লিটন-মাহমুদউল্লাহর প্রতিরোধে দিন শেষে স্বস্তিতে বাংলাদেশ
সকালটা ছিল দুঃস্বপ্নের। বিকেলটা সেখানে আক্ষেপের। মেহেদি হাসান মিরাজকে ধরলে ৯ জন ব্যাটসম্যান নিয়ে নামলেও হারারেতে একমাত্র টেস্টের প্রথম দিন ব্যাটিং বিপর্যয়ে পড়েছে বাংলাদেশ।
৭ম উইকেটে লিটন দাস ও মাহমুদউল্লাহর ১৩৮ রানের জুটির পরও তারা প্রথম দিন শেষ করেছে ৮ উইকেটে ২৯৪ রান নিয়ে। লিটন ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরির ৫ রান দূরত্বে থেমেছেন। ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারির পর প্রথম টেস্ট খেলতে নামা মাহমুদউল্লাহ দিন শেষ করেছেন ৫৪ রানে অপরাজিত থেকে। আলোকস্বল্পতায় এদিন ৮৩ ওভারের বেশি হয়নি খেলা।
শুরুতে পেস সহায়ক কন্ডিশন থাকলেও টসে জিতে ব্যাটিংয়ের ‘সাহসী’ সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন বাংলাদেশ অধিনায়ক মুমিনুল হক। তবে বাংলাদেশের টপ-অর্ডারের ওপর চড়াও হয়েছিলেন ব্লেসিং মুজারাবানি। চোটের কারণে বাইরে থাকা তামিম ইকবালের বদলে সাইফ হাসানের সঙ্গে ওপেনিংয়ে এসেছিলেন সাদমান ইসলাম। তবে তাদের ওপেনিং জুটি টিকেছে ৫ বল। লেগ-বাইয়ে একটি চারের পর মুজারাবানির মোটামুটি ফুল লেংথের বলে ভুল লাইনে খেলতে গিয়ে বোল্ড হয়েছেন সাইফ। শুরু থেকেই বেশ নড়বড়ে মনে হচ্ছিল তাঁকে।
বাংলাদেশের বিপর্যয় আরও বেড়েছে মুজারাবানির তৃতীয় ওভারে। এবার ক্রিজে আটকে থেকে খোঁচা মেরে স্লিপে ধরা পড়েছেন নাজমুল হোসেন শান্ত। অভিষিক্ত ডিওন মায়ার্স নিয়েছেন সে ক্যাচ। মুজারাবানির সঙ্গে রিচার্ড এনগারাভার বাউন্স আর মুভমেন্টে বাংলাদেশ ধুঁকছিল তখন। ১০ রানেই তারা হারিয়েছিল ২ উইকেট।
এরপর মুমিনুল ও সাদমানের জুটি পেরিয়েছিল পঞ্চাশ। তবে আশা জুগিয়েও ইনিংস বড় করতে পারেননি সাদমান। শুরুটা ধীর গতির করার পর একটু মেলে ধরেছিলেন নিজেকে। শেষ পর্যন্ত এনগারাভার বলেই ক্রিজে আটকে থেকে, তিনিও খোঁচা দিয়ে ধরা পড়েছেন স্লিপে। এর আগে ৪ চারে করেছেন ২৩ রান।
প্রথম সেশনের মতো দ্বিতীয় সেশনেও তিনটি উইকেট হারিয়েছে বাংলাদেশ। মধ্যাহ্নবিরতির পর মুমিনুল হকের ফিফটিতে বাংলাদেশ ভালো একটা অবস্থানের দিকে এগোতে থাকলেও ৬ বলের ব্যবধানে ২ উইকেট হারিয়ে হোঁচট খেয়েছিল আবার। ব্লেসিং মুজারাবানির বলে এলবিডব্লিউ হয়েছেন মুশফিকুর রহিম, পরের ওভারে ভিক্টর নিয়াউচির বলে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়েছেন সাকিব আল হাসান।
