‘শত্রু’ ভারতের জন্য প্রার্থনা বাবরের, ঐক্যের ডাক

বাবর আজমের প্রার্থনা ভারতের জন্য।ছবি: এএফপি

রাজনীতিতে চিরশত্রু। বেশ কয়েকবার রক্তক্ষয়ী যুদ্ধেও জড়িয়েছে দুই দেশ। রাজনীতি-কূটনীতির ময়দানের শত্রুতা খেলা থেকে শুরু করে বিভিন্ন জায়গায় এনে দেয় যুদ্ধংদেহী মনোভাব। হ্যাঁ, ভারত আর পাকিস্তানের মধ্যকার শত্রুতার কথাই হচ্ছে। দুটি দেশের গন্তব্য উল্টো মেরুতে হলেও করোনার ভয়াবহ সময় যেন দুই ‘শত্রু’কে এক জায়গায় মিলিয়ে দিচ্ছে।

করোনার ভয়াবহ ছোবলে ক্ষতবিক্ষত ভারত। এক সপ্তাহ ধরে প্রতিদিন গড়ে তিন লাখ করে মানুষ সেখানে করোনায় আক্রান্ত হচ্ছেন। বিশাল জনগোষ্ঠীর ভারত করোনাকালে পড়েছে নানাবিধ সংকটে। এত করোনায় আক্রান্ত মানুষের চাপ নিতে পারছে না দেশটির স্বাস্থ্যব্যবস্থা। অক্সিজেন, আইসিইউ, হাসপাতাল শয্যা—সবকিছুরই ভয়াবহ সংকট। ভারতের বিভিন্ন হাসপাতালে অক্সিজেনের অভাবে মৃত্যু হয়েছে করোনারোগীদের। ব্যাপারটা এমন দাঁড়িয়েছে যে বিদেশের সাহায্য জরুরি হয়ে পড়েছে ভারতের জন্য। এমন একটা পরিস্থিতিতে ভারতের পাশে দাঁড়ানোর কথা বলছে ‘শত্রু’ পাকিস্তানও।

সরকারি তরফ থেকে আগেই ভারতকে সাহায্য করার প্রস্তাব দিয়েছে পাকিস্তান। ক্রিকেটের তারকারাও ভারতের এই সংকটময় পরিস্থিতিতে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেওয়ার কথা বলছেন। শোয়েব আখতার, শোয়েব মালিক আগেই ভারতের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন সবাইকে। এবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পাকিস্তান ক্রিকেট দলের অধিনায়ক বাবর আজম প্রার্থনা জানিয়েছেন ভারতীয় জনগণের জন্য।

বাবর নিজেও সাম্প্রতিককালে ভারত-পাকিস্তান শত্রুতার অন্যতম অনুষঙ্গ। ভারতের অধিনায়ক বিরাট কোহলির সমানে সমান হিসেবে পাকিস্তানি ক্রিকেটপ্রেমীরা বাবরকে দাঁড় করাতে চান সব সময়। সেটি করা যেতেই পারে। বাবর প্রতিভাবান। এ মুহূর্তে বিশ্বের সেরা পাঁচ ব্যাটসম্যানের একজন তাঁকে বলাই যায়। কিন্তু সেটি করতে গিয়ে বাড়াবাড়িটা প্রায়ই হয়ে যায়। যাঁর সঙ্গে তুলনা, তাঁকেই ছোট করার একটা ব্যাপার এসে যায়। কিন্তু টুইটারে করোনা উপদ্রুত ভারতের জন্য বাবরের প্রার্থনা জানানো পোস্টটি কিন্তু অন্য বার্তাই দিচ্ছে। রাজনীতি, কূটনীতি কিংবা মাঠ—শত্রুতা যেখানেই থাকুক, মানবতার খাতিরে ভারত-পাকিস্তানের মানুষ এক।

বাবর টুইটে দুবাইয়ের সুউচ্চ ভবন বুর্জ খলিফার একটি ছবি দিয়েছেন। বুর্জ খলিফার গায়ে বিভিন্ন সময় আলোর খেলায় বিভিন্ন বার্তা মানুষকে দেওয়া হয়। বুর্জ খলিফাকে কোনো নির্দিষ্ট দেশের পতাকার রঙে আলোকিত করে, সেই দেশের বিশের কোনো দিবসে শুভেচ্ছা জানানো হয়। ভারতে করোনার এই ভয়াবহ পরিস্থিতিতে বুর্জ খলিফার গায়ে ‘স্টে স্ট্রং ইন্ডিয়া’ লিখে বার্তা দেওয়া হয়েছে। বাবর সেই বার্তা লেখা বুর্জ খলিফার ছবি পোস্ট করে লিখেছেন, ‘এমন একটা বিপর্যয়কর সময় ভারতের জনগণের জন্য প্রার্থনা করছি। এখন সময় এক হওয়ার, এক হয়ে প্রার্থনা করার।’

বাবর কেবল প্রার্থনাই করেননি। সবাইকে সুরক্ষাবিধি ঠিকভাবে মেনে চলারও আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি লিখেছেন, ‘আমি সবাইকে অনুরোধ করছি সরকারি স্বাস্থ্য সুরক্ষাবিধি কঠোরভাবে মেনে চলার। এটি আমাদের সবাইকে নিরাপদে রাখার জন্যই। সবাই মিলে এটা আমরা করে দেখাতে পারি খুব সহজেই।’ বাবর কেবল টুইটারেই নয়, ইনস্টাগ্রামেও এটি পোস্ট করেছেন।

দুই প্রতিবেশী দেশকে যেন করোনা পরিস্থিতি খুব কাছাকাছি নিয়ে এসেছে। অথচ, দুই দেশের সম্পর্ক এত বাজে যে দীর্ঘদিন ক্রিকেট মাঠে দ্বিপক্ষীয় কোনো সিরিজে এই দুই দেশ মুখোমুখি হয়নি। যেকোনো বৈশ্বিক প্রতিযোগিতায়ও দুই দেশের শত্রুতা পত্রিকায় বড় শিরোনাম পায়। করোনার ভয়াবহতার মধ্যেও দুই দেশের এই কাছে আসাটা বাকি বিশ্বের জন্য স্বস্তি না ছড়িয়ে পারে না।