দুইয়ে উঠে এল আবাহনী

ম্যাচের তখন মাঝপথ, তবে আবাহনী জয়ের পথে অনেকটা এগিয়ে গেছে তখনই। দুহাত প্রসারিত করে নাজমুল অপুর উচ্ছ্বাস ভিক্টোরিয়াকে অল্পতে বেঁধে ফেলার, পেছনে আল আমিন, লিটন, মুস্তাফিজ, নাসির, শুভাশিসরা l প্রথম আলো
ম্যাচের তখন মাঝপথ, তবে আবাহনী জয়ের পথে অনেকটা এগিয়ে গেছে তখনই। দুহাত প্রসারিত করে নাজমুল অপুর উচ্ছ্বাস ভিক্টোরিয়াকে অল্পতে বেঁধে ফেলার, পেছনে আল আমিন, লিটন, মুস্তাফিজ, নাসির, শুভাশিসরা l প্রথম আলো

একই সঙ্গে ব্যাটিংয়ে নেমেছিলেন দুজন। কিন্তু আবাহনীর দুই ওপেনার ব্যাটিং করছিলেন যেন ভিন্ন দুটি উইকেটে!
মিরপুরের উইকেট খানিকটা স্যাঁতসেঁতে ছিল। তবে লিটন দাস শুরু থেকেই দারুণ সাবলীল। চোখধাঁধানো স্ট্রেট ড্রাইভ খেললেন, দারুণ সব ফ্লিক। আরেক পাশে আবদুল মজিদ শুরু থেকেই ধুঁকছিলেন। না হয় টাইমিং, না প্লেসমেন্ট। সেই প্রথম বল থেকে ধুঁকলেন শেষ বল পর্যন্ত। শেষ বল মানে প্রায় দেড় শ বল! ৪৭তম ওভারে দলের জয় সঙ্গে নিয়ে যখন ফিরছেন, মজিদের নামের পাশে ১৪৮ বলে অপরাজিত ৫০!
মজিদের সঙ্গী ওপেনার লিটন করেছেন দৃষ্টিনন্দন এক ফিফটি। পরে বলের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে রান করেছেন অধিনায়ক নাসির হোসেন। মজিদের অমন প্রস্তর যুগের ব্যাটিংয়ের পরও তাই অনায়াসে জিতেছে আবাহনী। ভিক্টোরিয়া লক্ষ্য দিতে পেরেছিল মাত্র ১৬০। ৮ উইকেটের জয়ে আবাহনী উঠে এসেছে পয়েন্ট তালিকার দুইয়ে। ৮ ম্যাচে আবাহনীর সমান ১২ পয়েন্ট নিয়েও রানরেটে তিনে কলাবাগান ক্রিকেট একাডেমি। এবারের লিগে প্রথম নেমেই অধিনায়ক এনামুল হকের সেঞ্চুরিতে কলাবাগান একাডেমি উড়িয়ে দিয়েছে তলানির দল পারটেক্সকে। আরেক ম্যাচে অভিষেক মিত্রের দুর্দান্ত অপরাজিত সেঞ্চুরিতে কলাবাগান ক্রীড়াচক্রকে ৪ উইকেটে হারিয়ে সুপার সিক্সের আশা বাঁচিয়ে রেখেছে ব্রাদার্স। কাল এনামুল-অভিষেকের সেঞ্চুরির পর লিগে এখন দেশের ক্রিকেটারদের সেঞ্চুরি ৩টি (আরেকটি রাজিন সালেহর), বিদেশিদের সেঞ্চুরি ৫টি।
মিরপুরে ক্রিকেট নয়, খানিকটা উত্তেজনা ছড়িয়েছে আম্পায়ারিং নিয়ে ভিক্টোরিয়ার আপত্তি। সপ্তম উইকেট পড়ার পর হঠাৎই ম্যাচ না খেলার হুমকি দেয় ভিক্টোরিয়ার ম্যানেজমেন্ট। খেলা বন্ধও থাকে বেশ কিছুক্ষণ। ম্যাচ রেফারি রকিবুল হাসানের হস্তক্ষেপে আবার শুরু হয় ম্যাচ। মজার ব্যাপার হলো, ভিক্টোরিয়ার আপত্তি ওই সপ্তম উইকেট নিয়ে ছিল না, ছিল আরও আগের তিনটি আউট নিয়ে। এর মধ্যে সালমানকে দেওয়া আউটটি নিয়ে সংশয় ছিল যথেষ্টই। আগের দিন লিজেন্ডস অব রূপগঞ্জের ম্যাচে যে দুই আম্পায়ার নিয়ে আলোচনার ঝড়, সেই জাহাঙ্গীর আলম কালও ছিলেন আম্পায়ার।
