ফোনালাপ ফাঁসে জানা গেল কোকেন নিতেন অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটার
ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার সাবেক নৈতিকতা কমিটির প্রধান ও এক গোপন তথ্য ফাঁসকারীর মধ্যকার ফোনালাপ ফাঁস হয়েছে আজ। ফোনালাপে নাম অপ্রকাশিত এক ক্রিকেটারের বিরুদ্ধে কোকেন নেওয়ার ঘটনা এবং উদ্দাম যৌনজীবন নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। এ ঘটনায় ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার দুর্নীতিবিরোধী ইউনিটের নিরাপত্তার বড় দুর্বলতা ধরা পড়েছে সবার কাছে।
দ্য সানডে এজ পত্রিকার কাছে ফোনালাপের রেকর্ড পাঠানো হয়েছে। ফোনালাপের এক প্রান্তে ছিলেন ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার নৈতিকতা কমিটির সাবেক প্রধান শন ক্যারল। নিজেকে একজন উচ্চশ্রেণির যৌনকর্মী দাবি করা এক নারী ক্যারলকে এক ক্রিকেটারের ব্যাপারে সতর্ক করেছেন। বলেছেন, বিখ্যাত এই ক্রিকেটারের নিজেকে সামলানো দরকার; না হলে ক্যারিয়ার শেষ হয়ে যাবে। ফোনালাপে ওই নারী দাবি করেছেন, ওই ক্রিকেটার বারান্দায় নগ্ন হয়ে নেচেছেন, প্রকাশ্যে কোকেন ব্যবহার করেছেন এবং একাধিক মেয়ের সঙ্গে সময় কাটান।
ফোনালাপটি অবশ্য বেশ কয়েক বছর আগের বলেই ধারণা করা হচ্ছে এবং নাম অপ্রকাশিত ক্রিকেটারের বিরুদ্ধে তোলা অভিযোগগুলো প্রমাণিত নয়। তবে কিন্তু এমন এক অডিও রেকর্ড রেখে দেওয়া এবং সেটা এত সহজে ফাঁস হয়ে যাওয়ায় খেলার দুর্নীতি বিশেষজ্ঞরা শঙ্কিত হয়ে উঠেছেন। তাঁদের ধারণা, এভাবে গোপন নথি ফাঁস হয়ে গেলে, অনেক খেলোয়াড়ই ব্ল্যাকমেলের সহজ শিকার হবেন এবং গোপন তথ্য ফাঁসকারীরাও পরিচয় ফাঁস হয়ে যাওয়ার ভয়ে আর তথ্য দিতে চাইবেন না।
ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার কাছে থাকা এই রেকর্ড কখন বা কীভাবে সরানো হয়েছে, সেটা এখনো বোঝা যাচ্ছে না। তবে এটি দ্য সানডে এজকে একটি অজ্ঞাত মেইল আইডি থেকে গোপন মেইলের মাধ্যমে পাঠানো হয়েছে। খেলোয়াড় বা মেইল কে পাঠিয়েছেন, সেটা জানা না গেলেও, সানডে এজ বলছে, ‘অডিও রেকর্ডটি ভুয়া নয়।’
মেইলদাতা লিখেছেন, নৈতিকতা কমিটির ‘ক্ষমতার অপব্যবহারে’র দিকে সবার দৃষ্টি ফেরাতে এবং তথ্য ফাঁসকারীদের দেওয়ার তথ্যের দুর্বল নিরাপত্তার দিকে দৃষ্টি ফেরাতেই এ কাজ করছেন তিনি। মেইলে দাবি করা হয়েছে, তিনি ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার সাবেক কর্মী, যিনি নৈতিকতা কমিটির দুর্বলতা তুলে ধরতে চান এবং এ ব্যাপারটা প্রকাশ্যে আনতে চান।
মেইলে বলা হয়েছে, ‘এসব রেকর্ডিং সংগ্রহ করার, কাদের এসব শোনার এখতিয়ার আছে এবং কত দিন রাখা হবে—কোনো নিয়ম নেই। এসব নথি কারা ব্যবহার করতে পারবে বা এসব তথ্য গোপন রাখার জন্য কোনো নিয়ম বা নীতি নেই। আমি চাই, সাধারণ মানুষ, খেলোয়াড় বা কর্মকর্তাদের ক্ষমতার অপব্যবহারের হাত থেকে বাঁচাতে চাই এবং জবাবদিহি চাই। বহুদিন ধরেই এমন (বোর্ডের) আচরণ চলছে।’
এদিকে ফাঁস হওয়া ফোনালাপে দেখা গেছে, গত বছর সরে দাঁড়ানো ক্যারলকে ফোন করে এক নারী সতর্ক করছেন, ‘ওর (ক্রিকেটার) উচিত এসব কমানো, এসব কমানো; একদম কমিয়ে দেওয়া। কারণ, আমি আসলে ওর উপকারই করছি। আমি চাইব না আমি পার্টি করছি এবং কোকেন নিচ্ছি, এটা প্রকাশ্যে সবাই দেখুক।’
ওই নারী ক্যারলকে বলেছেন, যেসব ব্যাপারে অভিযোগ তুলেছেন, ওই ক্রিকেটারের এসব কাণ্ডের ভিডিও ও ছবি ‘সম্ভবত’ আছে কিন্তু এ ব্যাপারে ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়াকে বিস্তারিত কিছু বলেননি। এটাও বলেছেন, সর্বশেষ এমন কিছু বড়দিনের আগে হতে দেখেছেন, কিন্তু সেটা কোন বছর, তা বলা হয়নি। তবে বলেছেন, ‘এই ছেলেরা অনেক বেশি পার্টি করে।’
এই ফোনালাপ যে ফাঁস হয়েছে, সেটা জানত না ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া। সানডে এজ এ ব্যাপারে তাদের মন্তব্য জানতে চাওয়ার পরই তারা এ ব্যাপারে জেনেছে। গোপন তথ্য ফাঁস হয়ে যাওয়ায় ভিক্টোরিয়া পুলিশের ক্রীড়া নৈতিকতা গোয়েন্দা সংস্থার কাছে অভিযোগ জানিয়েছে ক্রিকেট বোর্ড। বোর্ডের প্রধান নির্বাহী নিক হকলি বলেছেন, ‘আজ সকালে এই প্রতিবেদন দেখেছি। এই প্রতিবেদনগুলোর প্রমাণ নেই। এগুলো অতীতের। যেকোনো গোপন তথ্য চুরি করা অপরাধ। আমরা ভিক্টোরিয়া পুলিশকে জানিয়েছি এবং সহায়তা নিচ্ছি।’