রশিদ খান উইকেট নেওয়ার মতো বোলার নয়

গুজরাটে যাওয়া রশিদ খানের অভাব অনুভব করছে না তাঁর সাবেক দল হায়দরাবাদছবি: আইপিএল

আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ১৪৩ ইনিংসে ২৯০ উইকেট। আইপিএলে ৮৩ ম্যাচে উইকেট ১০১টি। গড়ে একেকটা উইকেট পেতে তাঁর কত বল লাগে, সে হিসেবটাও একেবারে মন্দ নয়। শুধু টেস্টে ৪৫.১ ছাড়া কোনো জায়গায়ই তাঁর বোলিং স্ট্রাইক রেট ৩০-এর ওপরে নয়। তা-ও টেস্ট খেলেছেন এখন পর্যন্ত মাত্র পাঁচটি।

ওয়ানডেতে স্ট্রাইক রেট ২৬.১, আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে তো বোলিং রেটটা ঈর্ষণীয়—১২.৫! আইপিএলেও এ পর্যন্ত ছয় মৌসুমের মধ্যে তাঁর সর্বোচ্চ স্ট্রাইক রেট—২০১৯ আইপিএলে ২১.১৭। একেকটি উইকেটের পেছনে গড়ে ২০-এর বেশি বলই লেগেছে এই মৌসুম নিয়ে দুবার।

কার পরিসংখ্যান এটি? রশিদ খান! এই মৌসুমে গুজরাট লায়ন্সে যোগ দেওয়া আফগান স্পিনারকে তো সময়ের অন্যতম সেরা লেগ স্পিনার এমনি এমনিই বলা হয় না। কিন্তু আইপিএলে যে সানরাইজার্স হায়দরাবাদ ছেড়ে এবার গুজরাটে গেছেন রশিদ, সেই হায়দরাবাদেরই ব্যাটিং কোচ ব্রায়ান লারা যেন একটু খোঁচাই মারলেন রশিদকে। ওয়েস্ট ইন্ডিজ কিংবদন্তির চোখে রশিদ উইকেটশিকারি বোলার নন!

সানরাইজার্স হায়দরাবাদের সঙ্গে আছেন লারা
ছবি: টুইটার

২০১৭ থেকে শুরু করে গত বছর পর্যন্ত আইপিএলে রশিদের দল ছিল সানরাইজার্স হায়দরাবাদ। সেখানে পাঁচ মৌসুমে ৭৬ ম্যাচে ৯৩ উইকেট নিয়েছেন আফগান স্পিনার। এবার হায়দরাবাদ ছেড়ে দেওয়ার পর নিলামে ১৫ কোটি রূপিতে রশিদকে কিনে নেয় গুজরাট। একেবারে যে আহামরি করছেন রশিদ, তা নয়। এবারের আইপিএলে এখন পর্যন্ত ৭ ম্যাচে তাঁর উইকেট ৮টি, রান দিচ্ছেন ওভারপ্রতি গড়ে ৬.৫০ করে।

এই ৮ উইকেটের সর্বশেষ দুটি রশিদ পেয়েছেন গত পরশু কলকাতা নাইট রাইডার্সের বিপক্ষে ম্যাচে। তাতে একটা মাইলফলক পেরোনো হয়ে গেছে রশিদের—আইপিএলে ১০০ উইকেট!

মাইলফলকটা রশিদের আগে আরও ১৫ জন পেরিয়েছেন, আইপিএলের বিদেশি কোটার খেলোয়াড়দের মধ্যে এই মাইলফলকে রশিদ চতুর্থ। এর আগে কীর্তিটা ছিল ডোয়াইন ব্রাভো (১৫৮ ম্যাচে ১৭৯ উইকেট), লাসিথ মালিঙ্গা (১২২ ম্যাচে ১৭০ উইকেট) ও সুনীল নারাইন (১৪২ ম্যাচে ১৪৯ উইকেট)। ভারতীয় ও বিদেশি মিলিয়ে ১৬ জনের মধ্যে আইপিএল ইতিহাসে দ্রুততম ১০০ উইকেটের তালিকায় ভারতের অমিত মিশ্র ও আশীষ নেহরার সঙ্গে যৌথভাবে তৃতীয় রশিদ।