আঙুলের চোট নিয়ে একটু অস্বস্তিতে থাকা মুশফিকুর এর আগে ড্রাইভ করতে গিয়ে এজড হয়েছিলেন, তবে সেটি ফিল্ডারের নাগালের বাইরে দিয়ে হয়েছিল বাউন্ডারি। এরপর মুজারাবানির বাইরে থেকে ঢোকা বল ছেড়ে দিয়েছিলেন তিনি। তবে সেটি লেগেছিল তার পেছনের পায়ে। যদিও খোলা চোখে বেশ উঁচু মনে হচ্ছিল সেটিকে, তবে আম্পায়ার ল্যাংটন রুজেরে দিয়েছেন আউট। স্বাভাবিকভাবেই সেটি সহজে মানতে পারেননি মুশফিক, মুখভঙ্গি বলছিল--অবাকই হয়েছেন তিনি। তবে এ টেস্ট ডিআরএস নেই বলে কিছু করারও ছিল না তার। আউট হওয়ার আগে তিনি করেছেন ৩০ বলে ১১ রান।
সাকিব অবশ্য হাঁটা দিয়েছেন নিজে থেকেই। নিয়াউচির বাইরের বলে ড্রাইভ করতে গিয়েছিলেন তিনি, হয়েছেন কট-বিহাইন্ড। ক্রিজে এসেই একটা ক্যাচের মতো তুলেছিলেন, সে দফা বাঁচলেও টেস্ট ক্রিকেটে ফেরার দিনে ৫ বলে ৩ রান করেই ফিরতে হয়েছে তাকে।
বাংলাদেশের আশা হয়ে ছিলেন অধিনায়ক মুমিনুল। তিনি এদিন পসরা সাজিয়েছিলেন ফ্লিক শটের। মুজারাবানির বলে সে শটেই পৌঁছেছিলেন ক্যারিয়ারের ১৪ তম ফিফটিতে। মধ্যাহ্নবিরতির পর বেশ আক্রমণাত্মক ছিলেন তিনি। ফিফটির পরপরই একটা ক্যাচ তুলেছিলেন মুমিনুল, তবে মিড-অনে থাকা রিচার্ড এনগারাভা সেটি বুঝতেই পারেননি।
আরেকটি সেঞ্চুরির দিকে এগোতে থাকলেও মুমিনুল থেমেছেন ৭০ রানেই। ভিক্টর নিয়াউচির গুডলেংথের বলে কাট করতে গিয়ে গালিতে ক্যাচ দিয়েছেন তিনি। ইনিংসে সব মিলিয়ে মেরেছেন ১৩টি চার।
বাংলাদেশকে এরপর টেনেছেন লিটন ও মাহমুদউল্লাহ। লিটন নেমে দারুণ দুটি কাভার ড্রাইভে মেরেছেন চার। অবশ্য এরপর নিজেকে খানিকটা গুটিয়েই নিয়েছেন তিনি। এরপর মেরেছেন আরও দুটি চার। লিটন এদিন খেলেছেন দারুণ সব শট। ড্রাইভ, স্কয়ার কাট, সুযোগ পেলে পুল-সবই। ইনফ্রন্ট অফ স্কয়ারে লিটন যেমন দারুণ ছিলেন, তেমনি বিহাইন্ড দ্য স্কয়ারেও ছিলেন কার্যকর। ফিফটি পূর্ণ করেছিলেন ৮৬ তম বলে, মিলটন শুমবাকে স্লগ সুইপ করে চার মেরে। ঠিক পরের বলেই পুল করে চার মেরেছিলেন আরেকটি। ডোনাল্ড তিরিপানোকে চার মেরে নড়বড়ে নব্বইয়ে গিয়েছিলেন, এরপর আগের সর্বোচ্চ ৯৪ রান পেরিয়ে গিয়েছিলেন। তবে সেই তিরিপানোকেই পুল করতে গিয়ে স্কয়ার লেগে ধরা পড়েছেন তিনি ৯৫ রানে। ঠিক পরের বলেই মেহেদি হাসান মিরাজও হয়েছেন এলবিডব্লিউ।
৮০ ওভারের পরই দ্বিতীয় নতুন বল নিয়েছে জিম্বাবুয়ে। তবে তাসকিন আহমেদ ও মাহমুদউল্লাহর জুটি অবশ্য আছে অবিচ্ছিন্নই। ২০১৮ সালের পর প্রথম আটে নামা মাহমুদউল্লাহ পেয়েছেন ক্যারিয়ারের ১৭ তম ফিফটি। প্রায় দুই বছর চার মাস ও ৮ ইনিংস পর টেস্টে ফিফটি পেলেন তিনি। লিটনকে দারুণ সঙ্গ দিয়েছেন এদিন তিনি। আপাতত অবশ্য তাকে সঙ্গ দেওয়ার মতো বাকি শুধু তাসকিনের পর শুধু ইবাদত হোসেন।