দুঃস্বপ্নের আইপিএলের পর তাঁকে বলা হয়েছিল বাবার মতো বেবি ট্যাক্সি চালাতে
২০২০ সালের ডিসেম্বরে ভারতের জার্সিতে টেস্টে অভিষেক হয়েছে তাঁর, এরপর থেকে ভারতের পেস বোলিংয়ে বড় অস্ত্রই হয়ে উঠেছেন মোহাম্মদ সিরাজ। তবে জাতীয় দলে পথচলা অনেকটা মসৃণ হলেও জাতীয় দলে ঢোকার আগে অনেক কিছুই সামলাতে হয়েছে ২৭ বছর বয়সী পেসারকে।
দারিদ্র্য ছিল, সেটি সামলেছেন। ২২ গজে ঝড় না তুললে যে এ পর্যন্ত আসতে পারতেন না, সে তো বোঝাই যায়। তবে এসবের পাশাপাশি সিরাজের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে এসেছিল মানুষের কটু কথাও।
এক আইপিএলের অভিজ্ঞতা থেকেই সিরাজ জানালেন, সেবার আইপিএলটা ভালো কাটেনি বলে মানুষ তাঁর বেবি ট্যাক্সিচালক বাবার পেশা টেনে এনে খোঁচা মেরেছিল তাঁকে। বলেছিল, ক্রিকেট ছেড়ে বাবার সঙ্গে বেবি ট্যাক্সি চালাতে।
২০১৯ আইপিএলের কথা সেটি। তখন বিরাট কোহলি, এবি ডি ভিলিয়ার্সদের সঙ্গে রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুতে খেলতেন সিরাজ। সে আসরটি হয়ে উঠেছিল তাঁর কাছে দুর্বিষহ। ওভারপ্রতি গড়ে প্রায় ১০ করে রান দিয়ে ৯ ম্যাচে পেয়েছিলেন ৭ উইকেট।
এ জন্য দর্শকদের থেকে দুয়ো শুনতে হয়েছে তাঁকে। কলকাতা নাইট রাইডার্সের বিপক্ষে এক ম্যাচে ২.২ ওভার বল করে ৩৬ রান দিয়েছিলেন। পরপর দুটো ‘বিমার’ মারায় পুরো ওভারও শেষ করতে পারেননি তিনি।
সে দিনগুলোর কথা স্মরণ করেছেন সিরাজ, ‘কেকেআরের (কলকাতা নাইট রাইডার্স) বিপক্ষে যখন দুটি বিমার করলাম, মানুষ বলেছিল ক্রিকেট ছেড়ে বাবার সঙ্গে অটো চালাতে। এ ধরনের আরও তির্যক মন্তব্য শুনতে হয়েছে। আসলে মানুষ তো আর দেখে না কত ত্যাগ স্বীকার করে আমি এখানে এসেছি।’ ২০২০ সালের নভেম্বরে বাবাকে হারিয়েছেন সিরাজ।
খারাপ সময় কাটিয়ে ওঠার জন্য মহেন্দ্র সিং ধোনির সহযোগিতা পেয়েছিলেন সিরাজ। ধোনির পরামর্শ তাঁর জীবনে কেমন প্রভাব ফেলেছে, সেটি জানিয়েছেন সিরাজ, ‘মনে আছে, যখন আমি প্রথম দলে ডাক পেলাম, মাহি ভাই (ধোনি) বলেছিলেন সবার কথা কানে নেওয়ার প্রয়োজন নেই। বলেছিলেন, “আজ তুমি ভালো করলে সবাই তোমার প্রশংসা করবে। খারাপ করলে সে মানুষেরাই তোমার সমালোচনা করবে। সুতরাং এসবকে গুরুত্ব দেওয়ার কিছু নেই।”’
ধোনির কথাই জীবনে ফলেছে বলে জানিয়েছেন সিরাজ, ‘আসলেই তা-ই হয়েছে। আমি ভালো বল করলে সে সমালোচকেরা এসেই বলেছেন, “তুমি দারুণ বোলার, ভাই।” সুতরাং আমি জানি, আমার কারও মতামতের প্রয়োজন নেই। আমি সেই সিরাজই আছি, আগে যা ছিলাম।’