পাকিস্তানের ভবিষ্যৎ নিয়ে দুশ্চিন্তায় মিয়াঁদাদ
জাভেদ মিয়াঁদাদ কখন কোন সুরে কথা বলেন, সেটির হিসেব রাখাই যেন এখন মুশকিল হয়ে দাঁড়িয়েছে পাকিস্তানের ক্রিকেট বোর্ডের (পিসিবি) জন্য। পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের জন্যও কি নয়?
পিসিবির সমালোচনা মিয়াঁদাদ করেন সব সময়ই। কদিন আগে ইমরানের সমালোচনাও করেছিলেন, বলেছিলেন ইমরান নাকি পাকিস্তানের ক্রিকেটটা ধ্বংস করে ফেলছেন! এর কিছুদিন পরই অবশ্য আবার সুর পালটে ইমরানের কাছে ক্ষমা চেয়েছিলেন মিয়াঁদাদ। এসব বেশি দিন আগের কথা নয়, সমালোচনা ও ক্ষমা চাওয়ার বিপরীতমুখী কথা এসেছিল গত আগস্ট মাসে দশ দিন আগে-পরে।
মাঝে মাস দু-একের বিরতি গেল, এখন আবার মিয়াঁদাদের কণ্ঠে পাকিস্তানের ক্রিকেটকর্তাদের নিয়ে সমালোচনার সুর। এবারে অবশ্য সমালোচনাটা অতটা মিয়াঁদাদসুলভ ঝাঁজালো হয়নি। কিংবদন্তি পাকিস্তান ব্যাটসম্যান শুধু জানিয়েছেন, পাকিস্তানের ক্রিকেট নিয়েই তিনি দুশ্চিন্তায় আছেন।
লাহোরে আজ সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপে মিয়াঁদাদ এসব শঙ্কার কথা জানিয়েছেন। ৬৩ বছর বয়সী সাবেক পাকিস্তান ব্যাটসম্যানের মনে হচ্ছে, পাকিস্তানের ক্রিকেটের ভিত্তিটাই উপড়ে ফেলা হচ্ছে, বিশ্বে আর কোনো দেশে এমনটা দেখা যায় না। ঠিক কী কারণে পাকিস্তানের ক্রিকেটের ভিত্তি উপড়ে যাচ্ছে বলে মনে হচ্ছে তাঁর, সেটির ব্যাখ্যা অবশ্য নেই। ‘পিসিবির কাজ করার ধরনে নাক গলাতে চাই না। সময় বলবে বোর্ড যা করছে সেটা ঠিক কি বেঠিক। আশা করি সবকিছু ঠিকই হবে। এখন আমাদের ক্রিকেট যেভাবে খেলা হচ্ছে, গত ২০ বছরে তেমনটা হয়নি। সারা বিশ্বে কোথাও ক্রিকেটের ভিত্তি বদলানো হয় না, সবাই শুধু ধরনটাকে (সময়ের প্রয়োজনে) একটু অদল-বদল করে নেয়’—মিয়াঁদাদকে উদ্ধৃত করে লিখেছে পাকিস্তানের ক্রিকেটবিষয়ক ওয়েবসাইট ক্রিকেট পাকিস্তান।
সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপে পাকিস্তানের ক্রিকেট থেকে প্রসঙ্গ বদলে গেছে তাঁর নিজের দিকে। তাতে মিয়াঁদাদের কথা, অন্য কে কী ভাবল বা বলল তাঁকে নিয়ে, তা নিয়ে তাঁর থোড়াই কেয়ার। ‘ক্রিকেটটা আমি সব সময় নিজের প্রতি সৎ থেকেই খেলেছি। সেটা সবাই জানে। কেউ যদি সেটা বিশ্বাস না-ও করে, তাতে আমার কিছু যায়-আসে না। মানুষ আমাকে ভালোবাসে, সম্মান করে, ক্রিকেট থেকে আমার আয় সেটাই। এখানে অনেকেই ঈর্ষাকাতর, ভণ্ড। প্রত্যেক খেলোয়াড়ই একেকটা বাচ্চার মতো, ওদের আমি সব সময়ই শুভকামনা জানাই’—বলেছেন মিয়াঁদাদ।
পাকিস্তানের হয়ে ১২৪টি টেস্টে ২৩ সেঞ্চুরিসহ প্রায় নয় হাজার রান ও ২৩৩ ওয়ানডেতে আটটি সেঞ্চুরিসহ প্রায় সাড়ে সাত হাজার রান করা মিয়াঁদাদ অবশ্য পাকিস্তানের বোর্ডের কার্যক্রমের নিয়মিত সমালোচকদের একজন। তা তিনি সর্বশেষ আলোচনায় এসেছিলেন ইমরান খানের সমালোচনা ও তার দিন দশেক পর ইমরানের কাছে ক্ষমা চেয়ে। আগস্টের শুরুর দিকে ইমরানের সমালোচনা করে বলেছিলেন, ইমরান পাকিস্তানের ক্রিকেট ধ্বংস করছেন। তাঁর সেই বক্তব্যের পেছনে মূল অভিযোগ ছিল, পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ও পিসিবির মূল পৃষ্ঠপোষক ইমরান পাকিস্তান ক্রিকেটে অনেক বদল আনছেন, পিসিবিতে পাকিস্তানের বাইরের অনেককে আনছেন।
তখন নিজের ইউটিউব চ্যানেলে ইমরানকে রাজনীতিতে চ্যালেঞ্জ জানানোরও কথা জানিয়ে মিয়াঁদাদ বলেছিলেন, ‘তুমি আমার অধিনায়ক ছিলে না, আমি তোমার অধিনায়ক ছিলাম। রাজনীতিতে আসার পর তোমার সঙ্গে কথা হবে। সব জায়গায় আমি তোমার নেতৃত্ব দিয়েছি কিন্তু এখন তোমার আচরণ ঈশ্বরসুলভ। দেখে মনে হয় এই দেশে তুমি-ই একমাত্র বুদ্ধিমান, আর কেউ অক্সফোর্ড কিংবা কেমব্রিজে যায়নি। লোকের কথা ভাবো। তুমি আমার ঘরে এসে প্রধানমন্ত্রী হয়ে বেরিয়েছ। চ্যালেঞ্জ করছি পারলে কথাটা অস্বীকার করো।’
কিন্তু এর দশ দিন পরই সুরে বদল। নিজের আচরণের জন্য ক্ষমা চেয়ে এআরওয়াই নিউজকে মিয়াঁদাদ বলেছেন, ‘যদি কাউকে আঘাত করে থাকি, তাহলে নিজের আচরণের জন্য ক্ষমা চাচ্ছি। বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রীর কাছে। কারণ ইংল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথম টেস্টে পাকিস্তানের পারফরম্যান্সে ভীষণ রাগ হয়েছিল। প্রধানমন্ত্রী এবং বিশ্বজুড়ে পাকিস্তানের সমর্থকদের প্রতি আমার পূর্ণ আস্থা আছে।’ সে সময় মিয়াঁদাদের ভাতিজা ফয়সাল ইকবাল বেলুচিস্তান দলের প্রধান কোচ হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। অনেকের ধারণা, সে কারণেই সুর নরম হয়েছিল বড়ে মিয়াঁর।