ডি কক ঝড়ে সিরিজে সমতা দক্ষিণ আফ্রিকার
দক্ষিণ আফ্রিকার ড্রেসিংরুমে তখন থমথমে অবস্থা। থাকবেই না কেন! রিকি পন্টিংয়ের অস্ট্রেলিয়া ৫০ ওভারে ৪ উইকেট হারিয়ে রান করেছে ৪৩৪! এমন সময় জ্যাক ক্যালিস এসে বললেন, ‘মনে হয় ওরা ২০ রান কম করেছে।’ কথাটা শুনে দক্ষিণ আফ্রিকা দলের ক্রিকেটাররা কিছুক্ষণ একজন আরেকজনের দিকে তাকিয়ে রইলেন। এরপর একসঙ্গে অট্টহাসি। দক্ষিণ আফ্রিকা শেষ পর্যন্ত সেই রান তাড়া করে জিতেছে ১ বল বাকি থাকতে।
সেই ঐতিহাসিক ম্যাচের ভেন্যু ছিল জোহানেসবার্গের ওয়ান্ডারার্স স্টেডিয়াম। ছোট্ট বাউন্ডারির এই মাঠে কোনো এক অদ্ভুত কারণে বল খুব দ্রুত বাউন্ডারির সীমানা ছাড়িয়ে যায়। ওয়ানডে ম্যাচে সে কারণেই দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাটিং করতে স্বচ্ছন্দ্ বোধ করেন অধিনায়কেরা। পরিসংখ্যানও (আগে ব্যাট করে জয় ২১ ম্যাচে, পরে ব্যাট করে ২৯ ম্যাচে) বলে পরে ব্যাট করাই শ্রেয়।
সেই ওয়ান্ডারার্সেই আজ বাংলাদেশে টসে জিতে আগে ব্যাটিং করেছে। রান করেছে ৯ উইকেটে ১৯৪। রান তাড়ার স্বর্গ হিসেবে পরিচিত ওয়ান্ডারার্সে এরপরও জেতার আশা করাটা একটু বাড়াবাড়িই। কিন্তু তবু মনের কোণে ক্ষীণ আশা—প্রথম দিকেই যদি একাধিক উইকেট তুলে নেওয়া যায়, তাহলে হয়তো চাপে ভেঙেও পড়তে পারে দক্ষিণ আফ্রিকা।
কিন্তু কুইন্টন ডি ককের বেধড়ক পিটুনিতে সে সম্ভাবনাও হাওয়ায় উড়ে যায়। যে ইনিংসের কল্যাণে দক্ষিণ আফ্রিকা হেসেখেলে ৭ উইকেটে জিতে যায়। প্রথম ম্যাচে পরাজয়ের ধাক্কা সামলে তিন ম্যাচ ওয়ানডে সিরিজে ঘুরে দাঁড়িয়েছে প্রোটিয়ারা। নির্ধারক এখন ২৩ মার্চ সেঞ্চুরিয়নের তৃতীয় ওয়ানডে।
দক্ষিণ আফ্রিকার ফাস্ট বোলারদের মতো নতুন বলে সেই প্রত্যাশিত সুবিধাটা নিতে পারেনি বাংলাদেশ। নিয়েছেন অসুস্থতা কাটিয়ে দলে ফেরা ডি কক। এই প্রোটিয়া উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান আইপিএলের কারণে বাংলাদেশের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজে খেলবেন না। ওয়ানডে সিরিজ খেলেই ভারতের বিমান ধরবেন। আইপিএলে খেলতে যাওয়ার আগে বাংলাদেশি বোলারদের বিপক্ষে যেন প্রস্তুতি ম্যাচ খেললেন তিনি। উদ্বোধনী জুটিতে ৮৬ রান উঠে যাওয়ার পর ডি ককের উদ্বোধনী সঙ্গী ইয়ানেমান মালানকে ২৬ রানে বোল্ড করেও কোনো পার্থক্য গড়তে পারেননি মেহেদী হাসান মিরাজ।
৪১ বলে ৬২ রান, ৯টি চার ও ২টি ছক্কা—ডি কক একাই মুছে দিয়েছেন ম্যাচের অবশিষ্ট উত্তেজনা। সাকিব আল হাসানের বলে বাউন্ডারি লাইনে আফিফের জাগলিং ক্যাচে ডি ককের ইনিংস থামার আগে দক্ষিণ আফ্রিকার জয় নিশ্চিত হয়ে যায়। ১৫.২ ওভারেই যে দক্ষিণ আফ্রিকা করে ফেলেছে ৯৪ রানে!
এরপর বাকি ছিল শুধুই আনুষ্ঠানিকতা। কোনো রান রেটের তাড়া নেই, বাংলাদেশি কোনো বোলারের আগুনে বোলিং নেই—হেসেখেলে জয় যেন সময়ের ব্যাপার মাত্র। শেষ পর্যন্ত হয়েছেও তাই। অধিনায়ক টেম্বা বাভুমার সঙ্গে কাইল ভেরেইনার ৮২ রান যোগ করে অনেকটা পথ পাড়ি দেওয়া হয়ে যায় প্রোটিয়াদের। আফিফ হোসেনের বলে বাভুমা ৩৭ রান করে আউট হলেও খুব একটা সমস্যা হয়নি। ভেরেইনার অপরাজিত ৫৮ রানে বাকি পথ নিশ্চিন্তে পাড়ি দেয় দক্ষিণ আফ্রিকা।