মোস্তাফিজদের কাছে হারের স্ক্রিনশট দেখে এখনো কষ্ট পান কোহলি

কখনোই আইপিএল শিরোপা জেতেননি কোহলিছবি: আইপিএল

ফাইনালটা কীভাবে হেরে গেলেন, এখনো বুঝে উঠতে পারেন না বিরাট কোহলি। তাঁর কাছে ব্যাখ্যার অতীত বলেই হয়তো অদৃষ্টের লিখন বলে সান্ত্বনা খোঁজার চেষ্টা করেন। কিন্তু সান্ত্বনা আর কতটুকুই-বা মেলে! একটু এদিক-ওদিক হলেই যে ফাইনাল তাঁর আইপিএল শিরোপার আক্ষেপ মিটিয়ে দিতে পারত, সেটি নিয়ে সান্ত্বনা এত সহজে মেলাও তো ভার।

২০১৬ আইপিএল ফাইনাল। টুর্নামেন্টজুড়ে চোখধাঁধানো ছন্দে কোহলি। তাঁর ৯৭৩ রান সেবারের আইপিএলের তো বটেই, আইপিএল ইতিহাসেই এক মৌসুমে সর্বোচ্চ! তাঁর দল বেঙ্গালুরু রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ফাইনালে উঠেছিল, ফাইনালের ভেন্যুও বেঙ্গালুরু!

শিরোপামঞ্চে ওঠার লড়াইয়ে কোহলিদের সামনে মোস্তাফিজুর রহমান, ডেভিড ওয়ার্নারের সানরাইজার্স হায়দরাবাদ। সানরাইজার্সের ছুড়ে দেওয়া ২০৯ রানের লক্ষ্যে শুরুটাও দারুণ হয়েছিল কোহলিদের। কিন্তু হঠাৎ কী যেন হয়ে গেল! সুরটা কোথাও কেটে গেল। কোহলিরা শেষ পর্যন্ত হেরে গেলেন ৮ রানে।

হারের কষ্টটা এখনো মেনে নিতে পারেন না গত মৌসুম শেষে বেঙ্গালুরুর অধিনায়কত্ব ছেড়ে দেওয়া কোহলি। সেই ফাইনালের হাইলাইটসের স্ক্রিনশট নাকি মাঝেমধ্যেই তাঁকে পাঠান কোহলির সে সময়কার বেঙ্গালুরু-সতীর্থ লোকেশ রাহুল। স্ক্রিনশট তো নয়, কোহলির কাছে সেসব হৃদয় খুঁড়ে বেদনা জাগানোর মোক্ষম অস্ত্র!

সানরাইজার্স হায়দরাবাদের হয়ে মোস্তাফিজের ২০১৬ আইপিএল কেটেছিল স্বপ্নের মতো
ছবি: বিসিসিআই

ব্যাটিং শক্তির বিচারে কী একটা দলই না সেবার গড়েছিল বেঙ্গালুরু! ফাইনালের ব্যাটিং লাইনআপই দেখুন—উদ্বোধনে সে সময়ে আরও বিধ্বংসী, ৩৬ বছরের ক্রিস গেইলের সঙ্গী কোহলি নিজে। তিনে সে সময়ে ৩১ বছর বয়সী এবি ডি ভিলিয়ার্স, চারে লোকেশ রাহুল। পাঁচে তখনো ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটে প্রাসঙ্গিক শেন ওয়াটসন।

কিন্তু বোলিংটা খুব একটা ভালো ছিল না বেঙ্গালুরুর। ব্যাটিংয়ে ভর করেই ফাইনালে ওঠা, কিন্তু নিজ মাঠে শিরোপা উৎসবের স্বপ্নের খুব কাছে গিয়েও আর স্বপ্ন ছোঁয়া হলো না। অধিনায়ক ডেভিড ওয়ার্নারের ৩৮ বলে ৬৯ রানের সঙ্গে ধাওয়ান-যুবরাজ-কাটিংদের মধ্য বিশ-ত্রিশের ইনিংসে বেঙ্গালুরুকে ২০৯ রানের লক্ষ্য দেয় হায়দরাবাদ।

