বাংলাদেশের এ দলটার ওপর আমার আস্থা ছিল, তবে সংশয়ও ছিল প্রথম ম্যাচকে ঘিরে। আমার মনে হয়েছিল, স্কটিশদের জয়ের ক্ষুধা অনেক বেশি। অবশ্য শুরুতে অনেক দিন পর নতুন বলে পেসারদের বোলিং দেখে আনন্দিত হয়েছিলাম। তবে ওদের দিয়ে ৬ ওভার করানোটা একটু বেশি হয়ে গেছে। স্পিনের সঙ্গে সমন্বয় করা উচিত ছিল। প্রথমে টানা পেসার, পরে টানা স্পিনারদের দিয়ে বল করানো হলো। মাহমুদউল্লাহর অধিনায়কত্ব ভালো লাগেনি এ ম্যাচে। শেষ দিকে স্পিনারদের ওভারই ছিল না।
প্রথম ইনিংসে এ জায়গায় একঘেয়ে অধিনায়কত্বই করে ফেলেছে মাহমুদউল্লাহ। মাঝে ৮ রানে ৫ উইকেট তুলে নেওয়া অবিশ্বাস্য পারফরম্যান্স। তবে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট তো ‘ফানি গেম’। প্রথম ১০ ওভারে যখন ৩৭টি বল ডট হলো, তখন মনে হচ্ছিল স্কটল্যান্ড পিছিয়ে গেল। সোজা ব্যাটে খেলছিল, আড়াআড়ি খেলার চেষ্টা করছিল না। ওরা প্রতিদ্বন্দ্বিতা থেকে ছিটকে যাবে, ধারণা হয়েছিল এমন। তাদের দ্রুত অলআউট করে দিতে মাহমুদউল্লাহ এমন অধিনায়কত্ব করে থাকতে পারে। তবে সবকিছুকেই গুরুত্বসহকারে নেওয়া উচিত। শুধু কথা দিয়ে ম্যাচ জেতা যায় না, মাঠে খেলে জিততে হয়, এটা আসলে স্কটল্যান্ড দেখিয়ে দিল।
এরপরও তাদের ১৪০ রানে আটকে রাখার পর বাংলাদেশের সে রানটা অনায়াসে তাড়া করা উচিত ছিল। বাংলাদেশ আসলে হোমওয়ার্কই করেনি প্রতিপক্ষকে নিয়ে। আবার মুশফিকুর রহিমও ফর্মে নেই। পাওয়ার প্লেতে তাকে আসতে হলে চাপ থাকবে ওর ওপর। কৌশলগত কারণে তাকে পরে নামিয়ে যার আত্মবিশ্বাস আছে, তাকে আনা উচিত ছিল আগে। আমাদের ব্যাটিংয়ের লেজ অনেক লম্বা। সাহসের সঙ্গে এ রকম কিছু সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত ছিল।
ব্যাটিংয়ে শুরুটাও ভালো হয়নি। মনে হয়েছে, অনেক দিন ধরে খেললেও মাথাটা কেউ কাজে লাগাচ্ছি না মাঠে। একটা শট খেলার পর আবার ওটাই খেলতে হবে! সৌম্যকে নিয়ে আমি হতাশ। কাজের দিন তো রান করতে হবে! সাকিবও ছন্দে আছে বলে মনে হয়নি। আউটও হয়েছে বাজে একটা বলে, আমাদের কোনো অবসরপ্রাপ্ত ক্রিকেটারও এ বলটায় ছয় মারতে পারবেন। তার ম্যাচটা শেষ করে আসা উচিত ছিল।
তবে স্কটল্যান্ডকে কৃতিত্ব দিতেই হবে। বোলিংয়ের সমন্বয়ে, পরিস্থিতি সামলানোয় দুর্দান্ত ছিল ওরা। মার্ক ওয়াটের বোলিংয়ে মুগ্ধ হয়েছি আমি। ক্রিস গ্রিভসের মতো লেগ স্পিনার তারা বের করতে পারে, আমরা পারি না—এটা লজ্জার। আর এত খেলার পরও তাকে সামলাতে পারলাম না, এটাও হতাশার। মুশফিক আর কতবার এভাবে আউট হবে! সামনে এত জায়গা, তবু সেখান থেকে রান বের করতে পারে না। এমন শট খেলে আউট হলে বুঝতে হবে ওর বিরতি দরকার।
গ্রিভস আর ওয়াটই পার্থক্য গড়ে দিয়েছে আসলে। ফিল্ডিংও অসাধারণ হয়েছে স্কটল্যান্ডের। ওদের স্পিনে বৈচিত্র্য বেশি ছিল আমাদের চেয়ে।
টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপে বাংলাদেশের প্রথম ম্যাচ দেখে আমি আসলে খুবই হতাশ। আমরা বাজে ক্রিকেট খেলেছি। খেলাটা ক্রিকেট বলেই হয়তো এটা মেনে নিতে হবে, তবু বলব, এই ম্যাচ আমাদের হারা উচিত হয়নি। আমার বিশ্বাস, বোর্ডও এখন উপলব্ধি করবে, ঘরের মাঠে সস্তা জয়ের তাৎপর্য নেই। র্যাঙ্কিংয়ে নিজেদের ৬ নম্বর দেখিয়ে, এসব উইকেটে ক্রিকেট খেলে আত্মবিশ্বাস বাড়ানো যায় না। মান বাড়ানো যায় না। তাদের এটা উপলব্ধি করা উচিত।