সাংবাদিকদের ফাঁকি দিয়ে হোটেলে সাকিব, প্র্যাকটিস উতরে গেলে খেলছেন চট্টগ্রাম টেস্টে

প্র্যাকটিসে ভালো বোধ করলে চট্টগ্রামে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে প্রথম টেস্টে খেলবেন সাকিব আল হাসানফাইল ছবি

শুক্রবার রাত আটটা থেকে র‍্যাডিসন ব্লু হোটেলের সামনে একটা জটলা। ক্যামেরা হাতে ফটোসাংবাদিকদের অপেক্ষা, টিভি ক্যামেরা হাতে ভিডিওগ্রাফার, সঙ্গে সাংবাদিক তো আছেই। অপেক্ষা সাকিব আল হাসানের জন্য। সময় যায়, অপেক্ষার প্রহর বাড়ে, সঙ্গে একটু বিরক্তিও—কখন আসবেন সাকিব আল হাসান?

সাকিব আল হাসান আর আসেন না। অপেক্ষা করতে করতে একসময় সেই জটলাটা ভেঙে যায়। সাংবাদিক, ফটোসাংবাদিক, টিভি ক্যামেরাম্যানরা ফিরে যান নিজ নিজ ঠিকানায়। সাকিব কি তাহলে শেষ পর্যন্ত এলেনই না? কিন্তু সাকিব ঢাকা থেকে চট্টগ্রামের বিমানে উঠেছেন বলে তো নিশ্চিত খবর ছিল। চট্টগ্রাম বিমানবন্দরে নেমেছেন, সেই খবরও এসেছে সেই সাংবাদিককুলের কাছে। তাহলে সাকিব গেলেন কোথায়?

সাকিব আল হাসান চট্টগ্রাম টেস্টের জন্য বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কা দলের ঠিকানা র‍্যাডিসন ব্লুতেই এসেছেন। কিন্তু হোটেলের মূল প্রবেশদ্বারে সাংবাদিকদের জমায়েতের খবর পেয়ে তিনি ঢুকে গেছেন পেছনের বিকল্প প্রবেশদ্বার দিয়ে। সাংবাদিকদের তাই অপেক্ষাই সার। সাকিবের দেখা কেউ আর পাননি।

সাকিব পুরো ফিট থাকলেই শুধু তাঁকে চট্টগ্রাম টেস্টে চান বাংলাদেশের কোচ রাসেল ডমিঙ্গো
ফাইল ছবি

চট্টগ্রাম টেস্ট কাভার করতে র‍্যাডিসন ব্লুতেই উঠেছি। সাকিবের সঙ্গে হোয়াটসঅ্যাপ বার্তা বিনিময় চলছিল সন্ধ্যার পর থেকেই। কিন্তু লবিতে বসে থাকার পরও কখন হোটেলে ঢুকে গেছেন বুঝতেই পারিনি। রাত সাড়ে ১০টার দিকে যখন তাঁকে ফোনে ধরলাম, পুরো ব্যাপারটা নিয়ে সাকিব যে খুব মজা পেয়েছেন, তা পরিষ্কার বোঝা গেল তাঁর কথায়।

এত সাংবাদিক আপনার অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে, আপনি কোন পথে হোটেলে ঢুকে গেলেন, কেউ তো টেরই পেল না, জাদুমন্ত্র জানেন নাকি? প্রশ্নটা শুনে সাকিব খুব হাসলেন, ‌‘আর বলবেন না, আমাকে যে ওরা কোন দিক দিয়ে হোটেলে ঢুকিয়ে দিল, নিজেও বুঝতে পারিনি। হঠাৎ দেখি, আমি একটা বিয়ের অনুষ্ঠানে। আমি বললাম, বিয়ের সব খাওয়া না খাই, অন্তত ফিরনিটা তো খাওয়া উচিত।’ বলার পর আবার হাসি।

করোনামুক্ত সাকিব আল হাসান
ফাইল ছবি

ঘটনা হলো, র‍্যাডিসন ব্লু হোটেলে রাতে একটা বিয়ের রিসেপশন চলছিল। সাকিবকে হোটেলে ঢোকানো হয়েছে সেটির মধ্য দিয়েই। বিয়েতে আমন্ত্রিত অতিথিদের জন্য যা বিষম এক চমকই ছিল। সাংবাদিকদের মনোযোগ, ক্যামেরার ফ্ল্যাশে সাকিবের অনেক আগেই অভ্যস্ত হয়ে গেছেন। এটি সাকিব উপভোগও করেন। গত বছর আমাকে দেওয়া একটা সাক্ষাৎকারে অমর এই বাণী তো তিনিই দিয়েছিলেন, ‘আমাকে যেভাবেই হোক ক্রিকেটে রাখেন। নইলে আপনাদের জীবন ডাল হয়ে যাবে।’ তবে সবকিছুরই তো একটা সময়–অসময় আছে। এই রাতে সাংবাদিকদের বাড়তি মনোযোগটা পেতে চাননি সাকিব। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টেস্ট সিরিজটা খেলতে মুখিয়ে আছেন। সাত সমুদ্র তেরো নদী ওপারের সেই আমেরিকা থেকে উড়ে এসেছেন শুধু এ কারণেই। করোনা যেটিকে ভেস্তে দেওয়ার উপক্রম করেছিল। আবার যখন মনে হচ্ছে, খেলতে পারবেন, তখন শুধু সেদিকেই পুরো মনোযোগ দিতে চান বলেই সবাইকে ফাঁকি দিয়ে এমন হোটেলে ঢুকে যাওয়া।

