‘যাযাবর’ ভিসে এখন নামিবিয়ার
শারজা, ২০১৯। পাকিস্তান সুপার লিগের (পিএসএল) ম্যাচে ড্যান ক্রিস্টিয়ানের ফুল লেংথের বলটা তুলে মারলেন ডেভিড ভিসে, নন-স্ট্রাইক প্রান্তে এবি ডি ভিলিয়ার্স। শেষ বলের ছক্কায় লাহোর কালান্দারসকে ম্যাচ জেতালেন ভিসে। ঠিক পরদিনই আবার ম্যাচ, এদিন শেষ ওভার করতে এলেন ভিসে। এবার শেষ বলে সরফরাজ আহমেদের ছক্কার শিকার তিনি নিজেই, লাহোরকে হারিয়ে দিল কোয়েটা গ্ল্যাডিয়েটরস।
এক দিনের ব্যবধানেই বদলে গেল ভিসের ‘ভূমিকা’! আগের দিন নায়ক, পরদিন খলনায়ক। ২০১৮ সালে করাচির হয়ে একটি ম্যাচ খেলেছিলেন ভিসে, তবে পিএসএলে নিয়মিত খেলা শুরু ২০১৯ সালেই। লাহোরে অবশ্য ঝটিকা ভ্রমণ হয়নি ভিসের। এরপর থেকে খেলছেন এ ফ্র্যাঞ্চাইজিতেই। লাহোর তাঁকে আপনই করে নিয়েছে।
কিন্তু একটা ক্রিকেট দল যদি কোনো ক্রিকেটারের ঘর হয়, ক্রিকেটার ডেভিড ভিসের ঘরটা তাহলে কোথায়, সে এক প্রশ্ন বটে। দক্ষিণ আফ্রিকার ঘরোয়া দল টাইটানস সব সময়ই হৃদয়ের খুব কাছে থাকবে ভিসের। স্বীকৃত ক্রিকেট ক্যারিয়ারটা যে তাঁর শুরু সেখানেই! ইংল্যান্ডের কাউন্টি দল সাসেক্সেই একসময় ক্যারিয়ার শেষ করার পরিকল্পনা করেছিলেন। দক্ষিণ আফ্রিকার হয়ে খেলেছেন ২০১৬ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ, তবে সে ক্যারিয়ারও লম্বা হয়নি। পাঁচ বছর পর যখন আরেকটি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ হচ্ছে, ভিসে খেলছেন নামিবিয়ার হয়ে। শুধু ঘরোয়া দল নয়, জাতীয় দলটাও বদলে গেছে এই অলরাউন্ডারের। ভিসেকে ক্রিকেটের যাযাবর বলবেন না, তো কাকে বলবেন!
২০১৭ সালে কলপ্যাক চুক্তিতে সাসেক্সে যোগ দিয়েছিলেন ভিসে, দক্ষিণ আফ্রিকার হয়ে তাঁর আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার কার্যত শেষ হয়ে যায় সেখানেই। তবে ব্রেক্সিটের পর তাৎপর্য হারিয়েছে কলপ্যাক। আগে এ চুক্তির অধীনে থাকা ক্রিকেটাররা ‘স্থানীয়’ হিসেবেই খেলতে পারতেন। ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন থেকে যুক্তরাজ্য বেরিয়ে যাওয়ার পর এখন ইংল্যান্ডের ঘরোয়া ক্রিকেটে ভিসেকে খেলতে হবে ‘বিদেশি’ ক্রিকেটার হিসেবে। সর্বশেষ মৌসুমে সাসেক্সে সে হিসেবেই খেলেছেন তিনি।
ব্রেক্সিট অবশ্য খুলে দিয়েছে প্রায় বন্ধ হয়ে যাওয়া ভিসের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের দুয়ারটাও। একসময়ের সতীর্থ অ্যালবি মরকেল এখন নামিবিয়ার কোচিং স্টাফের সদস্য, ভিসেকে তাঁদের হয়ে খেলার প্রস্তাবটা দিয়েছিলেন তিনিই। ব্যাপারটা অবশ্য দক্ষিণ আফ্রিকায় জন্ম নেওয়া ভিসের জন্য আকস্মিক ছিল না মোটেও। এর বছর দশেক আগেই তো নামিবিয়ার হয়ে খেলার সম্ভাবনা জাগিয়েছিলেন তিনি! একসময় দক্ষিণ আফ্রিকার ঘরোয়া ক্রিকেটে খেলত নামিবিয়া। ভিসের বাবার জন্ম নামিবিয়ায়, সে সূত্রে চাইলেই নাগরিকত্ব পেতে পারতেন। ভিসেকে তখনই দলে নিতে চেয়েছিল নামিবিয়া, তবে দক্ষিণ আফ্রিকা জাতীয় দলে ডাক পাওয়ার পর তাদের হয়ে খেলা হয়নি তখন।
তবে শেষ পর্যন্ত এবারের বিশ্বকাপের আগেই নামিবিয়ার হয়ে আন্তর্জাতিক অভিষেক হয়ে গেছে তাঁর। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে দুই দেশের হয়ে কারও খেলাটা অবশ্য নতুন ঘটনা নয়। এবারের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপেই ভিসে ছাড়া আছেন আরও দুজন ক্রিকেটার, যাঁরা বদলে ফেলেছেন দেশ। একসময় দক্ষিণ আফ্রিকার হয়ে খেলা রুলফ ভান ডার মারউই এখন নেদারল্যান্ডসের, হংকং ছেড়ে নিউজিল্যান্ডে পাড়ি জমিয়েছেন মার্ক চ্যাপম্যান।
আজ প্রথম পর্বে নিজেদের প্রথম ম্যাচে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ভিসের খেলার জোরালো সম্ভাবনাই আছে। আগে থেকেই ‘আন্ডারডগ’-এর তকমা পাওয়া নামিবিয়ার অনেকটুকু আশা ৩৬ বছর বয়সী এই অলরাউন্ডারকে ঘিরেই। ২২ অক্টোবর নামিবিয়া প্রথম পর্বের শেষ ম্যাচটা খেলবে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে। সে ম্যাচের ভেন্যু শারজা, যে শারজায় শেষ বলের ছক্কায় লাহোরের নায়ক হয়েছিলেন ‘যাযাবর’ ভিসে। ‘ঘর সেখানেই, যেখানে হৃদয়’ কথাটা সত্যি হয়ে থাকলে নামিবিয়াই তো আপাতত তাঁর ঘর। এবার তাই নামিবিয়ার নায়ক হওয়ার পালা ভিসের।