ক্রিকেট খেলাটা বড্ড ভালোবাসতেন লতা মঙ্গেশকর। গানের দুনিয়ার কিংবদন্তির দ্বিতীয় ভালোবাসাটা অনেককেই অবাক করত। জীবনের শেষ দিনগুলোতেও ভারতীয় ক্রিকেট দলের সাফল্য-ব্যর্থতা ছুঁয়ে গেছে তাঁকে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তিনি হাজির হয়ে জানিয়েছেন প্রতিক্রিয়া। সব সময়ই অনুপ্রাণিত করে গেছেন ভারতীয় ক্রিকেটারদের। মাঝখানে তো একটা সময় এমন এসেছিল, যখন ক্রিকেট–বিষয়ক অনেক আলোচনাতেই লতার টুইট একটা ভূমিকা রাখত।
তবে ক্রিকেটের প্রতি লতা মঙ্গেশকরের ভালোবাসাটা নতুন কিছু নয়। বরং এটা যুগযুগান্তরের পুরোনো। ক্রিকেট যখন টেলিভিশনে দেখা যায় না, রঙিন পোশাক যখন দূরের কল্পনা। সাদা পোশাক আর লাল বলের সেই যুগেই ক্রিকেটকে ভালোবেসেছিলেন ভারতীয় সংগীতের ‘নাইটিঙ্গেল’।
ভারতীয় ক্রিকেট দল যখন বিশ্ব ক্রিকেটের শক্তি হয়ে উঠতে লড়াই করছে, লতা তখনই ভালোবাসার হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলেন তাদের জন্য। অনেকেই হয়তো জানেন না, লতা মঙ্গেশকর ১৯৮৩ সালে একটি কনসার্ট আয়োজন করে ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিসিআই) জন্য অর্থ সংগ্রহ করে দিয়েছিলেন।
১৯৮৩ সালে কপিল দেবের নেতৃত্বে প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপ জয় করেছিল ভারত। এমন দুর্দান্ত এক সাফল্যের পর বিসিসিআই ক্রিকেট দলকে সংবর্ধনা দেওয়ার পরিকল্পনা করে। সংবর্ধনা ও সেই সঙ্গে বীর ক্রিকেটারদের হাতে পুরস্কার তুলে দেওয়া—বোর্ডের ভাবনাটা ছিল এমনই। কিন্তু সেটি আয়োজন করতে গিয়ে দেখা গেল, বোর্ডের তহবিলে সেটি আয়োজনের জন্য তেমন অর্থ নেই। আজ থেকে ৩৮ বছর আগের সেই দিনগুলোতে ক্রিকেট অর্থকরী হয়ে ওঠেনি ভারতে।
বিশ্বকাপ জিতেও কপিল দেব-সুনীল গাভাস্কার-মহিন্দর অমরনাথ-সৈয়দ কিরমানিরা যে অর্থ বোনাস হিসেবে পেয়েছিলেন, সেটি আজকের দিনে কল্পনাও করা যায় না। এমন একটা পরিস্থিতিতে ভারতীয় ক্রিকেটের অন্যতম সংগঠক রাজ সিং দুঙ্গারপুর শরণাপন্ন হন লতা মঙ্গেশকরের।
তখন বিসিসিআইয়ের সভাপতি ছিলেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী এনকেপি সালভে। দুঙ্গারপুর তাঁর কাছে এ পরিকল্পনার কথা জানান। দিল্লিতে একটি কনসার্ট আয়োজিত হবে, সেটিতে গান গাইবেন লতা। সেখানেই বিশ্বকাপজয়ী ভারতীয় ক্রিকেটারদের সংবর্ধনা দেওয়া হবে। আর কনসার্টের টিকিট বিক্রি করে যে আয় হবে, সেটি পুরোটাই তুলে দেওয়া হবে বিসিসিআইয়ের হাতে।
ভারতের একটি রেডিও স্টেশনকে বেশ আগে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে লতা মঙ্গেশকর নিজেই সেই কনসার্টের স্মৃতিচারণা করেছিলেন, ‘আমি দুঙ্গারপুর সাহেবের কথায় সঙ্গে সঙ্গেই রাজি হয়ে যাই। দিল্লিতে সেই কনসার্ট হয়েছিল। ১৯৮৩ সালের ১৭ আগস্টের সেই কনসার্টে হাজির ছিলেন রাজীব গান্ধীও।’
লতার সেই কনসার্টে পরিবেশন করা হয়েছিল তাঁর সুরকার ভাই পণ্ডিত হৃদয়নাথ মঙ্গেশকরের সুর করা গান। ‘ভারত বিশ্ব বিজেতা...’ গানটি লতার সঙ্গে গেয়েছিলেন কপিল-গাভাস্কাররাও। দারুণ আলোচিত এ কনসার্টে সংগৃহীত উঠেছিল ২০ লাখ রুপি। ১৯৮৩ সালের হিসাবে অনেক অনেক টাকা। লতা মঙ্গেশকার এত বড় একটা কাজের জন্য একটি টাকাও নেননি।
অনেক ইতিহাসকে সাক্ষী করে কিংবদন্তি লতা মঙ্গেশকর আজ সকালে চলে গেলেন অনন্তলোকে। রেখে গেলেন অজস্র স্মৃতি। তাঁর চলে যাওয়ার দিনে বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ক্রিকেট বোর্ড ৩৮ বছর আগের সেই কনসার্টের স্মৃতি মনে করে আপ্লুত হবেই।