বড়দিনের গোল উৎসবের পরেও সতর্ক গার্দিওলা
বড়দিন এলেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটা ছবি ঘুরে বেড়ায়। ১৯৬৩ সালের ‘বক্সিং ডে’-তে ইংল্যান্ডের প্রথম বিভাগে যতগুলো ম্যাচ হয়েছিল, এর মধ্যে দু-একটা ম্যাচ বাদে প্রতিটিতে দেখা গিয়েছিল গোল উৎসব। চেলসি ব্ল্যাকপুলের বিপক্ষে জিতেছিল ৫-১ গোলে, লিভারপুল ৬-১ গোলে ভাসিয়েছিল স্টোক সিটিকে, ফুলহাম ১০-১ গোলে জিতেছিল ইপসউইচের বিপক্ষে, ব্ল্যাকবার্ন ৮-২ গোলে হারিয়েছিল ওয়েস্ট হামকে। অবিশ্বাস জাগানো ফলও ছিল, বার্নলির বিপক্ষে ৬-১ গোলে হেরে বসেছিল ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড।
পরের বক্সিং ডের ম্যাচগুলোও কমবেশি গোল উৎসবের এ ধারা বজায় রেখেছে। ব্যাপারটা এমন দাঁড়িয়েছে, বড়দিনের ক্ষণে আয়োজিত ম্যাচগুলোর মধ্যে দু-একটায় অন্তত গোলের বন্যা দেখা যাবেই, যা দর্শকদের বড়দিনের আনন্দ বাড়িয়ে দেবে আরও বহুগুণ। গতকাল এই গোল উৎসবের দায়িত্বটা নিজেদের কাঁধে তুলে নিয়েছিল ম্যানচেস্টার সিটি আর আর্সেনাল। লেস্টার সিটিকে নিজেদের মাঠে ৬-৩ গোলে বিধ্বস্ত করেছে সিটি। নরউইচের মাঠে গিয়ে আর্সেনাল জিতে এসেছে ৫-০ গোলে।
প্রতিপক্ষকে এভাবে নাকানিচুবানি খাওয়ানোর পরেও সিটির কোচ পেপ গার্দিওলা আবেগের স্রোতে গা ভাসিয়ে দিতে নারাজ। কোভিডের কারণে সিটির চেয়ে শিরোপাপ্রত্যাশী অন্য দলগুলোর হাতে যে আরও বাড়তি ম্যাচ আছে, সে ব্যাপারই ভাবাচ্ছে গার্দিওলাকে।
লেস্টারকে ধসিয়ে দেওয়ার পর পয়েন্ট তালিকার শীর্ষে নিজেদের অবস্থান আরও পোক্ত করেছে সিটি। ১৯ ম্যাচে ৪৭ পয়েন্ট তাদের। ৪১ পয়েন্ট নিয়ে দ্বিতীয় স্থানে থাকা লিভারপুল খেলেছে এক ম্যাচ কম। তবে গার্দিওলাকে বেশি ভাবাচ্ছে টটেনহাম আর ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড।
কোভিডের কারণে এই দুই দলের ম্যাচই স্থগিত হয়েছে বেশি, যা পরে সুবিধামতো সময়ে আয়োজিত হবে। সিটির চেয়ে এই দুই দল তিনটি করে কম ম্যাচ খেলেছে। গার্দিওলা তাই পুরোপুরি স্বস্তিতে থাকতে পারছেন না, ‘কোভিডের কারণে আমাদের হাতে বাড়তি একটা ম্যাচ আছে। কিন্তু টটেনহাম আর ইউনাইটেডের হাতে তিনটি বা চারটি বাড়তি ম্যাচ আছে। তাই লিগের এ পর্যায়ে এসে ৪৭ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষে থাকাটা গুরুত্বপূর্ণ ছিল।’
বড়দিনের ক্ষণে দলগুলো যে গোল করার আমেজে থাকে, সেটা গার্দিওলাও জানেন, ‘ম্যাচটা একেবারে রোলার কোস্টারের মতো হয়েছে। বক্সিং ডেতে সাধারণত যেমন ম্যাচ হয়ে থাকে, সে রকমই হয়েছে। সবার জন্য ম্যাচটা অনেক আনন্দদায়ী ছিল। তবে আমাদের জন্য সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ ছিল দলের জয়।’
