>এজবাস্টন টেস্ট এক অর্থে আম্পায়ারদের ভুল সিদ্ধান্ত দেওয়ার টেস্ট। ভুলের পর ভুল করে অনাকাঙ্ক্ষিত এক রেকর্ডেও ভাগ বসিয়েছেন আম্পায়ার জোয়েল উইলসন। আর জো রুট গড়েছেন সর্বোচ্চ সংখ্যকবার রিভিউ নিয়ে আম্পায়ারদের ভুল সিদ্ধান্ত ঠিক করার রেকর্ড। আম্পায়ারদের ভুলে ভরা এই এজবাস্টন টেস্ট ফিরিয়ে এনেছে বাংলাদেশের দুটি টেস্টেরও স্মৃতি
আম্পায়াররা যেহেতু মানুষ তাই তাঁদের ভুল করা নতুন কিছু না। খেলার মাঠে বিচারকের জায়গায় দাঁড়ানোর শুরু থেকে তাঁদের ভুল হচ্ছে, সামনেও হবে। তবে এখনকার প্রেক্ষাপট ভিন্ন। সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে আম্পায়ারদের হাতে রয়েছে অত্যাধুনিক সব প্রযুক্তি। এতে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে আম্পায়ারদের যেমন সুবিধা হচ্ছে তেমনি তাঁদের ভুলগুলোও ধরা পড়ছে। বিশ্বকাপের মতো টুর্নামেন্টেই তা দেখা গেছে। আম্পায়াররা যেন ভুলের পসরা সাজিয়ে বসেছিলেন! বাদ পড়ল না অ্যাশেজও। টেস্ট ক্রিকেটের বিজ্ঞাপণ হিসেবে ব্যবহৃত এ সিরিজেও ভুলের পর ভুল করে আম্পায়াররা গড়েছেন রেকর্ড!
এজবাস্টনে অ্যাশেজ সিরিজের প্রথম টেস্টে মাঠের আম্পায়ার ছিলেন জোয়েল উইলসন ও আলিম দার। কাল পঞ্চম দিনে সকালের সেশনে দুবার জো রুটকে আউটের ভুল সিদ্ধান্ত দেন উইলসন। দুবারই রিভিউ নিয়ে বেঁচেছেন রুট। এর মধ্যে শেষবার পিটার সিডলের বলে এলবিডব্লুর ভুল সিদ্ধান্ত দিয়ে অনাকাঙ্ক্ষিত রেকর্ডে ভাগ বসান উইলসন। এজবাস্টন টেস্টে পাঁচ দিন মিলিয়ে সেটি ছিল অষ্টমবারের মতো উইলসনের দেওয়া ভুল সিদ্ধান্ত এবং প্রতিবারই রিভিউ নিয়ে বেঁচে গেছেন ব্যাটসম্যানেরা।
ক্রিকেটে ডিসিশন রিভিউ সিস্টেম (ডিআরএস) চালু হয়েছে ১১ বছর আগে। এরপর কোনো টেস্ট ম্যাচে কোনো আম্পায়ারের সর্বাধিকসংখ্যক ভুল সিদ্ধান্ত রিভিউ নিয়ে পাল্টানোর তৃতীয় নজিরটি উইলসন গড়েছেন এজবাস্টন টেস্টে। তার আগে আম্পায়ারদের ভুলে ভরা দুটি টেস্টের সঙ্গেই জড়িয়ে আছে বাংলাদেশের নাম।
২০১৬ সালে চট্টগ্রামে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ঘরের মাঠে সিরিজের প্রথম টেস্টে ২২ রানে হেরেছিল বাংলাদেশ। সে ম্যাচে খুব কঠিন সময় পার করেছিলেন শ্রীলঙ্কার আম্পায়ার কুমার ধর্মসেনা। আউট-নট আউট মিলিয়ে মোট ১৬টি সিদ্ধান্ত দিয়েছিলেন ধর্মসেনা। এর মধ্যে তাঁর আটটি ভুল সিদ্ধান্ত রিভিউ নিয়ে পাল্টানো হয়। ডিআরএস আসার পর টেস্ট ম্যাচে কোনো আম্পায়ারের সর্বাধিকসংখ্যক ভুল সিদ্ধান্ত রিভিউ নিয়ে পাল্টানোর রেকর্ড ছিল এটি। তবে এ রেকর্ড ধর্মসেনা বেশি দিন একার দখলে রাখতে পারেননি। পরের বছরই তাতে ভাগ বসান ভারতের আম্পায়ার সুন্দরম রবি। আর সেটি ছিল ধর্মসেনার দেশ শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে বাংলাদেশের টেস্ট ম্যাচে।
২০১৭ সালে কলম্বোয় সিরিজের দ্বিতীয় টেস্ট ৪ উইকেটে জিতেছিল বাংলাদেশ। সে ম্যাচে সুন্দরম রবির আটটি ভুল সিদ্ধান্ত রিভিউ নিয়ে পাল্টেছিলেন খেলোয়াড়েরা। অন্য প্রান্তে রবির সঙ্গী ছিলেন আলিম দার। পাকিস্তানের অভিজ্ঞ এ আম্পায়ারকে এক প্রান্তে দাঁড়িয়ে অন্য প্রান্তের তাঁর সঙ্গীর ভুলে ভরা সিদ্ধান্তগুলো দেখতে হলো দুই ম্যাচে। তবে এজবাস্টন টেস্টে আলিম দারও ভুল সিদ্ধান্ত দিয়েছেন। তাঁর দুটি সিদ্ধান্ত রিভিউ নিয়ে পাল্টেছে অস্ট্রেলিয়া। উইলসনের সৌভাগ্য অস্ট্রেলিয়া তাঁর একটি নট আউটের সিদ্ধান্ত চ্যালেঞ্জ করে রিভিউ নিয়েও সফল হতে পারেনি। নইলে রেকর্ডটিতে শুধু ক্যারিবিয়ান এ আম্পায়ারের নামই লেখা থাকত।
লর্ডসে দ্বিতীয় টেস্টে মাঠে আম্পায়ারিংয়ের দায়িত্বে থাকছেন না উইলসন। থাকবেন টিভি আম্পায়ারের দায়িত্বে। আর এজবাস্টন টেস্টের স্মৃতি যত দ্রুত সম্ভব তিনি ভুলে যেতে চাইবেন। তবে জো রুটের জন্য এই টেস্ট দ্রুতই ভুলে যাওয়া অসম্ভব। সেটি শুধু ইংল্যান্ড যে হেরেছে সে জন্য নয়, আম্পায়ারকে ভুল প্রমাণ করতেও বেশ ব্যস্ত সময় কেটেছে তাঁর। আর তাতে ইংল্যান্ড অধিনায়ক নাম লিখিয়েছেন ইতিহাসে। টেস্ট ইতিহাসে রুটই প্রথম ব্যাটসম্যান যিনি এক ম্যাচে তাঁর বিপক্ষে দেওয়া আউটের সর্বোচ্চ চারটি ভুল সিদ্ধান্ত রিভিউ নিয়ে পাল্টেছেন। তবে এখানে একটি ব্যাখ্যা দাবি রাখে। রুটের আগে মঈন আলী এক ম্যাচে পাঁচবার রিভিউতে বেঁচেছেন। কিন্তু সেই পাঁচ রিভিউয়ের মধ্যে মঈন নিজে নিয়েছেন তিনটি, আর প্রতিপক্ষ দল দুটি। প্রশ্ন হলো কোন সে প্রতিপক্ষ?
কে আবার! সেই ২০১৬ চট্টগ্রাম টেস্ট, বাংলাদেশ!