মুসলিম ক্রিকেটারের অনুরোধে মদকে ‘না’ চেন্নাইয়ের

মঈন আলী।
ছবি: টুইটার

আইপিএলে ব্যাপারটা যে একেবারে নতুন, এমন নয়। ব্যাপারটা নতুন নয় আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে। মুসলিম ক্রিকেটার জার্সিতে মাদক সংশ্লিষ্ট কোম্পানির লোগো রাখেননি, তাঁর অনুরোধ মেনেও নিয়েছে তাঁর দল—এমন খবর তো কম দেখা যায়নি! আইপিএলে আবার তেমন এক খবর আলোচনায় আসছে ইংল্যান্ডের মুসলিম ক্রিকেটার মঈন আলী ও তাঁর দল চেন্নাই সুপার কিংসের (সিএসকে) কারণে।

মহেন্দ্র সিং ধোনির দল চেন্নাই মঈন আলীর অনুরোধ মেনে নিয়েছে। এবারের আইপিএলে ইংলিশ ক্রিকেটারের জার্সিতে মদ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানের লোগো না রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সিএসকে।

হাশিম আমলা অনেকবার এ কারণে শিরোনামে এসেছেন। কী দক্ষিণ আফ্রিকা, কী ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেট...কোনো জায়গায়ই জার্সিতে মদ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের লোগো রাখার ব্যাপারটা মেনে নেননি দক্ষিণ আফ্রিকান ব্যাটসম্যান। পানি খাওয়ার সময়ে দাঁড়িয়ে না খেয়ে বসে পানি খাওয়া, দলের শিরোপা উদ্‌যাপনের সময়ে শ্যাম্পেন উৎসবে না থাকা... হাশিম আমলা অনেকবারই এসব কারণে প্রশংসা কুড়িয়েছেন ইসলামপ্রিয় মানুষের।

একই পথে হেঁটেছেন পাকিস্তানের বাবর আজম, ফাহিম আশরাফ, কিংবা দক্ষিণ আফ্রিকা দলে আমলার সতীর্থ পাকিস্তানি বংশোদ্ভুত ইমরান তাহিরও।

ধোনিদের সঙ্গে চেন্নাইয়ে খেলবেন মঈন।
ছবি: আইপিএল

মঈন আলীও সে পথেরই পথিক। যে পথে অ্যালকোহলকে কখনো মেনে নেওয়া তো যায়ই-না, অ্যালকোহলের নামগন্ধও সহ্য করা যায় না। খেলা খেলার জায়গায় ঠিক আছে, কিন্তু সে পথে ইসলামের সঙ্গে সাংঘর্ষিক একটা পণ্যের প্রচারণায় নিজেদের জড়াতে রাজি নন মঈন-আমলারা।

হাশিম আমলার মতো মঈন আলীও সে কারণে অনেকবার খবরের শিরোনামে এসেছেন। এমনকি ইংল্যান্ডের ক্রিকেটের সবচেয়ে গর্বের মুহূর্ত ২০১৯ বিশ্বকাপ জয়ের পর তাঁর আচরণও কী কম প্রশংসা কুড়িয়েছে ইসলামপন্থী মানুষের! লর্ডসের গ্যালারিতে বিশ্বকাপ হাতে শ্যাম্পেন উৎসবে মেতেছিল ইংল্যান্ড ক্রিকেট দল। একে তো সেটি ছিল ওয়ানডেতে দেশটির প্রথম বিশ্বকাপ জয়, তারওপর নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে সেদিন ফাইনালটা উত্তেজনার চূড়ান্ত শিখরে চলে গিয়েছিল।

৫০-৫০ মিলিয়ে ১০০ ওভার শেষেও দুই দলকে আলাদা করা যায়নি, দুই দলের স্কোর শেষ হয় সমতায়। পরে ব্যবধান গড়ে দিতে নিয়ে আসা সুপার ওভার স্নায়ুক্ষয়ী উত্তেজনা শেষেও রয়ে গেল সমতায়। দুই দল সেখানেও করল সমান স্কোর। শেষ পর্যন্ত নির্ধারিত ৫০ ওভার আর সুপার ওভার মিলিয়ে কে কত বেশি বাউন্ডারি মেরেছেন, সেটির হিসাবে বিশ্বকাপ জিতে নেয় ইংল্যান্ড!

এমন ম্যাচের পর উত্তেজনায় একটু বাধ মানতে না চাওয়া ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে অযাচিত হলেও মানুষের আচরণ বিশ্লেষণে অস্বাভাবিক নয়। কিন্তু সেখানেও দারুণ নিয়ন্ত্রণের প্রদর্শনী ছিল মঈন আলীর আচরণে। লর্ডসের ব্যালকনিতে শিরোপা হাতে দল যখন শ্যাম্পেন উৎসবে মত্ত, মঈন নিজেকে গুটিয়ে রেখেছিলেন এক কোণে।

সেই মঈন আলী জার্সিতে একটা মদ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানের লোগো কীভাবে সহ্য করেন? ইংলিশ অলরাউন্ডার করেননি কখনো। তাহলে এবার সেটি আলোচনায় আসছে কেন? এত বছর বিরাট কোহলির রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুতে (আরসিবি) খেলার পর এবারই দল বদলে মহেন্দ্র সিং ধোনির চেন্নাই সুপার কিংসে (সিএসকে) গেছেন আলী। আরসিবিতে এত বছর জার্সিতে মদ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানের লোগো পরেননি, কোহলির দল সেটি সহজভাবেই নিয়েছিল। কিন্তু সিএসকে মানবে কি না, সে প্রশ্নটা যদি থেকে থাকে কারও, সেটির উত্তর—সিএসকেও মেনে নিয়েছে আলীর অনুরোধ।

সিএসকের জার্সিতে এসএনজে ১০০০০-এর লোগো ছিল, যেটি একটি নেশাজাতীয় পানীয় প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান। কিন্তু নিজের জার্সিতে সে লোগো না রাখার অনুরোধ করেন মঈন আলী। অনুরোধটা মেনে নিয়েছে সিএসকে। আগামী আইপিএলে তাই আলীর জার্সিতে দেখা যাবে না এসএনজে ১০০০০-এর লোগো।

চেন্নাইয়ের সূচি।
ছবি: টুইটার

ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটে সব টুর্নামেন্টে প্রায় সব দলেই মুসলিম ক্রিকেটারের দেখা মেলে। এঁদের মধ্যে আমলা-মঈনদের মতো ধর্মীয় বিধান মেনে চলা মুসলিম ক্রিকেটারও আছেন অনেকে। সে কারণে এভাবে জার্সিতে মদ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানের লোগো থাকলে মুসলিম ক্রিকেটারের পক্ষ থেকে সেটি সরিয়ে দেওয়ার অনুরোধ অনিয়মিত কিছু নয়।

এবারের আইপিএলের জন্য ৭ কোটি রূপিতে মঈনকে কিনেছে সিএসকে। এ পর্যন্ত আইপিএলে মঈনের ক্যারিয়ার অবশ্য খুব একটা আহামরি কিছু নয়। এখন পর্যন্ত ১৯ ম্যাচ খেলেছেন, তাতে ব্যাট হাতে রান করেছেন ৩০৯, বল হাতে উইকেট নিয়েছেন ১০টি।

আগামী ৯ এপ্রিল এবারের আইপিএল শুরু হলেও চেন্নাইয়ের প্রথম ম্যাচ এর পরের দিন। ১০ এপ্রিল মুম্বাইয়ের ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে দিল্লি ক্যাপিট্যালসের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে শুরু ধোনি-মঈনদের।