প্রথমার্ধেই ৪-০ গোলে এগিয়ে গিয়েছিল সিটি। ২টি পেনাল্টি থেকে ২ গোল পেয়েছেন রিয়াদ মাহরেজ আর রাহিম স্টার্লিং। বাকি ২ গোল আসে জার্মান মিডফিল্ডার ইলকায় গুন্দোয়ান আর কেভিন ডি ব্রুইনার পা থেকে। বিরতির পর গার্দিওলার মনে ভয় ধরিয়ে দিয়েছিল ব্রেন্ডান রজার্সের লেস্টার। সিটির সাবেক নাইজেরিয়ান স্ট্রাইকার কেলেচি ইহিয়ানাচোর নৈপুণ্যে ৩ গোল শোধ দেয় দলটা। ইহিয়ানাচো নিজে ১টি গোল করেছেন, দুই ইংলিশ মিডফিল্ডার আদোমেলা লুকমান আর জেমস ম্যাডিসনকে দিয়ে করিয়েছেন আরও ২টি। পরে ফরাসি ডিফেন্ডার এমেরিক লাপোর্ত আর স্টার্লিংয়ের দ্বিতীয় গোলে ম্যাচের ফলাফল নিয়ে আর কোনো সংশয় অবশিষ্ট রাখেনি সিটি।
ম্যাচে আটজন ভিন্ন ভিন্ন খেলোয়াড় গোল করেছেন। ২০০৪ সালে নগর প্রতিদ্বন্দ্বী টটেনহামের মাঠে আর্সেনাল ৫-৪ গোলে জিতে এসেছিল, শুধু সেই ম্যাচেই এর চেয়ে বেশি খেলোয়াড় গোল করেছিলেন।
ওদিকে গার্দিওলার শিষ্য মিকেল আরতেতাও আস্তে আস্তে আর্সেনালে নিজের পায়ের তলায় মাটি খুঁজে পাচ্ছেন। ডিসেম্বরে এভারটনের বিপক্ষে হারের পর কাল নরউইচের বিপক্ষে ম্যাচসহ টানা পাঁচ ম্যাচে জিতল আর্সেনাল। এই পাঁচ ম্যাচে গোল করেছে ১৯টি, খেয়েছে মাত্র ২টি। নরউইচের মাঠে কাল আর্সেনালের হয়ে জোড়া গোল করেছেন বুকায়ো সাকা, ১টি করে গোল স্কটিশ লেফটব্যাক কিয়েরান টিয়েরনি, ফরাসি স্ট্রাইকার আলেজান্দ্রো লাকাজেত ও মিডফিল্ডার এমিল-স্মিথ রোর।
প্রিমিয়ার লিগে এর আগে প্রতিপক্ষের মাঠে ৫ গোলের ব্যবধানে আর্সেনাল জিতেছিল মাত্র দুবার—মিডলসব্রোর বিপক্ষে ১৯৯৯ সালে, আর এভারটনের বিপক্ষে ২০০৯ সালে। বিকল্প খেলোয়াড় হিসেবে টানা তিন ম্যাচে গোল পেলেন এমিল স্মিথ-রো। আর্সেনালের হয়ে এ রেকর্ড আগে ছিল চেক মিডফিল্ডার টমাস রসিকির। ২০০৯ সালের সেপ্টেম্বরে টানা তিন ম্যাচে বিকল্প খেলোয়াড় হিসেবে নেমে গোল পেয়েছিলেন তিনি।
গতকালের জয়ে ১৯ ম্যাচে ৩৫ পয়েন্ট নিয়ে লিগের চার নম্বরেই থাকল আর্সেনাল। তবে চারে থাকা নিয়ে তাদের একটু শঙ্কায় থাকতেই হচ্ছে। ২৯ পয়েন্ট নিয়ে পাঁচে থাকা টটেনহাম যে ম্যাচ খেলেছে ১৬টি! টটেনহামকে কাল পয়েন্ট তালিকার পাঁচ নম্বরে তুলে এনেছে ক্রিস্টাল প্যালেসের বিপক্ষে জয়। কাল গোলের আমেজে ছিল টটেনহামও। হ্যারি কেইন, হিউং মিন সন আর লুকাস মউরার গোলে প্যালেসকে ৩-০ ব্যবধানে হারিয়েছে তারা।