ব্যাটিংয়ে পুরোনো ভূত, টি-টোয়েন্টিতে ‘চেনা’ রূপে বাংলাদেশ
মোহাম্মদ নাঈম শুধু ক্যাচটা ফেলেননি, সেটিতে চারও হলো। ঠিক আগের ওভারে মিডউইকেটে সহজ ক্যাচ ফেলেছেন আফিফ হোসেন। দুবারই বোলার মেহেদী হাসান, ব্যাটসম্যান উসমান গনি।
মিরপুরে সিরিজের দ্বিতীয় ও শেষ টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশের চিত্রটা ফুটে উঠল তাতেই। ক্যাচ হাতছাড়া হলো, বোলিংয়ের চাপটাও ধরে রাখতে পারল না বাংলাদেশ। তবে সমস্যা এসব না। টস জিতে ব্যাটিংয়ে নেমে ১১৫ রানে গুটিয়ে যাওয়ার পর, অমন ক্যাচ মিস আদতে ‘কাটা ঘায়ে নুনের ছিটা’-ই। সমস্যাটা যে ব্যাটিংয়েই!
তাড়া করতে নেমে শুরুতে উইকেট হারালেও আগের দিনের মতো ভুলের পুনরাবৃত্তি করেনি আফগানিস্তান। হজরতউল্লাহ জাজাইয়ের ৪৫ বলে অপরাজিত ৫৯ রানের সঙ্গে উসমান গনির ৪৮ বলে ৪৭ রান; দুজনের ৮২ বলে ৯৯ রানের জুটিতে সিরিজে আজ ৮ উইকেটের জয়ে সিরিজে ১-১ ব্যবধানে সমতায় ফিরল মোহাম্মদ নবীর দল।
টপ অর্ডারের চিত্র বদলায়নি আজও। পঞ্চম উইকেটে মাহমুদউল্লাহ ও মুশফিকুর রহিমের ৩১ বলে ৪৫ রানের জুটি বাদ দিলে বলার মতো কিছু নেই, মিরপুরে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা ব্যর্থ হয়েছেন সম্মিলিতভাবেই।
ইনিংসে মাত্র চারজন ব্যাটিং করেছেন ১০০-এর ওপর স্ট্রাইক রেটে, প্রথম চারজনের তিনজন মিলে ৪৪ বল খেলে করেন মাত্র ২৬। পুরো ইনিংসে বাংলাদেশ বাউন্ডারি মেরেছে ১২টি, ডট দিয়েছেন ৫৮টি।
নিজের দ্বিতীয় ম্যাচে তেমন কিছু করতে পারেননি মুনিম শাহরিয়ার, মোহাম্মদ নবীকে জোরের ওপর খেলতে গিয়ে ক্যাচ দিয়েছেন ১০ বলে ৪ রান করে। ফর্মটা খুঁজেই ফিরেছেন মোহাম্মদ নাঈম, রান-আউট হওয়ার আগে তাঁর ১৯ বলে ১৩ রানের ইনিংসে ছিল দুটি চার।
দুজনের মাঝে ফিরেছেন আগের ম্যাচে ব্যাটিংয়ের নায়ক লিটন দাস—আজমতউল্লাহ ওমরজাইকে তুলে মারতে গিয়ে মিডউইকেটে ক্যাচ দিয়েছেন ১০ বলে ১৩ রানে। ১৫ বলে ৯ রান করা সাকিব ওমরজাইয়ের দ্বিতীয় শিকার, বাংলাদেশ তখন ৪৫ রান তুলতে ৪ উইকেট হারিয়েছে।
সে চাপ একটু সামাল দিয়েছিলেন চোট কাটিয়ে দলে ফেরা মুশফিক ও অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ। তবে অসময়ে ফিরেছেন দুজনই। রশিদ খানের বলে এলবিডব্লিউ হয়েছেন মাহমুদউল্লাহ, ১৪ বলে তাঁর ২১ রানের ইনিংস কোনো আশা জোগালেও সেটি শেষ হয়েছে ১৫তম ওভারেই।
বাংলাদেশ এরপর হুড়মুড় করে ভেঙে পড়েছে আফগান পেসে। ৬ রানের মধ্যে বাংলাদেশ হারিয়েছে ৪ উইকেট—ফজলহক ফারুকির স্লোয়ারে ধোঁকা খেয়েছেন মুশফিক, কাভার দিয়ে তুলে মারতে গিয়ে ধরা পড়েছেন ২৫ বলে ৪ চারে ৩০ রান করে।
এরপর মেহেদী হাসান ও শরীফুল ইসলামের কাছে কোনো জবাব ছিল না ফজলহকের ইয়র্কারের, আফিফ ক্যাচ তুলেছেন আজমতউল্লাহর বলে। নাসুম ও মোস্তাফিজ অলআউট হতে দেননি, সান্ত্বনা ছিল সেটিই।
বোলিংয়ে বাংলাদেশ নিজেদের মুহূর্তটা পেতে পারত তৃতীয় বলেই। সরল রেখার মতো ওপরে ওঠা হজরতউল্লাহ জাজাইয়ের সহজ ক্যাচটা নিতে পারেননি বোলার নাসুম আহমেদ নিজেই। যদিও বল এত ওপরে উঠেছিল, সহজেই নাগাল পেতেন উইকেটকিপার লিটন দাসও। বাংলাদেশ অবশ্য ব্রেক থ্রু পায় পরের ওভারে, মেহেদী হাসানকে জোরের ওপর খেলতে গিয়ে কাভারে ক্যাচ তোলেন মাহমুদউল্লাহ, বাংলাদেশ অধিনায়ক অবশ্য ভুল করেননি।
ভুল করেননি আর জাজাইও। এ উইকেটে টিকে থাকলে শট খেলাটা তুলনামূলক সহজ, আরেকবার দেখিয়েছেন এ বাঁহাতি। পাওয়ার প্লেতে আফগানিস্তান তুলেছে ৩৪ রান, তবে উইকেট হারায়নি আর।
নবম ওভারে গিয়ে সাকিবকে লং-অন দিয়ে টানা দুই ছয় মেরেছেন জাজাই। ১৫তম ওভারে গিয়ে সাকিবকে মেরেছেন আরও দুইটি ছয়। দ্বিতীয় ছয় দিয়ে অর্ধশতকও পূর্ণ হয়ে গেছে তাঁর।
দুইটি জীবন পেলেও অবশ্য অর্ধশতক পাওয়া হয়নি উসমানের। বোলিংয়ে এসেই তাঁকে ফিরিয়েছেন মাহমুদউল্লাহ, সব মিলিয়ে অস্বস্তিতে থাকা উসমান ৪৮ বলে করেছেন ৪৭ রান। তবে উসমান ফিরলেও কোনো সমস্যা হয়নি জাজাইয়ের। দারবীশ রাসুলিকে নিয়ে ম্যাচ জিতিয়েই ফিরেছেন, ১৪ বল বাকি থাকতেই।