নামিবিয়ার বিপক্ষে গতকাল টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ম্যাচ দিয়ে ভারতীয় ক্রিকেটে শাস্ত্রী-কোহলি জুটির অধ্যায় শেষ হলো। বিশ্বকাপের আগেই রবি শাস্ত্রী ঘোষণা দিয়েছিলেন, এই বিশ্বকাপই হচ্ছে কোচ হিসেবে তাঁর শেষ টুর্নামেন্ট। কোহলিও জানিয়ে দিয়েছিলেন, এই বিশ্বকাপ শেষে টি-টোয়েন্টি সংস্করণের অধিনায়কত্ব থেকে সরে যাবেন।
টি-টোয়েন্টির পরবর্তী অধিনায়ক কে হচ্ছেন, সেটা না জানালেও ইতিমধ্যেই ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড (বিসিসিআই) নতুন কোচ হিসেবে রাহুল দ্রাবিড়ের নাম ঘোষণা করেছে।
শাস্ত্রী ভারতীয় দলের দায়িত্ব নিয়েছিলেন ২০১৭ সালের মাঝামাঝিতে। তাঁর অধীনে ভারত কোনো আইসিসি ট্রফি না পেলেও দেশ ও দেশের বাইরে সব সংস্করণেই আধিপত্য বিস্তার করেছে। ভারতের বাইরে যত দেশে তারা খেলেছে, সব দেশেই সিরিজ জয় করেছে। পাশাপাশি প্রথমবারের মতো আয়োজিত হওয়া টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপে রানার্সআপ হয়েছে ভারত। তাই কাজ করার জন্য দ্রাবিড় ভালো একটা দল পাবেন বলেই মনে করেন শাস্ত্রী।
স্টার স্পোর্টসের সঙ্গে জাতীয় দলে নিজের কোচিং ক্যারিয়ার এবং নতুন কোচ রাহুল দ্রাবিড়কে নিয়ে কথা বলেছেন রবি শাস্ত্রী।
দায়িত্ব নেওয়ার সময় দল যে অবস্থায় ছিল, তার চেয়ে ভালো অবস্থানে রেখে বিদায় নিতে পারছেন বলে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেন সাবেক কোচ, ‘আমি দলটির দায়িত্ব নিয়ে একটা পার্থক্য গড়ে দিতে চেয়েছিলাম। আমার মনে হয়, আমি সেটা করতে পেরেছি। অনেক সময় জীবনে আপনি কী কী অর্জন করেছেন, সেটার চেয়ে জীবনে কোন কোন পরিস্থিতি পার করে এসেছেন, সেটাই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়ায়। আমার দলের খেলোয়াড়েরা গত পাঁচ বছরে যে কঠিন পরিস্থিতিগুলো পার করেছে, যেভাবে তারা পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে সব সংস্করণের ম্যাচ খেলেছে এবং জয় ছিনিয়ে এনেছে, ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম সেরা দল হিসেবেই তারা এই অর্জনগুলো নিজেদের করে নিয়েছে। এ নিয়ে আমার মনে কোনো সন্দেহ নেই—এই বিশ্বকাপে যাই হোক না কেন।’
দেশের বাইরে ভারতের টেস্ট সিরিজ জয়গুলো নিয়েই উচ্ছ্বসিত শাস্ত্রী, ‘সব সংস্করণ মিলিয়ে আমার অনেক স্মরণীয় মুহূর্ত আছে, কিন্তু ওয়েস্ট ইন্ডিজ, শ্রীলঙ্কা ও অস্ট্রেলিয়ায় গিয়ে টেস্ট সিরিজ জেতা, পাশাপাশি ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ২-১ এ এগিয়ে থাকা (করোনা সংক্রমণের কারণে সিরিজের বাকি একটি টেস্ট পিছিয়ে দেওয়া হয়), এগুলোকেই আমি এগিয়ে রাখব।’
কিন্তু সাদা বলের অর্জনগুলোকেও ছোট করে দেখছেন না, ‘সাদা বলের ক্রিকেটে, সেটা টি-টোয়েন্টি হোক বা ওয়ানডে, প্রতিপক্ষের ঘরে আমরা তাদের হারিয়েছি। এটা দলের সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টার ফলেই সম্ভব হয়েছে। শুধু ঘরের মাটিতেই আমরা জিততে পারি বলে আমাদের যে একটা দুর্নাম ছিল, এই দল তা ভুল প্রমাণ করেছে।’
শাস্ত্রী বিশ্বাস করেন, দলকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাওয়ার জন্য দ্রাবিড়ের কাছে প্রয়োজনীয় সব উপকরণই আছে, ‘রাহুল একটা অসাধারণ দল পেতে যাচ্ছে। তার মতো অভিজ্ঞ একজনের অধীনে এই দল অবশ্যই আরও এক ধাপ এগিয়ে যাবে।’
কারণ? শাস্ত্রী যুক্তি দেখালেন, ‘দেখুন, দলে এমন অনেক খেলোয়াড় আছে, যারা অন্তত আরও চার থেকে পাঁচ বছর খেলতে পারবে, যেটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ভারত এমন কোন দল নয়, যেটা রাতারাতি পালাবদলের মধ্য দিয়ে যেতে পারবে। বিরাট (কোহলি) এখনো আছে, অধিনায়ক হিসেবে সে অসাধারণ দায়িত্ব পালন করেছে। সে গত পাঁচ বছরে টেস্ট ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় এবং সেরা প্রতিনিধিদের মধ্যে অন্যতম। সে যেভাবে তার দলকে খেলাতে চায় এবং দলের বাকিরা যেভাবে সব সময় তাকে ঘিরে রাখে, এ জন্য তাকে অবশ্যই কৃতিত্ব দিতে হবে।’
২০১২ সালের পর এই প্রথমবারের মতো ভারত কোনো আইসিসির প্রতিযোগিতায় নকআউট পর্বে খেলতে পারল না। শাস্ত্রী মনে করেন, অতিরিক্ত ম্যাচ খেলার ফলেই ঘটেছে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা, ‘আমার মনে হয়, এই ফলাফলের পেছনের প্রধান কারণ হলো বিশ্রাম। মানসিকভাবে আমি প্রচণ্ড ক্লান্ত, কিন্তু আমার বয়স অনুযায়ী এটা ঠিক আছে। কিন্তু ছেলেরা শারীরিক ও মানসিক—দুই দিকেই বিপর্যস্ত। প্রায় ছয় মাস ধরে ওরা জৈব সুরক্ষাবলয়ে আছে। এ কারণে আইপিএল ও বিশ্বকাপের মধ্যে আরেকটু বেশি সময় দরকার ছিল। বড় খেলায় যখন আমাদের ওপর বাড়তি চাপ পড়ল, আমাদের যেভাবে খেলার দরকার ছিল, আমরা সেভাবে খেলতে পারিনি। দেখুন, আমরা হারতে ভয় পাই না। জেতার জন্য খেলতে গিয়ে আপনি মাঝেমধ্যে হারতেই পারেন। কিন্তু এই বিশ্বকাপে আমরা সেটা করতে পারিনি। আমাদের মধ্যে ম্যাচ জেতার চেষ্টাটাই ছিল না।’