আর বলবেন না, আমাকে যে ওরা কোন দিক দিয়ে হোটেলে ঢুকিয়ে দিল, নিজেও বুঝতে পারিনি। হঠাৎ দেখি, আমি একটা বিয়ের অনুষ্ঠানে। আমি বললাম, বিয়ের সব খাওয়া না খাই, অন্তত ফিরনিটা তো খাওয়া উচিত
সাকিব আল হাসান

সাকিব জানালেন, ঢাকায় নামার পর শারীরিকভাবে একটু অস্বস্তি বোধ করছিলেন বলে নিজেই উদ্যোগী হয়ে বিসিবির মাধ্যমে করোনা পরীক্ষা করিয়েছেন। তাতে পজিটিভ হওয়ার পর চট্টগ্রাম টেস্টে তাঁর আর খেলা হচ্ছে না বলেই যখন ধরে নিয়েছিলেন সবাই, তাতে আবার নাটকীয় মোড় দুদিন পরই। সাকিবের জীবনটাই যে নাটকীয়তায় ভরা। শারীরিক অস্বস্তিটা আগের মতো আর নেই দেখে সাকিবই আবার করোনা টেস্ট করানোর উদ্যোগ নেন। তাতে নেগেটিভ হওয়ার পরই ঢাকা থেকে ছুটে এসেছেন চট্টগ্রামে। তাহলে কি চট্টগ্রাম টেস্টে খেলছেন? সাকিব উত্তর দিলেন, ‘কাল প্র্যাকটিসে দেখি কী অবস্থা!’

সংবাদ সম্মেলনে কোচ রাসেল ডমিঙ্গোকে কথা বলতে হয়েছে সাকিবের খেলা, না খেলা নিয়ে
ছবি: প্রথম আলো

‘কাল’ মানে শনিবার, মানে টেস্টের আগের দিন। সকালে প্র্যাকটিসে সাকিব নিজের শারীরিক অবস্থা বুঝবেন, টিম ম্যানেজমেন্টও তা বোঝার চেষ্টা করবেন। তারপরই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত। কোচ রাসেল ডমিঙ্গো অবশ্য ’৫০-৬০ ভাগ ফিট সাকিবকে দলে চান না’ বলে নিজের সিদ্ধান্ত জানিয়ে দিয়েছেন। তবে বাংলাদেশ দল–সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সূত্রের সঙ্গে কথা বলে যা বোঝা গেল, প্র্যাকটিস করার পর সাকিব যদি বলেন, ‘আমি খেলার জন্য প্রস্তুত’; তাহলে ডমিঙ্গো কী চাইলেন বা চাইলেন না, সেটির আর মূল্য থাকবে না।
শুক্রবার সংবাদ সম্মেলনে সাকিব সম্পর্কে বলতে গিয়ে রাসেল ডমিঙ্গো নিজের করোনা আক্রান্ত হওয়ার অভিজ্ঞতার কথাও টেনে এনেছেন। বাংলাদেশের দক্ষিণ আফ্রিকা সফরের সময় করোনা আক্রান্ত হয়ে ডমিঙ্গো যেমন ভুগেছেন, তাতে এটা মোটামুটি পরিষ্কার, ডেলটা ভেরিয়েন্টেরই শিকার হয়েছিলেন তিনি। সাকিবের এত তাড়াতাড়ি সুস্থ বোধ করার কারণও যেমন অনুমান করা যাচ্ছে সহজেই। অমিক্রন ভেরিয়েন্টই সম্ভবত ধরেছিল তাঁকে। সাকিবের মতো অ্যাথলেটের জন্য যেটি জয় করা কোনো সমস্যাই হয়নি।

মোদ্দাকথা এটাই, সাকিব যদি আজ প্র্যাকটিস করার পর চট্টগ্রাম টেস্ট খেলতে পারবেন বলে মনে করেন, তিনি অবশ্যই খেলবেন। রাসেল ডমিঙ্গো কী চাইলেন না চাইলেন, তাতে সম্ভবত কিছু আসে যায় না।