আজ সকাল ৮টা ১২ মিনিটে দেশের এক সেরা রত্ন হারিয়েছে ভারত। মুম্বাইয়ের ব্রিচ ক্যান্ডি হাসপাতালে শেষনিশ্বাস ত্যাগ করেছেন কিংবদন্তি সংগীতশিল্পী লতা মঙ্গেশকর। জানুয়ারি মাসের শুরুতে করোনায় আক্রান্ত হন, তখন থেকেই ভর্তি ছিলেন হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ)। পরে নিউমোনিয়া ধরা পড়ে। তবে পরে শারীরিক পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ায় ভেন্টিলেশন সাপোর্ট বন্ধ করাও হয়েছিল। কিন্তু শনিবার অবস্থার অবনতি হয় তাঁর, আজ সকালে তো চিরবিদায়ই জানাতে হলো তাঁকে।
৯২ বছর বয়সে তাঁর বিদায়ে শোকাতুর ভারতীয় ক্রিকেটও। সাবেক থেকে বর্তমান, দেশি-বিদেশি ক্রিকেটাররা কিংবদন্তিকে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন। আর সে সুবাদে ক্রিকেটের সঙ্গে প্রবাদপ্রতিম গায়িকার নানা গল্প উঠে আসছে। ২০১১ বিশ্বকাপে পাকিস্তানের বিপক্ষে সেমিফাইনালে জয়ের আশায় উপোস করেছিলেন লতা। ম্যাচের পুরোটা সময় কোনো দানাপানি মুখে তোলেননি।
মোহালিতে শচীন টেন্ডুলকারের ৮৫ রানের ইনিংসে ২৬০ রান তুলেছিল ভারত। টান টান উত্তেজনার সে ম্যাচে ২৯ রানে জিতে ফাইনালে উঠেছিল স্বাগতিকেরা। ২৮ বছর পর ভারতের ওয়ানডে বিশ্বকাপ জয়ের পথে সে ম্যাচটি স্মরণীয় হয়ে আছে।
ক্রিকেটের বড় ভক্ত লাতার কাছে সে ম্যাচটি ছিল অনেক গুরুত্বপূর্ণ।
আর সব ভারতীয়ের মতোই সেদিন কায়মনোবাক্যে দেশের জয় কামনা করেছিলেন। সেই ইচ্ছা পূরণ করতে আধ্যাত্মিক সাহায্যও খুঁজছিলেন। ম্যাচের কিছুদিন পর বার্তা সংস্থা পিটিআইয়ের কাছে বলেছিলেন, ‘আমি পুরো ম্যাচ দেখেছি এবং খুবই চিন্তিত ছিলাম ম্যাচ নিয়ে। ভারতের ম্যাচের সময় আমার পরিবারের সবাই কিছু না কিছু সংস্কারে বিশ্বাস করে। আমি, মীনা ও ঊষা ম্যাচের সময়টাতে কিচ্ছু খাইনি, কিছু পান করিনি। জয়ের জন্য সারাক্ষণ প্রার্থনা করেছি। ভারত জেতার পরই আমরা সেদিন রাতের খাবার খেয়েছি।’
চার বোনের মধ্যে লতা মঙ্গেশকরই সবচেয়ে বড়। ২০১১ সালের সেমিফাইনালের দিন তাঁর বয়স ছিল ৮১ বছর। দ্বিতীয় বোন মীনার বয়স ছিল ৭৯ বছর। আর সবচেয়ে ছোট ঊষার বয়সও ছিল ৭৫ বছর। সে বয়সেও ৯ ঘণ্টার বেশি সময় উপোস করেছেন তিনজন।
ভারতের দুটি ওয়ানডে বিশ্বকাপের সঙ্গে জড়িয়ে আছেন লতা। ১৯৮৩ বিশ্বকাপের পর ভারত দলের জন্য তহবিল জোগাড় করে দিয়েছিলেন লতা মঙ্গেশকর। লর্ডসের গ্যালারিতে বসেই সে ফাইনাল দেখেছেন কিংবদন্তি। আর ফাইনালের আগে উৎসাহ দিতে ডেকে পাঠিয়েছিলেন দলের সবাইকে, ‘ম্যাচের আগে আমি কপিল দেব ও তার দলকে আমার হোটেলে ডিনারের দাওয়াত দিয়েছিলাম। ওদের শুভকামনা জানিয়েছি এবং এরপর আমাদের দল ইতিহাস রচনা করল। শিরোপা জেতার পর, ভারত দলের সঙ্গে ডিনার করতে আমন্ত্রণ জানিয়েছিল কপিল দেব। আমি ওদের অভিনন্দন জানিয়ে এসেছি।’