ভারতের তিন, পাকিস্তানের তিন, বাংলাদেশের কেউ নেই

শাহিন আফ্রিদিসহ পাকিস্তান দলের তিনজন সুযোগ পেয়েছেন আইসিসির বর্ষসেরা টেস্ট দলেছবি: প্রথম আলো

বছরের সেরা টি-টোয়েন্টি দলে শুধু মোস্তাফিজুর রহমান জায়গা পেয়েছিলেন। ওয়ানডে দলে মোস্তাফিজের পাশাপাশি জায়গা পেয়েছেন সাকিব আল হাসান ও মুশফিকুর রহিম। ওয়ানডে দলে বাংলাদেশের প্রতিনিধিই সবচেয়ে বেশি! কিন্তু আজ আইসিসির ২০২১ সালের বর্ষসেরা টেস্ট দল যখন ঘোষিত হলো, সেখানে বাংলাদেশের নামের পাশে শূন্যতা। বাংলাদেশের কোনো ক্রিকেটারের সুযোগ হয়নি সে দলে।

সবচেয়ে বেশি তিনজন করে ক্রিকেটার সুযোগ পেয়েছেন ভারত ও পাকিস্তান থেকে। নিউজিল্যান্ড থেকে দুজন। শ্রীলঙ্কা, অস্ট্রেলিয়া ও ইংল্যান্ডের একজন করে। একাদশের অধিনায়ক নির্বাচিত হয়েছেন নিউজিল্যান্ডের কেইন উইলিয়ামসন।

একাদশে দুই উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান হিসেবে থাকছেন শ্রীলঙ্কার দিমুথ করুনারত্নে ও ভারতের রোহিত শর্মা। ২০২১ সালে ৭ ম্যাচে ৬৯.৩৮ গড়ে ৯০২ রান করেছেন করুনারত্নে। এর মধ্যে পাল্লেকেলেতে বাংলাদেশের বিপক্ষে দ্বিশতক আছে, জোহানেসবার্গে শতক হাঁকিয়েছেন দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষেও। আইসিসির বর্ষসেরা টেস্ট খেলোয়াড়ের চারজনের সংক্ষিপ্ত তালিকায়ও মনোনয়ন পেয়েছেন লঙ্কান উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান।

তাঁর সঙ্গী রোহিত শর্মা অবশ্য পরিসংখ্যানে একটু পিছিয়ে। গত বছরে ৪৭.৬৮ গড়ে ৯০৬ রান করেছেন ভারতের উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান। তবে এর মধ্যেও তাঁকে আলাদা করে রেখেছে দুই ভিন্ন ধরনের কন্ডিশনে দুটি শতক। দুটিই ইংল্যান্ডের বিপক্ষে—একটি চেন্নাইয়ের ব্যাটিং পিচে, অন্যটি ওভালে মেঘলা আবহাওয়ায়।

মারনাস লাবুশেন অস্ট্রেলিয়ার জার্সিতে যেমন দুর্দান্ত বছর কাটিয়েছেন, এরপর আইসিসির টেস্ট একাদশের তিনে অন্য কারও থাকা অসম্ভবই ছিল। অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটিং অর্ডারের তিনে জায়গা পাকা করে ফেলার পথে গত বছরে ৫ ম্যাচে ৬৫.৭৫ গড়ে ৫২৬ রান করেছেন লাবুশেন, শতক দুটি। আইসিসির টেস্ট র‍্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষেও এখন তিনিই।

চারে কে? ইংল্যান্ডের জো রুট, আবার কে! তাঁর দল ভালো করেনি মোটেও, চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে গিয়ে অ্যাশেজে বাজেভাবে হেরেছে। তাঁর অধিনায়কত্ব নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। কিন্তু ব্যাট হাতে ২০২১ সালের রুট অনন্য। ১৫ ম্যাচে ৬১ গড়ে করেছেন ১ হাজার ৭০৮ রান—টেস্ট ইতিহাসে এক পঞ্জিকাবর্ষে যা তৃতীয় সর্বোচ্চ। সে পথে রুট শতক হাঁকিয়েছেন ৬টি, যার প্রতিটিই দুর্দান্ত।

