‘নড়বড়ে নব্বইয়ে’ তামিম-সাকিবকে পেরিয়ে গেলেন মুশফিক

আউট হয়ে ফিরছেন মুশফিকছবি: শামসুল হক

দিনের প্রথম সেশনে উইকেট না হারিয়ে বাকি সময়টায় দাপট দেখানো—টেস্ট ক্রিকেটের এই অতি প্রচলিত সমীকরণটা আজ সকালে বাংলাদেশ দলের পক্ষে যায়নি। চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে প্রথম ঘণ্টায় পাকিস্তানই দাপট দেখিয়েছে। তাতে বাংলাদেশ দলের যা পাওয়ার সম্ভাবনা ছিল, সবই গেল জলে।

৪ উইকেটে ২৬৩ রান নিয়ে দিন শুরু করে বাংলাদেশ আজ সকালে দুই ঘণ্টার মধ্যে ৬৭ রানেই ৬ উইকেট হারিয়ে অলআউট হয়ে গেল ৩৩০ রানে! গতকাল সেঞ্চুরি করা লিটন দাস আজ কিছুই করতে পারেননি, পারেননি সেঞ্চুরির আশা নিয়ে দিন শুরু করা মুশফিকুর রহিমও।

আরও একবার নব্বইয়ের ঘরে আউট হয়ে গেছেন মুশফিক, তাতে একটা তেতো রেকর্ডও হলো তাঁর। টেস্টে বাংলাদেশের জার্সিতে মুশফিকের চেয়ে বেশি ‘নার্ভাস নাইনটিজে’ আউট হননি আর কোনো ব্যাটসম্যান!

ব্যাটিংয়ের সময়ে একবার ক্রিজে পড়েই যান মুশফিক
ছবি: প্রথম আলো

গতকাল সেঞ্চুরি করা লিটন দাস আজ আর ১ রান যোগ করেই আউট হয়ে যান, দিনের ১২তম বলে। অভিষিক্ত ইয়াসির আলীও টেস্ট ক্রিকেটে নিজের প্রথম ইনিংসটি স্মরণীয় করতে পারেননি। আউট হওয়ার আগে ১৯ বলে ৪ রান করেছেন তিনি।

ক্রিজে তখন একমাত্র স্বীকৃত ব্যাটসম্যান বলতে মুশফিকুর রহিম, এর পাশাপাশি মেহেদী হাসান মিরাজকে ঘিরে যা আশা ছিল। গতকাল ৮২ রান করে অপরাজিত থাকা মুশফিকের আরেকটি টেস্ট সেঞ্চুরির দিকেই তাকিয়ে ছিলেন মাঠে আসা দর্শক।

কিন্তু মুশফিকের শতকের পথে কাঁটা হয়ে দাঁড়াতে পারতেন দুই পাকিস্তানি ফাস্ট বোলার হাসান আলী ও শাহিন শাহ আফ্রিদি। বিশেষ করে প্রেসবক্স প্রান্ত থেকে হাসানের দিনের প্রথম স্পেলটি ছিল এককথায় দুর্দান্ত। এই প্রান্ত থেকে শাহিনের চেয়েও বেশি সিম মুভমেন্ট পাচ্ছিলেন তিনি।

মুশফিক ফিরছেন, পেছনে পাকিস্তানের ক্রিকেটারদের উল্লাস
ছবি: প্রথম আলো

হাসান সাধারণত স্টাম্প বরাবর বল করেন। আজ কিছু বল অপ্রত্যাশিতভাবে নিচু হয়েও যাচ্ছিল। ব্যাটসম্যানদের মনে ভয় ঢোকানোর জন্য যা ছিল যথেষ্ট। ভালো লেংথ থেকে সিম মুভমেন্টে বল ভেতরে এনে লিটন ও ইয়াসিরকে আউট করেন হাসান।

তবে হাসান ও শাহিনের আগুনে বোলিংয়ের বিপক্ষে মুশফিক ছিলেন সাবলীল। হাসানের সিম মুভমেন্ট সামলেছেন, থামিয়েছেন শাহিনের ইনসুইং। মাথা তাক করা বাউন্সার ছেড়েছেন বলে চোখ রেখে। হাসান টানা ছয় ওভারের স্পেলে রান দিয়েছিলেন মাত্র ৭, উইকেট নিয়েছেন ২টি। ততক্ষণে এক-দুই রান ও শাহিনের ফুল লেংথের বলে ব্যাটের কানায় লেগে পাওয়া একটি চারে মুশফিক পৌঁছে গেছেন ৯১ রানে।

মুশফিকের সামনে তখন দুটি হাতছানি। আর ১ রান হলে তিনি বাংলাদেশের হয়ে টেস্টে সবচেয়ে বেশি রানের রেকর্ডে ছুঁয়ে ফেলতেন তামিম ইকবালকে। আর ৯ রান হলে তো অষ্টম টেস্ট শতকই পেয়ে যেতেন!

মুশফিকের আগে লিটনও ফিরেছেন আজ দিনে তেমন কিছু করতে না পেরে
ছবি: প্রথম আলো

এদিকে হাসানের স্পেলও শেষ। এবার এক পাশ থেকে স্পিনার ও মিডিয়াম পেসাররা বোলিংয়ে এলে আরেকটি টেস্ট শতকে পৌঁছানোর পথে চ্যালেঞ্জটা কিছুটা হলেও কমে আসবে মুশফিকের।

কিন্তু মুশফিকের দুর্ভাগ্য। প্রেসবক্স প্রান্ত থেকে হাসানের জায়গায় বোলিংয়ে এসে পাকিস্তানকে কাঙ্ক্ষিত ব্রেক থ্রু এনে দেন ফাহিম আশরাফ। ভালো লেংথের বলটি ছাড়বেন নাকি খেলবেন—এ দ্বিধায় থেকেই আউট হন মুশফিক। যিনি কিনা সারা সকাল পাকিস্তান দলের দুই সেরা বোলারকে সামলেছেন দারুণ দক্ষতায়, সেই মুশফিকই ৯১ রানে খেই হারালেন ফাহিমের বলে।

নব্বইয়ের ঘরে মুশফিক এ নিয়ে আউট হলেন চতুর্থবার, যা টেস্ট ক্রিকেটে বাংলাদেশ দলের মধ্যে সবচেয়ে বেশি। সাকিব আল হাসান ও তামিম ইকবাল তিনবার নব্বইয়ের ঘরে আউট হন। সাবেক অধিনায়ক হাবিবুল বাশার দুবার নব্বইয়ের ঘরে আউট হয়ে আছেন এই তালিকায়। নাসির হোসেন আর লিটন দাসও দুবার করে নব্বইয়ের ঘরে আউট হন।