সমালোচনা ভুলে খোলা মনে আজ খেলুন মাহমুদউল্লাহরা

পারফরম্যান্সই পারে সমালোচকদের মুখ বন্ধ করতেছবি: বিসিবি

টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে এখনো পর্যন্ত বাংলাদেশ ক্রিকেট দলকে সবচেয়ে বেশি যা ভোগাচ্ছে, তা হলো ‘সমালোচনা’। সংবাদ সম্মেলনে এসে ব্যাপারটি নিয়ে কথা বলেছেন মাহমুদউল্লাহ, মুশফিকুর রহিমের মতো তারকা ক্রিকেটাররা। তাঁরা যে ব্যাপারটিতে বিব্রত, বিরক্ত, সেটি ফুটে উঠেছে তাদের কথায়, অভিব্যক্তিতে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, সমালোচনা কি আসলেই বড় সমস্যা বাংলাদেশ দলের জন্য।

জাতীয় দল খারাপ খেললে সমালোচনা হবে—এটাই স্বাভাবিক। অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহও সেটিই মনে করেন। তিনিও সমালোচনার পক্ষে, কিন্তু সেটি হতে হবে গঠনমূলক কিংবা স্বাস্থ্যকর। সমালোচনার নামে কেউ যদি ক্রিকেটারদের ‘ছোট’ করে, সেটিতেই সমস্যা তাঁর ও তাঁর দলের। মুশফিকুর রহিম তো সমালোচকদের আয়নায় নিজেদের মুখ দেখতে বলেছেন। তাদের কথাবার্তাতে স্পষ্ট যে সমালোচনাটা তাঁদের যথেষ্ট মনঃপীড়ার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

খোলা মনে খেলুক আজ বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা
ছবি: বিসিবি

মনঃপীড়া অন্য জায়গায়। নয়তো বাইরের সমালোচনা এতটা স্পর্শ করে কীভাবে বিশ্বকাপ খেলতে যাওয়া একটা দলকে। পাপুয়া নিউগিনির বিপক্ষে ম্যাচের পর সংবাদ সম্মেলনে এমন একটা প্রশ্ন করা হয়েছিল মাহমুদউল্লাহকে। উত্তরে তিনি বলেছিলেন, ‘আমাদেরও সবকিছু স্পর্শ করে। আমরাও মানুষ। আমাদেরও অনুভূতি কাজ করে। আমাদের পরিবার আছে। আমাদের বাবা-মায়েরা টিভির সামনে বসে থাকে আমাদের খেলা দেখার জন্য। সন্তানেরা থাকে। তারা মন খারাপ করে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম তো এখন সবার নাগালে। সবারই মোবাইল ফোন আছে।’

স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে হারের পর ক্রিকেটারদের আত্মনিবেদন নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল বলেই ক্রিকেটাররা কষ্ট পেয়েছেন। সেই সঙ্গে যুক্ত হয়েছে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ১৭১ রান করেও হারের আক্ষেপ। খেলোয়াড়দের ফর্মও একটা বড় কারণ। এমন সময় আসে, যখন কিছুতেই কিছু হয় না। বাংলাদেশ দলও পড়েছে তেমনই একটা চক্রব্যুহের মধ্যে। মাহমুদউল্লাহর অধিনায়কত্ব নিয়ে কথা উঠল সেদিন। সবকিছু মিলিয়েই সমালোচনার জাল বিস্তৃত বাংলাদেশ দলের দিকে।

সমালোচকদের মুখ বন্ধ করুক বাংলাদেশ
ছবি: বিসিবি

এখন কেবল পারফরম্যান্সই পারে সমালোচকদের মুখ বন্ধ করে দিতে। বাংলাদেশের ক্রিকেটাররাও সেটি জানেন। আর সেই মুহূর্তটি আসতে পারে আজই ইংল্যান্ডের বিপক্ষেই। খেলোয়াড়েরা দেখুন না চেষ্টা করে তাঁরা সেটি পারেন কিনা!

টি-টোয়েন্টির এক নম্বর দল ইংল্যান্ড। এ দলের বিপক্ষে ‘হারানোর কিছু নেই’ ভেবেই খেলতে হবে বাংলাদেশকে। স্কটল্যান্ড যেভাবে ‘ভয়ডরহীন’ ক্রিকেট খেলে বাংলাদেশকে হারিয়েছিল, আজ এউইন মরগানদের বিপক্ষে সেভাবেই খেলুক বাংলাদেশ। সমালোচকেরা সমালোচনা করবেন, কিন্তু খেলোয়াড়েরা যদি এসব নিয়ে পড়ে থাকেন, তাহলে তো সমস্যা। একটি-দুটি ম্যাচ খোলা মনে খেলুন তারা। মানুষ সেটিই চায়।

নিজেদের সর্বোচ্চটা দিক বাংলাদেশ আজ
ছবি: বিসিবি

আমরাও ক্রিকেটারদের একটু নিশ্বাস নেওয়ার সুযোগ দিই। আমরাও মাথায় রাখি, আমরা যাদের সমালোচনা করছি, তারাই মাঠে খেলছে। খেলাটা শেষ করে আসতে হচ্ছে তাদেরই। কোনো খেলোয়াড়ই হারতে চায় না। কেউই ইচ্ছা করে ক্যাচ ফেলে না, কেউই ইচ্ছে করে অধিনায়কত্বে ভুল করে না। সবাই নিজেদের সর্বোচ্চটা দিয়েই চেষ্টা করে। দল হারলে ক্রিকেটারদের কষ্টটা একজন সাধারণ ক্রিকেটপ্রেমীদের চেয়ে কম নয়, বরং বেশিই। আমরা খেলোয়াড়দের একটু স্বাধীনভাবে, নিজেদের মতো করে খেলার সুযোগ করে দিই।

সমালোচনার পাশাপাশি ক্রিকেটারদের পাশে থাকাটাও এ মুহূর্তে জরুরি। সবাইকে পাশে পেলেই ক্রিকেটাররা যে দেশকে গর্বিত করতে পারেন, এমন উদাহরণ অনেক আছে।