তবে ব্যর্থতার দায়টা ভিক্টোরিয়ার ব্যাটসম্যানদের বেশি। বাঁহাতি স্পিনার নাজমুল অপু (৪/১৪) ও বাঁহাতি পেসার মুস্তাফিজের (২/৩৩) জোড়া আক্রমণের জবাব ছিল না তাদের। ইমরুল কায়েসের গুরুত্বপূর্ণ উইকেটটি নিয়েছেন, দারুণ বোলিংও করেছেন আবাহনী অধিনায়ক নাসির (১০-২-২৪-১)। ৯৬ রানে ৮ উইকেট হারানো দলকে প্রায় একা দেড় শ পার করান সোহরাওয়ার্দী শুভ (৪৫)। রান তাড়ায় লিটন-মজিদের ৮৬ রানের জুটিতেই নিশ্চিত হয় আবাহনীর অনায়াস জয়। ৭ চারে ৫৭ বলে পঞ্চাশ ছুঁয়েছেন লিটন, ২ চারে ১৪৮ বলে পঞ্চাশ মজিদ। ৩ চার ও ২ ছয়ে ২৭ বলে অপরাজিত ৩০ নাসির। এবারের লিগে প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে কাল চার শ ছুঁয়েছেন লিটন, ৮ ম্যাচে ৫ ফিফটিতে রান ৪২০।
জিম্বাবুয়ে সিরিজে দুবার সুবাস পেয়েও সেঞ্চুরি করতে না-পারা এনামুল কাল বিকেএসপিতে তিনে নেমে ১০৪ বলে ১১৩ করেছেন ১১ চার ও ৭ ছক্কায়! ২৬ রানের মধ্যে দুই ওপেনারকে হারায় কলাবাগান একাডেমি। তৃতীয় উইকেটে মাহমুদুল হাসানকে (৭০) নিয়ে ১৮৪ বলে ১৯৩ রানের জুটি গড়েন অধিনায়ক এনামুল। পরে ইংলিশ উইকেটকিপার ব্যাটসম্যান ফিল মাস্টার্ডের ৪২ বলে ৫৯ এবং সাব্বির রহমান (২২ বলে ৩৩*) ও নাজমুল হোসেনের (৮ বলে ১৭*) দুটি ছোট ঝোড়ো ইনিংসে একাডেমি তোলে ৩৩৪ রান। জবাবে পরাজয়টাকে ভদ্রস্থও করতে পারেনি পারটেক্স, ১৩৭ রানে গুটিয়ে হেরেছে ১৯৭ রানে।
ফতুল্লায় খণ্ডকালীন স্পিনার নাজমুস সাদাতের স্পিনে ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারেই ২ উইকেট হারায় কলাবাগান ক্রীড়াচক্র। ইংলিশ ব্যাটসম্যান মার্ক পেটিনি (৯৮ বলে ৫৪) ও ওপেনার নাসিরউদ্দিন ফারুক (৮৭ বলে ৪১) উদ্ধার করেন দলকে। পরে ফরিদউদ্দিন মাসুদের ৫১ বলে ৪৫ রানে কলাবাগান তুলতে পারে ১৯২। অভিষেক ও নাজিমউদ্দিনের (৫০) ব্যাটে সহজ জয়ের পথেই ছিল ব্রাদার্স। দ্বিতীয় উইকেটে দুজনের ৯১ রানের জুটি ভাঙার পর একের পর এক উইকেট হারাতে থাকে ব্রাদার্স। তবে একপাশে অবিচল থেকে দলকে জিতিয়ে ফেরেন ওপেনার অভিষেক (১৩৭ বলে ১০১*)।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
আবাহনী-ভিক্টোরিয়া
ভিক্টোরিয়া: ৪৮.২ ওভারে ১৫৯ (সোহরাওয়ার্দী ৪৫, ইমরুল ৩১, আবু হায়দার ২০; নাজমুল অপু ৪/১৪, সাকলাইন ২/১৬, মুস্তাফিজ ২/৩৩, নাসির ১/২৪, শুভাশিস ১/৩৮)। আবাহনী: ৪৬.২ ওভারে ১৬৫/২ (লিটন ৫৫, মজিদ ৫০*, নাসির ৩০*, রকিবুল ২০, এনামুল ১/২৫, মার্শাল ১/২২)।
ফল: আবাহনী ৮ উইকেটে জয়ী।
ম্যান অব দ্য ম্যাচ: নাজমুল অপু।
কলাবাগান একাডেমি-পারটেক্স
কলাবাগান ক্রিকেট একাডেমি: ৫০ ওভারে ৩৩৪/৫ (এনামুল ১১৩, মাহমুদুল ৭০, মাস্টার্ড ৫৯*, সাব্বির ৩৩; আজিম ৩/৫৫, আব্বাস ২/৫৪)। পারটেক্স: ৩৩.৫ ওভারে ১৩৭ (শফিউল ৪১, রবিউল ৩৫, বিশ্বনাথ ৩/১৬, শরিফ ২/৩৭, নাজমুল ১/৩, মাহমুদুল ১/১১, মেহেদি ১/১৩, ইমতিয়াজ ১/২০, নাবিল ১/২৪)।
ফল: কলাবাগান একাডেমি ১৯৭ রানে জয়ী।
ম্যান অব দ্য ম্যাচ: এনামুল হক।
কলাবাগান ক্রীড়া চক্র-ব্রাদার্স
কলাবাগান ক্রীড়া চক্র: ৪৯ ওভারে ১৯২ (পেটিননি ৫৪, ফরিদউদ্দিন ৪৫, নাসিরউদ্দিন ৪১; সাদাত ৩/১৬, আসিফ ৩/৩৬, ডেনলি ১/১৯, সাদিকুর ১/৫৬)। ব্রাদার্স ইউনিয়ন: ৪৬.৩ ওভারে ১৯৫/৬ (অভিষেক ১০১*, নাজিমউদ্দিন ৫০, রকিবুল ২/২৮, শাহাদাত ২/৫০, নাসুম ১/৩২, রাজ্জাক ১/৪০)।
ফল: ব্রাদার্স ৪ উইকেটে জয়ী।
ম্যান অব দ্য ম্যাচ: অভিষেক মিত্র।