ডমিঙ্গোর চাওয়ায় ‘উদ্বোধনে’ নেমেই মিঠুনের শতক

ইনিংসের উদ্বোধনে নেমেই শতক পেয়ে গেছেন মিঠুনছবি: বিসিবি

বাংলাদেশের টেস্ট দলে ব্যাটিংয়ের উদ্বোধন নিয়ে সমস্যাটা নতুন নয়। চোটের কারণে তামিম ইকবাল দলে নেই। সাদমান ইসলাম ও সাইফ হাসানরা ধারাবাহিক নন। তাই প্রধান কোচ রাসেল ডমিঙ্গো বাধ্য হয়ে টেস্টের উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান তৈরিতে নেমে পড়েছেন।

গত জুলাই মাসে জিম্বাবুয়ে সফর থেকে বাদ পড়া মোহাম্মদ মিঠুনকে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান হিসেবে খেলার পরামর্শ দেন বাংলাদেশ দলের দক্ষিণ আফ্রিকান কোচ। বিষয়টি প্রথম আলোকে ডমিঙ্গো নিজেই নিশ্চিত করেছেন।

এ ব্যাপারে এবারের বিসিএলে মিঠুনের দল ওয়ালটন মধ্যাঞ্চলের কোচ জাফরুল এহসানের সঙ্গেও কথা বলেছেন ডমিঙ্গো। বিসিএল শুরুর আগে মিঠুনের প্রস্তুতিও ছিল টেস্ট উদ্বোধনী ব্যাটসম্যানসুলভ। সেই মিঠুনই প্রথমবারের মতো প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে ইনিংসের সূচনা করতে নেমে করলেন শতক।

বাংলাদেশ কোচ ডমিঙ্গো টেস্ট দলে উদ্বোধনী ব্যাটসম্যানের খোঁজে মিঠুনকে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে ইনিংস উদ্বোধন করার পরামর্শ দেন
ছবি: প্রথম আলো

আজ চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে বিসিবি উত্তরাঞ্চলের বিপক্ষে ১৪৫ বলে শতক স্পর্শ করেন মিঠুন।

৪৩ রানে অপরাজিত থেকে আজ দিন শুরু করেছিলেন এই ডানহাতি ব্যাটসম্যান। অর্ধশতক পূর্ণ হয়ে যায় দিনের শুরুতেই। এরপর প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে ক্যারিয়ারের ১৩তম শতক স্পর্শ করতেও বেশি সময় নেননি তিনি।

মিঠুনের ওপেনিং সঙ্গী মিজানুর রহমানও খেলেছেন দুর্দান্ত এক ইনিংস। ১৬৩ বল খেলে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে নিজের ১২তম শতক পূর্ণ করেন তিনি। এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত দুজনই অপরাজিত আছেন।

আজ মাঠে বসে মধ্যাঞ্চল ও উত্তরাঞ্চলের ম্যাচটি দেখেছেন প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদীন। মিঠুনের ব্যাটিং দেখে তাঁকে সন্তুষ্টই মনে হলো।

ইনিংসের উদ্বোধনে মিঠুনের সঙ্গী মিজানুরও শতক হাঁকিয়েছেন
ছবি: বিসিবি

চট্টগ্রাম থেকে মুঠোফোনে মিনহাজুল বলেছেন, ‘মিঠুন, মিজান দুজনই আজ ভালো ব্যাটিং করেছে। উইকেটে ঘাস আছে অনেক। কিন্তু ওরা (বিসিবি উত্তরাঞ্চলের বোলাররা) এলোমেলো বোলিং করেছে অনেক। সেটার সুবিধা নিয়েছে। ইনিংস উদ্বোধনে নেমে ভালো করেছে দেখে ভালো লাগছে। কোচ চেয়েছিল সে যেন ইনিংস উদ্বোধন করে। তবে একটাই তো ইনিংস। আরও দেখতে হবে।’

গত জুলাই মাসের জিম্বাবুয়ে সফরে সর্বশেষ বাংলাদেশের জার্সিতে দেখা গেছে মিঠুনকে। সেখানে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজের তিন ইনিংসেই ভালো কিছু করার দারুণ সুযোগ হাতছাড়া করেন তিনি। দলের বিপদে ব্যাটিংয়ে নেমেছেন প্রতি ম্যাচেই। কিন্তু সেটি কাজে লাগিয়ে দলে নিজের জায়গা পাকা করতে পারেননি।

গত জুলাইয়ে জিম্বাবুয়ে সফরে সর্বশেষ বার বাংলাদেশ দলের জার্সিতে খেলেছেন মিঠুন
প্রথম আলো ফাইল ছবি

এরপর বাংলাদেশ দল ওয়ানডে খেলেনি। টানা টি-টোয়েন্টি ও টেস্ট খেলে আসছে, যে দুই সংস্করণে মিঠুনের রেকর্ড খুব একটা ভালো নয়। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের দলেও তাঁকে রাখা হয়নি।

তবে মিঠুনের জন্য সবচেয়ে বড় ধাক্কাটা আসে যখন তাঁকে কেন্দ্রীয় চুক্তি থেকে বাদ দেওয়া হয়। ওদিকে ঘরোয়া ক্রিকেটেও খুব ভালো খেলছিলেন না এই ৩০ বছর বয়সী ব্যাটসম্যান। এবারের জাতীয় ক্রিকেট লিগে এর আগে ছয় ম্যাচে ১২ ইনিংস খেলেছেন, কিন্তু অর্ধশতকের দেখাও কখনো পাননি। মিঠুনের দল খুলনা বিভাগও ভুগেছে বাজে ভাবে। দীর্ঘদিন পর জাতীয় লিগে প্রথম স্তর থেকে দ্বিতীয় স্তরে অবনবম হয়েছে দলটির।

মনে হচ্ছিল মিঠুন বুঝি হারিয়েই যাবেন। কিন্তু বিসিএল দিয়ে ঘুরে দাঁড়ানোর আভাসটা ভালোভাবেই দিলেন তিনি। সেটাও উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান হিসেবে। জাতীয় দলে যে জায়গার ব্যাটসম্যান খুঁজে পেতে যে হিমশিম খেতে হচ্ছে দলের ব্যবস্থাপনায় জড়িত কোচ-নির্বাচকদের!