বাংলাদেশকে আজ কোন অস্ত্রে আটকাবে শ্রীলঙ্কা
বিশ্বকাপের আগে প্রস্তুতি ম্যাচগুলো সাধারণত নকআউট পর্বের আগে দেখা হওয়ার সম্ভাবনা নেই—এমন দলের মধ্যে খেলা হয়। ১১ দিন আগে যখন বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কা প্রস্তুতি ম্যাচে মুখোমুখি হয়েছিল, তখন পর্যন্ত সেটাই সত্যি ছিল। দুই দলের কেউই ভাবেনি এত তাড়াতাড়ি আবার দেখা হবে। কিন্তু স্কটল্যান্ডের অঘটনের জন্ম দিয়ে বাংলাদেশকে হারিয়ে দেওয়া এবং টুর্নামেন্টের মাঝপথেই আইসিসির নিয়ম বদলানোয় এখন বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কা পড়ে গেছে সুপার টুয়েলভের একই গ্রুপে।
এই গ্রুপ থেকে সেমিফাইনালে যেতে হলে দুই দলকেই কঠিন পরীক্ষা দিতে হবে, কারণ এই গ্রুপে আছে অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড, দক্ষিণ আফ্রিকা ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের মতো শক্তিশালী দল—এদের কাউকেই টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের প্রথম পর্ব খেলতে হয়নি।
শ্রীলঙ্কা ও বাংলাদেশের মধ্যে বেশ কিছু মিল আছে। দুই দলেই আছে যেকোনো সময় খেলায় পার্থক্য গড়ে দেওয়ার মতো দুজন অলরাউন্ডার—বাংলাদেশের আছে সাকিব আল হাসান এবং শ্রীলঙ্কার ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গা। লাহিরু কুমারা ও দুষ্মন্ত চামিরাকে নিয়ে গড়া শ্রীলঙ্কার পেস আক্রমণের জবাব দেওয়ার জন্য প্রস্তুত বাংলাদেশি বাঁহাতি পেসার মোস্তাফিজুর রহমান। নিজেদের বোলিং আক্রমণের প্রতি শ্রীলঙ্কার আত্মবিশ্বাসটা হয়তো একটু বেশিই থাকবে, কারণ গ্রুপ পর্বের ম্যাচগুলোয় তারা প্রতিপক্ষকে ৯৬, ১০১ ও ৪৪ রানে আটকে দিয়েছে, যা টি-টোয়েন্টিতে কোনো রানই না।
যদি বাংলাদেশের বিপক্ষে শ্রীলঙ্কার স্পিনার মহীশ তিকশানা খেলেন (নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে গ্রুপের শেষ ম্যাচে পিঠের এক পাশের পেশিতে চোট পেয়েছেন), তাহলে এই স্পিনারও বাংলাদেশের জন্য মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারেন।
শ্রীলঙ্কার তুলনায় ব্যাটিংয়ে বাংলাদেশ খানিকটা এগিয়েই থাকবে। যদিও এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের মিডল অর্ডার এই বিশ্বকাপে সন্তোষজনক পারফরম্যান্স দেখাতে পারেনি, তবু অধিনায়ক মাহমুদুল্লাহ ও মুশফিকুর রহিমের অভিজ্ঞতার সঙ্গে তরুণ অলরাউন্ডার আফিফ হোসেন ও উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান নুরুল হাসানকে নিয়ে গড়া বাংলাদেশের মিডল অর্ডার শ্রীলঙ্কার দিকে চোখ রাঙিয়েই কথা বলবে।
শ্রীলঙ্কা দলের সবচেয়ে অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান কুশল পেরেরা এ পর্যন্ত ৫৫টি টি-টোয়েন্টি ইনিংসে ব্যাট করেছেন। ওদিকে বাংলাদেশের সাকিব-মুশফিক-মাহমুদুল্লাহ—এই ত্রয়ীর প্রত্যেকেরই ৯০টির বেশি টি-টোয়েন্টি ইনিংস আছে। প্রথম পর্বে শ্রীলঙ্কা তাদের ব্যাটিং–ঘাটতি বোলিং দিয়ে পূরণ করলেও বাংলাদেশের বিপক্ষে শুধু বোলিং দিয়ে জেতা শ্রীলঙ্কার জন্য কঠিনই হবে। কারণ, নামিবিয়া, আয়ারল্যান্ড বা নেদারল্যান্ডসের ব্যাটসম্যানদের তুলনায় বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা চামিরার বাউন্সার কিংবা হাসারাঙ্গার গুগলি ভালোই সামলাতে পারবেন।
যদিও ইতিহাস শ্রীলঙ্কার হয়েই কথা বলবে; যদিও তাদের এবারের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ দল তেমন একটা অভিজ্ঞ নয়, কিন্তু বড় মঞ্চে শ্রীলঙ্কা বরাবরই ভালো—২০১৯ বিশ্বকাপে তাদের পারফরম্যান্সই এর বড় প্রমাণ। বাংলাদেশের জন্য বরং ঘটনাটি উল্টো, ২০১৯ বিশ্বকাপের অন্যতম অভিজ্ঞ দল হয়েও তারা আশানুরূপ পারফরম্যান্স দেখাতে পারেনি। ফলে, এই টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে শ্রীলঙ্কাকে হারিয়ে তারা টুর্নামেন্টের দ্বিতীয় পর্বের সূচনা করতে চাইবে।
ছেড়ে কথা বলবে না শ্রীলঙ্কাও। তাদের দুই ফাস্ট বোলারই ঘণ্টায় ৯০ মাইলেরও বেশি জোরে বল করতে পারেন। গতকাল এনরিখ নর্কিয়ার আগে বিশ্বকাপের সবচেয়ে দ্রুততম বল দুটি করেছেন কুমারা ও চামিরাই। শারজার স্পিনবান্ধব উইকেটেও ঘণ্টায় ১৫০ কিলোমিটার গতিতে স্টাম্পে আসা বল খেলা কঠিন। ফলে, স্পিনার মহেশ তিকশানা যদি না খেলেন, এই দুই পেসারই হবেন শ্রীলঙ্কার বোলিং আক্রমণের প্রধান হাতিয়ার।