ওভালে সেঞ্চুরি করার পথে অসাধারণ সব শট খেলেছেন রোহিত
ছবি: রয়টার্স

আইসিসির এই অধিনায়ক উইলিয়ামসনকে রাখা হয়েছে পাঁচ নম্বরে। নিউজিল্যান্ডকে আইসিসির টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ জেতানো অধিনায়ক ছাড়া আর কে-ইবা এই দলের অধিনায়ক হতে পারতেন! ৪ ম্যাচে এক শতকসহ ৬৫.৮৩ গড়ে তাঁর ৩৯৫ রান মিডল অর্ডারে দারুণ ভরসাও দেবে।

ছয় নম্বরে পাকিস্তানের ফাওয়াদ আলম। ৩৬ বছর বয়সে এসে অবশেষে পাকিস্তানের টেস্ট ব্যাটিং অর্ডারে নিজের জায়গা পাকা করে নেওয়া ফাওয়াদ ২০২১ সালে ৯ ম্যাচে ৫৭.১০ গড়ে করেছেন ৫৭১ রান। তাঁর তিন শতকের প্রতিটিই এসেছে কঠিন পরিস্থিতিতে, প্রতিপক্ষের মাঠে—দক্ষিণ আফ্রিকা, জিম্বাবুয়ে ও ওয়েস্ট ইন্ডিজে।

এ দলের উইকেটকিপার নির্বাচিত ঋষভ পন্ত নামবেন সাত নম্বরে। তিন সংস্করণেই ভারতের উইকেটকিপার-ব্যাটসম্যানের জায়গাটা নিজের করে নেওয়া ঋষভ গত বছরে ১২ ম্যাচে করেছেন ৭৪৮ রান। বছরের শুরুতে অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে দলকে জেতানো ইনিংসের পর আহমেদাবাদে ইংল্যান্ডের বিপক্ষেও দারুণ শতক হাঁকিয়েছেন তিনি। গ্লাভস হাতে ২৩ ইনিংসে তাঁর ডিসমিসাল ৩৯টি।

ইংল্যান্ডের টেস্ট অধিনায়ক জো রুটের আইসিসির বর্ষসেরা দলে থাকা বলতে গেলে নিশ্চিতই ছিল
ফাইল ছবি

আইসিসির বর্ষসেরা দলে একজনই স্পিনার—ভারতের রবিচন্দ্রন অশ্বিন। ৯ ম্যাচে ৫৪ উইকেট নেওয়ার পথে গড়ে প্রতি উইকেটের পেছনে অশ্বিন বল খরচ করেছেন ১৬.৬৪টি! ব্যাট হাতেও ২৫.৩৫ গড়ে করেছেন ৩৫৫ রান, যার মধ্যে চেন্নাইয়ে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে গুরুত্বপূর্ণ একটি শতকও আছে!

একাদশের বাকি তিনজনই পেসার। একজন নিউজিল্যান্ডের—কাইল জেমিসন; দুজন পাকিস্তানের—হাসান আলী ও শাহিন শাহ আফ্রিদি। বল উইকেটে পড়ার পর বাড়তি গতি ও বাউন্স আদায় করে নেওয়ার ক্ষমতায় গত বছরে ৫ ম্যাচে ২৭ উইকেট নিয়েছেন জেমিসন, গড় ১৭.৫১! ভারতের বিপক্ষে টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালের ম্যাচসেরাও ছিলেন তিনি।

পাকিস্তানকে বল হাতে পথ দেখিয়েছেন হাসান আলী ও শাহিন আফ্রিদি। ৯ টেস্টে ১৬.০৭ গড়ে ৪১ উইকেট নিয়েছেন হাসান। যাঁর সঙ্গে জুটি গড়েছেন হাসান, সেই শাহিনের জন্য বছরটা ছিল অবিস্মরণীয়। ৯ ম্যাচে ১৭.০৬ গড়ে তাঁর উইকেট ৪৭টি। ইনিংসে পাঁচ উইকেট নিয়েছেন ৩ বার।

আইসিসির বর্ষসেরা টেস্ট একাদশ

দিমুথ করুনারত্নে, রোহিত শর্মা, মারনাস লাবুশেন, জো রুট, কেইন উইলিয়ামসন (অধিনায়ক), ফাওয়াদ আলম, ঋষভ পন্ত (উইকেটকিপার), রবিচন্দ্রন অশ্বিন, কাইল জেমিসন, হাসান আলী ও শাহিন আফ্রিদি।