কোহলির ঝড় (৩৫ বলে ৫৪) আর গেইলের তাণ্ডবে (৩৮ বলের ৭৬) শুরুটা স্বপ্নের মতোই হয়েছিল বেঙ্গালুরুর। ১১তম ওভারের তৃতীয় বলে গেইল আউট হওয়ার সময়ই উদ্বোধনী জুটিতে ১১৪ রান এসে গিয়েছিল! নিজের ফ্র্যাঞ্চাইজির মাঠেই হবে কোহলির আইপিএল শিরোপার অপেক্ষার অবসান—এমনটাই মনে হচ্ছিল ভবিতব্য।

আমার মনে হচ্ছিল সবকিছুই হয়তো কপালে লেখা ছিল।
২০১৬ আইপিএল ফাইনালে বেঙ্গালুরুর হারের ব্যাখ্যায় কোহলি

কিন্তু হলো কী? স্বপ্নিল শুরু থেকে হঠাৎ দুঃস্বপ্নে পতন!

পেছনে তাকিয়ে কোহলির মনে হয় এমনটাই হয়তো ভাগ্যলিখন ছিল। বেঙ্গালুরুর ফ্র্যাঞ্চাইজির পডকাস্টে বললেন, ‘আমার মনে হচ্ছিল সবকিছুই হয়তো কপালে লেখা ছিল। না হলে বেঙ্গালুরুতে ফাইনাল হচ্ছে, আমরা ও রকম দারুণ একটা মৌসুম কাটালাম, (রান তাড়ায়) ও রকম দারুণ শুরু পেলাম, যেখানে ৯ ওভারে কোনো উইকেট না হারিয়েই ১০০-এর বেশি রান হয়ে গেল, তারপর সেখান থেকে...।’

কোহলির কথাটা শেষ হয় না, কিন্তু কী বলতে চাইছিলেন বুঝে নিতে কষ্টও হয় না।

১৩তম ওভারে সেদিন দলকে ১৪০ রানে রেখে দ্বিতীয় ব্যাটসম্যান হিসেবে কোহলি ফিরলেন, বেঙ্গালুরুর পতনেরও শুরু সেখানেই। একে একে ফিরলেন ডি ভিলিয়ার্স, রাহুল, ওয়াটসনরা। কোহলির পর দলের কোনো ব্যাটসম্যান ২০-এর ঘরে যেতে পারেননি, কোনো জুটিতেও ২০ রান আসেনি।

শেষ পর্যন্ত প্রায় নিশ্চিত জয়ের অবস্থান থেকে ২০ ওভার শেষে বেঙ্গালুরু করতে পারল ৭ উইকেটে ২০০!

কোহলি-ডি ভিলিয়ার্স পারেননি বেঙ্গালুরুর শিরোপা-খরা ঘোচাতে
ফাইল ছবি

ফাইনালটা ভুলে যেতে চাইলেও পারেন না কোহলিরা। টিভিতে ম্যাচটার হাইলাইটস তো আসে! লোকেশ রাহুলও কষ্ট ভাগাভাগি করতে সেই ফাইনালের হাইলাইটসের স্ক্রিনশট পাঠান কোহলিকে, যা কোহলিরও হৃদয় খুঁড়ে বেদনা জাগায়।

‘এখনো যখন স্টারে (ভারতীয় টিভি চ্যানেল স্টার স্পোর্টস) ম্যাচটার হাইলাইটস আসে, কে এল (রাহুল) সেটির স্ক্রিনশট নেয়। বলে, হারটা এখনো ওকে কষ্ট দেয়। আসলেই দেয়’—কোহলির অসহায় স্বীকারোক্তি।

ফাইনালে উঠলে শিরোপা উদ্‌যাপনের প্রস্তুতি একটু-আধটু প্রস্তুতি তো সব দলই নিয়ে রাখে, বেঙ্গালুরুও রেখেছিল। সব পণ্ড হওয়ায় দলের সবার পাংশুবর্ণ মুখগুলো এখনো চোখে ভাসে কোহলির, ‘ম্যাচটার কথা মাঝেমধ্যেই মনে পড়ে। মনে পড়ে ওই জয়ের উদ্‌যাপনে আমরা যে দারুণ প্রস্তুতি নিয়েছিলাম, সেখানে কী হতাশ কিছু মুখ দেখেছিলাম। কত বড় করে উদ্‌যাপনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছিল, অথচ সেখানে বসে আমরা ভাবছিলাম, আমরা তো নিজেদের সবটুকুই দিলাম!’

তবু হলো না। অদৃষ্টের লিখন বলেই হয়তো!