টেস্ট ক্রিকেটে বিশ্ব শাসন করবে ভারত: শেবাগ
টেস্টে ভারতের বিপক্ষে প্রতিপক্ষের ৪০০ রানের লক্ষ্যও যথেষ্ট হবে না বলে মনে করছেন সাবেক ভারতীয় ওপেনার বীরেন্দর শেবাগ। তিনি মনে করেন, ভারতীয় দলে বর্তমানে এমন দুই বিস্ফোরক ব্যাটসম্যান আছেন, যাঁদের সামনে ৪০০ রান যথেষ্ট নয়। তাঁদের হাত ধরে ভারত টেস্ট ক্রিকেট শাসন করবে বলে দাবি শেবাগের।
স্পোর্টস ১৮-এর ‘হোম অব হিরোস’ অনুষ্ঠানে শেবাগ সেই দুই ব্যাটসম্যান ঋষভ পন্ত ও পৃথ্বী শ–র প্রশংসা করেন। তাঁর দাবি, দুই তরুণের হাত ধরে টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ জিতবে ভারত, ‘প্রতিপক্ষকে ভাবতে হবে ৪০০ রান যথেষ্ট কি না, যেখানে আমাদের দলে আছে শ(পৃথ্বী) এবং পন্ত। শ ও পন্ত ভারতীয় দলকে টেস্ট ক্রিকেটে রাজত্ব করতে ও বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ জিততে সাহায্য করতে পারে।’
ঋষভ ও পৃথ্বী দুজনই টেস্ট ক্রিকেটে অভিষেকে নিজেদের যোগ্যতার প্রমাণ দেন। দুজনের টেস্ট ক্যারিয়ারে দুর্দান্ত সূচনা ছিল। কিন্তু এর পর থেকে আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে খেই হারিয়ে ফেলেন দুজন। পন্ত ফিরে আসেন নিজের সামর্থ্যের প্রমাণ দিয়ে। টেস্ট দলে এখন তাঁর জায়গা মোটামুটি পোক্ত। পৃথ্বী শ এখন টেস্ট দলের বাইরে থাকলেও ঘরোয়া টুর্নামেন্টে ভালো করে দলে ফেরার লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন।
২০১৮ সালে অভিষিক্ত পৃথ্বী দীর্ঘ ৪ বছরে টেস্ট খেলেছেন মাত্র ৫টি। অথচ অভিষেক ম্যাচটি কী দুর্দান্তই না ছিল এই ডানহাতি ব্যাটসম্যানের। রাজকোটে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে প্রথম ইনিংসে ১৩৪ রান করে ম্যাচসেরা হয়ে অভিষেক স্মরণীয় করে রাখেন তিনি। পরের ম্যাচেও করেন অর্ধশতক। এরপরও নিজেকে সেভাবে প্রমাণ করতে পারেননি। ২০২০ সালে খেলা সর্বশেষ টেস্টসহ ৫ ম্যাচে ৯ ইনিংসে এক শতক ও দুই অর্ধশতকে ৩৩৯ রান করেছেন। ৮৬.০৪ স্ট্রাইক রেটে ব্যাটিং গড় অবশ্য চোখে পড়ার মতো ৪২.৩৭।
শেবাগ কিন্তু পৃথ্বী শ–কে নিয়ে আশাবাদী, ‘সে (পৃথ্বী শ) এমন একজন খেলোয়াড়, যে টেস্ট ক্রিকেটে উত্তেজনা ফিরিয়ে আনতে পারে।’
ক্রিকেটের দীর্ঘতম সংস্করণে বিপজ্জনক ঋষভ পন্ত। মাত্র ১৯ বছর বয়সে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক হয় এই তরুণ উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যানের। ক্যারিয়ারে অল্প সময়ের মধ্যে উত্থান ও পতন দেখা হয়ে গেছে তাঁর। লাল বলের ক্রিকেটে স্বপ্নের মতো অভিষেক হয় তাঁর। ২০১৮ সালে ইংল্যান্ড সফরে দলে ডাক পান পন্ত। দীনেশ কার্তিকের জায়গায় সুযোগ পান ঋষভ। কিন্তু তেমন কিছু করতে না পারলেও নিজের প্রতিভার জানান দিতে খুব বেশি সময় নেননি।
ক্যারিয়ারের তৃতীয় টেস্টে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে শতকে নিজেকে চেনান এই ব্যাটসম্যান। এরপর ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে টানা দুই ম্যাচে খেলেন ৯২ রানের দুটি ইনিংস। পরের সিরিজে অস্ট্রেলিয়া সফরে হাঁকান শতক। এরপরেই পাল্টে যায় চিত্র। ২০১৯–এর শেষের দিকে কমে যায় পন্তের ব্যাটিংয়ের ধার। ক্যারিয়ারের শুরুতে ধোনির বিকল্প তকমা পাওয়া পন্ত জায়গা হারিয়ে ফেলেন একাদশে। পরে কঠিন পরিশ্রম আর একাগ্রতায় নিজেকে বদলে ২০২০ সালের শেষের দিকে আবার সুযোগ পান দলে। এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি এই বাঁহাতি ব্যাটসম্যানের। ভারতের হয়ে ৩০ টেস্টে ৪০.৮৫ গড়ে চার শতক ও নয়টি অর্ধশতকে ১৯২০ রান করেন পন্ত।
ভারতীয় দলের ব্যাটিং কোচ বিক্রম রাঠোরও পন্তের প্রশংসায় বলেছেন, ‘হঠাৎ করেই যেন পরিণত হয়ে উঠেছে ঋষভ। সে (ঋষভ) জানে ভারতীয় দলের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ক্রিকেটার সে।’ পন্ত টেস্টের মতো ততটা ঈর্ষণীয় সফলতা পাননি সীমিত ওভারে। ২৪ ওয়ানডেতে ৩২.৫০ গড়ে ৫ অর্ধশতকে ৭১৫ রান করেছেন। টি-টোয়েন্টিতে ৪৩ ম্যাচে ১২৫.৭৮ স্ট্রাইক রেটে করেছেন ৬৮৫ রান।
পন্ত ব্যাটিং পজিশন পরিবর্তন করলে সীমিত ওভারে আরও ভালো খেলবেন বলে মনে করেন শেবাগ, ‘পরিস্থিতি বা প্রতিপক্ষ যে–ই হোক, দ্রুতগতিতে রান করাই থাকে আমাদের লক্ষ্য। চার বা পাঁচে নেমে পরিস্থিতি অনুযায়ী নিজের দায়িত্ব পালন করতে হয়। সে (পন্ত) যদি ওপেনিংয়ে খেলতে পারে, তবে সে আরও বেশি সফল হবে।’