সেঞ্চুরির বীজ বপন করেছিলেন তৃতীয় দিন বিকেলেই। বাংলাদেশের দ্বিতীয় ইনিংসের শুরুতেই অধিনায়ক মুমিনুল হকের ব্যাটিংয়ে ছিল দৃঢ়তার ছাপ।
আশপাশে উইকেটের পতন তাঁকে স্পর্শ করছিল না। মুমিনুল খেলছিলেন ঠিক মুমিনুল যেভাবে খেলেন সেভাবে। ইনিংসের শুরুতে এক-দুই রানে প্রতিপক্ষের অধিনায়ককে বিরক্ত করেন। বাউন্ডারির সুযোগ পেলে হাতছাড়া করেন না।
কাল বিকেলেও ৩১ রান যোগ করেন ঠিক এভাবে খেলেই। খরচা করেন মাত্র ৫০ বল। অথচ এই মুমিনুলই প্রথম ইনিংসে ৯৭ বল খেলে রান করেন মাত্র ২৬।
ওয়েস্ট ইন্ডিজ বোলিংয়ের বিপক্ষে যেন সেদিন এক-দুই রান নেওয়াই ভুলে গিয়েছিলেন বাংলাদেশের টেস্ট অধিনায়ক। কিন্তু দ্বিতীয় ইনিংসে খোলস ছেড়ে বেরিয়ে এলেন।
প্রথম ইনিংসে যে উইন্ডিজ বোলারদের বিপক্ষে কবজি ঘোরাতে হিমশিম খাচ্ছিলেন, তাঁদেরই সিঙ্গেলে সিঙ্গেলে ভাসিয়ে মুমিনুল করেছেন ক্যারিয়ারের দশম টেস্ট সেঞ্চুরি।
আজ ১৮২ বলে ১১৫ রান করা মুমিনুলই এখন বাংলাদেশিদের মধ্যে টেস্টে সর্বোচ্চ সেঞ্চুরির মালিক। কাল বিকেলে যে রাকিম কর্নওয়ালের টার্ন ও বাউন্সে তামিম ইকবাল-নাজমুল হোসেন আউট হন, মুমিনুল সেই কর্নওয়ালকেই লেগ সাইডে ঠেলে খেলেছেন স্বাচ্ছন্দ্যে। শর্ট মিড উইকেটের ডানে ও বাঁয়ে ঠেলে বের করেছেন বাউন্ডারি।
আর আরেক পাশে শ্যানন গ্যাব্রিয়েলের ‘বডি-লাইন’ বোলিং তো ছিলই। লেগ গালি রেখে কাল শেষবেলায় আগুনঝরা বোলিং করেছেন গ্যাব্রিয়েল। একবার আঙুলে চোটও পান এই বাঁহাতি। আজ সকালেও গ্যাব্রিয়েল সেই আগের দিনের বাউন্সার-তত্ত্ব চালিয়ে যান। বেশ কিছু বল মুমিনুলের পাঁজর ঘেঁষে যায়।
কিন্তু দিনের পঞ্চম বলেই ফুল লেংথের বল পেয়ে নিখুঁত অনড্রাইভে চার মারেন মুমিনুল। আজ দিনটা যে মুমিনুলের সেঞ্চুরির, চার মেরে সেই বার্তাই যেন দিলেন টেস্ট অধিনায়ক।
গ্যাব্রিয়েলের সঙ্গে কর্নওয়াল হতে পারতেন মুমিনুলের সবচেয়ে বড় ভীতি। কিন্তু গ্যাব্রিয়েলের বাউন্সার–বৃষ্টি থামল তিন ওভারের ছোট্ট স্পেলেই। অন্য প্রান্তে কর্নওয়ালকে মুমিনুল থিতু হতে দেননি এক-দুই রানে।
মুমিনুলের পুরো ইনিংসে ৭২ শতাংশ রানই এসেছে লেগ সাইডে বল ঠেলে। কবজির মোচড়ে লেগ সাইড ফিল্ডারের ফাঁকে বল ঠেলে কর্নওয়ালকে বিরক্ত করে ফেলেন। কখনো এক পা এগিয়ে, কখনো পেছনে গিয়ে ক্রিজের জায়গা ব্যবহার করে খেলেছেন। একবার তো মুমিনুলকে সিঙ্গেল বের করতে দেখে বল মাটিতে ছুড়ে বিরক্তি প্রকাশ করেন এই ক্যারিবীয় অফ স্পিনার।
আজ ফিফটি করতে মাত্র ৮৪ বল খরচা করেন মুমিনুল। পরের গল্পটা অবশ্য ভিন্ন ছিল। সেঞ্চুরি করতে খরচা করেছেন ১৭৩ বল, যা মুমিনুলের মন্থরতম সেঞ্চুরির তালিকায় শীর্ষে। কিন্তু একবারও মনে হয়নি মুমিনুল নিয়ন্ত্রণহারা। উল্টো মনে হয়েছে মুমিনুল দাপট দেখাচ্ছেন।
মুমিনুলের দাপটের ভিত ছিল এক-দুই রান।