আইপিএলে ১০০ উইকেটের মাইলফলক পেরিয়ে গেছেন রশিদ
ছবি: আইপিএল

কিন্তু এমন একজনকে নিয়েই লারার কথা, রশিদ উইকেট নেওয়ার মতো বোলার নন। হায়দরাবাদ এখন রশিদকে আর মিস করে কি না—প্রশ্নে ওয়েস্ট ইন্ডিজ কিংবদন্তি ব্যাটসম্যানের উত্তর, ‘রশিদ খানকে আমি অনেক সম্মান করি, তবে আমার মনে হচ্ছে আমরা এখানে দলে দারুণ একটা সমন্বয় পেয়ে গেছি। রশিদ খান এমন একজন ছিল যাকে প্রতিপক্ষ ব্যাটসম্যানরা দেখেশুনে খেলত, ও ঠিক সে অর্থে উইকেটশিকারি নয়।’

তাহলে এখন হায়দরাবাদে রশিদের অভাব ভুলিয়ে দিচ্ছেন কে? গত পরশু রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুর বিপক্ষে হায়দরাবাদের জয়ের পর ভারতীয় টিভি চ্যানেল স্টার স্পোর্টসের সঙ্গে আলাপে সেটিও তুলে ধরেছেন লারা, ‘হ্যাঁ, ওর (রশিদের) ওভারপ্রতি ৫.৫-৬ ইকোনমি অসাধারণ কিছু। কিন্তু আপনি যখন দেখবেন ওয়াশিংটন সুন্দরের মতো একজন বোলার প্রথম ছয় ওভারেই বল ঘুরিয়ে বাঁহাতি ব্যাটসম্যানদের জন্য ভেতরের দিকে ঢোকাচ্ছে...ও দলের জন্য একটা সম্পদ। ওর (সুন্দর) চোটের পর সুচিথ (জগদীশ সূচিত) বদলি হিসেবে এসেছে, সে-ও দলের সম্পদ।’

রশিদকে বাদ দিয়ে এবার অন্য কৌশলেই মাঠে নামছে হায়দরাবাদ। এখন পর্যন্ত মূলত চার পেসার নিয়েই খেলছে কেইন উইলিয়ামসনের দল, এর মধ্যে ভুবনেশ্বর কুমার, মার্কো ইয়ানসেন আর টি নটরাজন তো আলো ছড়াচ্ছেনই, তবে সবচেয়ে বেশি আলোচনা গতির ঝড় তোলা উমরান মালিককে নিয়ে। ‘এ পর্যন্ত প্রত্যেক ম্যাচেই আমরা চার ফাস্ট বোলার নিয়ে নেমেছি। অবশ্যই এরপর পিচ বদলে যাবে, টুর্নামেন্টের পরের দিকে হয়তো ঘাস কমে যাবে উইকেটে’—লারার বিশ্লেষণ।

চেন্নাইয়ের বিপক্ষে ব্যাট হাতেও ঝড় তোলেন রশিদ
ছবি: আইপিএল

উইকেট বদলে গেলে কী করতে হবে, সেই পরিকল্পনাও প্রস্তুত করে রেখেছে হায়দরাবাদ। পরিকল্পনাটা জানা গেছে লারার কাছে, ‘আমাদের শ্রেয়াস গোপাল (লেগ স্পিনার) আছে, যদিও সে এখনো কোনো ম্যাচে খেলেনি। আইপিএলে ওর হ্যাটট্রিক আছে। আমার মনে হয় আইপিএলে দেখানোর মতো আরও অনেক কিছুই আমাদের ভান্ডারে আছে। এ নিয়ে আমি ভাবছি না।’

তাহলে রশিদ খান এবারের হায়দরাবাদ দলে থাকলে কী হতো? সুযোগই পেতেন না রশিদ? লারা মোটেও তা বলছেন না, বরং শেষ কথাটায় রশিদের প্রতি তাঁর সম্মানই ঝরে পড়েছে, ‘ও যদি এই দলের হতো, তাহলে হয়তো আমরা ৭ ম্যাচের ৭টিই জিততাম!’

এখন পর্যন্ত ৭ ম্যাচের ৫টি জিতে ১০ পয়েন্ট নিয়ে তালিকায় দ্বিতীয় হায়দরাবাদ। শীর্ষে কারা? রশিদের গুজরাট টাইটানস, ৭ ম্যাচে ৬ জয়ে ১২ পয়েন্ট। দুই দলের পরের ম্যাচে প্রতিপক্ষ? বুধবার বাংলাদেশ সময় রাত ৮টায় ম্যাচটা রশিদের সাবেক আর বর্তমান দলেরই, হায়দরাবাদ বনাম গুজরাট।