া করার সময় মনে হলো, শ্রীলঙ্কাও বাংলাদেশের মতো একই সমস্যায় ভুগছে। ওপেনিং জুটিটা তেমন জুতসই মনে হয়নি। এর আগে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষেও ১১ রানে ৩ উইকেট হারিয়েছিল তারা। ফলে তাদের নির্বাচকদেরও সমস্যা বোধ হয় বাংলাদেশের মতোই।

মোস্তাফিজই মূল ভরসা
ছবি: বিসিবি

আজকের ম্যাচটা আমাদের ছন্দে আসার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। শক্তিমত্তায় শ্রীলঙ্কা তুলনামূলক কাছাকাছি। আমাদের তাই একটা সুবর্ণ সুযোগ। জয় দিয়ে শুরু করতে পারলে এ টুর্নামেন্টে আমাদের ভালো করার একটা সম্ভাবনা উঁকি দেবে। যে ফর্মে ছিলাম, সে ফর্মে থেকে সেমিফাইনাল কল্পনা করা উচ্চাভিলাষী হয়ে যায়। তবে একটা লক্ষ্য রেখেই টুর্নামেন্ট শুরু করতে হয়। সুপার টুয়েলভের দল হিসেবে বাংলাদেশেরও সেমিফাইনালই লক্ষ্য হওয়া উচিত। সে ক্ষেত্রে জয়টা গুরুত্বপূর্ণ।

উইকেট দেখে মনে হচ্ছে, দলগুলোর শক্তিমত্তার পার্থক্য অনেকটাই কমে আসবে। ফলে এরপরের ম্যাচগুলোতেও বাংলাদেশের ভালো সুযোগ থাকবে। পাওয়ার প্লেতে যদি উইকেট সহায়তা না করে, তাহলে সেখানে ‘পাওয়ার’ দেখানো হবে বোকামি। উইকেটের চাহিদা অনুযায়ীই খেলা উচিত, জোর করে শট খেলার মানে নেই। এসব উইকেটে বাজে বল পেলেই শুধু বড় শট খেলা যায়। সেটা মাথায় রেখে ১৬০ না, ১৪০ রানের স্কোর নিয়েও লড়াই করা যাবে। একটা মানসিকতা থাকে, আগে ব্যাটিং করলে ১৬০ না করলে জেতা যাবে না। সে মানসিকতা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।

ওপেনিং নিয়ে অস্বস্তি যাচ্ছে না বাংলাদেশ দলের
ছবি: বিসিবি

এ পর্বে আমরা ফেবারিট না। ফলে আন্ডারডগ হিসেবে চাপ কম। অনেক খোলা মনে খেলতে পারব। তবে বোলারদের অনেক বড় পরীক্ষা হবে। লেংথের সামান্য হেরফেরে শাস্তি পেতে হতে পারে। কাল হয়তো ব্যাটিংয়ে তেমন পেশিশক্তির প্রয়োগ দেখতে পাব না।

আগের পর্বে বেশ কয়েকটা ভুল হয়েছে। জুটি, ব্যক্তিগত বড় ইনিংস হয়নি—এগুলোই এ টুর্নামেন্টে গুরুত্বপূর্ণ। যে থিতু হবে, উইকেটে ধাতস্থ হবে, তাকেই এক প্রান্ত আগলে রাখতে হবে। আমার মনে হয়, অধিনায়কত্বের ক্ষেত্রে মাহমুদউল্লাহকে আবেগ থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। অনেক কথা চালাচালি হয়েছে, হচ্ছে—এগুলো না ধরে ক্রিকেট খেলায় মনোযোগী হওয়া উচিত। সুপার টুয়েলভ অনেক কঠিন হতে যাচ্ছে। চিন্তার কিছু নেই। জয়-পরাজয় বড় কথা না, নিজেদের সামর্থ্যের সেরা ক্রিকেট খেলাটা, মেলে ধরার চেষ্টা করাটাই গুরুত্বপূর্ণ।