তামিমের সিদ্ধান্ত ওয়ানডে অধিনায়ক হিসেবে তাঁর জন্য ইতিবাচক: মাশরাফি

তামিমের সিদ্ধান্তে পূর্ণ শ্রদ্ধা আছে মাশরাফিরফাইল ছবি

তামিম ইকবাল আসছে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের বাংলাদেশ দল থেকে নিজেকে সরিয়ে নিয়েছেন। গতকাল নিজের ফেসবুকে এক ভিডিও বার্তায় দেশের অন্যতম সেরা ওপেনার জানিয়েছেন, কেন তিনি বিশ্বকাপ স্কোয়াডের অংশ হতে চান না। তাঁর অপারগতার কথা তিনি জানিয়েছেন প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদীন ও বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসানকে। তামিমের যুক্তিগুলো মেনে নিয়েছেন তাঁরা। আগামী অক্টোবর-নভেম্বরে সংযুক্ত আরব আমিরাত ও ওমানে অনুষ্ঠেয় টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে বাংলাদেশ দলটাকে যে তামিমের মতো একজন শীর্ষ ক্রিকেটারকে ছাড়াই হচ্ছে, এটি একপ্রকার নিশ্চিতই।

২০০৭ সাল থেকে তামিম বাংলাদেশ দলের অংশ। অবিচ্ছেদ্য অংশই। ওয়ানডে বিশ্বকাপ কিংবা টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ অথবা আইসিসি চ্যাম্পিয়নস ট্রফি, ক্রিকেটের বৈশ্বিক প্রতিযোগিতায় তামিমকে ছাড়া বাংলাদেশ দল এত বছর কল্পনাই করা যায়নি। সবশেষ ২০১৬ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে তামিম সেঞ্চুরি করেছিলেন একটি ম্যাচে (ওমানের বিপক্ষে), দলের অন্যতম বড় ভরসার জায়গা ছিলেন। এবার তিনি নিজেই নিজেকে সরিয়ে রাখছেন বিশ্বকাপ থেকে। ব্যাপারটি যেকোনো বিচারেই অনেক বড় ঘটনা।

তামিমের সিদ্ধান্তের প্রতি সকলের সম্মান জানানো উচিত বলে মনে করেন মাশরাফি
ফাইল ছবি

বিষয়টিকে কীভাবে দেখছেন তাঁর সাবেক সতীর্থ মাশরাফি বিন মুর্তজা? বাংলাদেশের সাবেক অধিনায়ক গতকাল তামিমের ঘোষণাটি আসার পর ব্যক্তিগত ফেসবুক পেজে এ ব্যাপারে নিজের প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। দেশের ক্রিকেটের অন্যতম সেরা এই তারকার মতে, ‘এটি পুরোপুরি তামিমের নিজের সিদ্ধান্ত এবং এ সিদ্ধান্তের প্রতি সকলের সম্মান জানানো উচিত।’

মাশরাফি লিখেছেন, তামিম যে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, এর পেছনে বেশ কিছু যুক্তি আছে, ‘কোনো সন্দেহ নেই তামিম বাংলাদেশের সেরা ব্যাটসম্যানদের একজন। ওর পরিসংখ্যানও তা-ই বলে। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ খেলার সব যোগ্যতাই ওর আছে। ক্রিকেট বোর্ড, টিম ম্যানেজমেন্ট সবাই ওকে টিমে রাখবে, এটা সবারই জানা। তামিম কেন এ সিদ্ধান্ত নিল, তার যুক্তিও আছে অনেক।’

তামিম নিজের ফেসবুকে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ দলে না থাকার জন্য যে কারণগুলো বর্ণনা করেছেন, মাশরাফির মতে সেগুলো সঠিকই, ‘তামিমের চোট, এটা প্রথম ব্যাপার। তার ওপর সে গত চারটি সিরিজের ১৬টা ম্যাচ খেলতে পারেনি। কোনো ম্যাচ না খেলে হঠাৎ করে মাঠে নামার পর নিজের ওপর বিশাল চাপ সৃষ্টি হবে। পরে সেটি ওয়ানডে আর টেস্টেও রয়ে যেতে পারে।’

দুজনের সম্পর্কটা সব সময়ই মধুর।
ফাইল ছবি

তামিমের বদলে এই কয়েকটি সিরিজ যাঁরা খেলেছেন, তাঁরাও নিজেদের সর্বোচ্চটা দিয়ে চেষ্টা করেছেন। তামিম নিজেও মনে করেন, তিনি বাইরে থেকে এসে দলে যোগ দিলে তাঁদের প্রতি অন্যায় করা হয়। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের জন্য সৌম্য, লিটন, নাঈমদের প্রস্তুতি যে তামিমের চেয়ে অনেক ভালো; সেটি গতকালকের ভিডিও বার্তায় স্পষ্ট করেই স্বীকার করেছেন দেশের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ দল থেকে সরে দাঁড়ানোর বড় কারণ এটিই।

মাশরাফিও মনে করেন, তামিম যদি এভাবে পুরো বিষয়টি ভেবে থাকেন, তাহলে ঠিক করেছেন। বাংলাদেশের সাবেক অধিনায়ক এর সঙ্গে যোগ করেছেন অস্ট্রেলিয়া সিরিজে মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামের কঠিন কন্ডিশনে সৌম্য, নাঈমদের ব্যাটিংয়ের কথাও, ‘যে উইকেটে খেলা হচ্ছে, সেখানে রিয়াদ (মাহমুদউল্লাহ) ছাড়া দলের আর কোনো খেলোয়াড়ই ৫০ ছুঁতে পারেনি। সৌম্য, লিটন বা নাঈমদের সত্যিকারের ব্যাটিং উইকেটে খেলতে না দিয়ে বিচার করাটা সত্যিই অন্যায় হবে। কঠিন সিরিজগুলো তো এই ছেলেরাই পার করেছে।’

মাশরাফি বললেন, ড্রেসিং রুমে সবাই তামিমকে খুব পছন্দ করে
ফাইল ছবি

মাশরাফির মতে, হুট করে দলে ঢুকে গেলে এবারের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে বাংলাদেশ দলের ড্রেসিংরুম তামিমকে কতটা আন্তরিকতার সঙ্গে ‘গ্রহণ’ করত, সেটি নিয়ে সন্দেহ আছে। আর সেটি মনেপ্রাণে ভেবেই নাকি তামিম বিশ্বকাপ দল থেকে সরে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, ‘সবচেয়ে বড় বিষয়টা হচ্ছে, তামিমকে ড্রেসিংরুমে সবাই খুবই পছন্দ করে। কিন্তু ১৬টি আন্তর্জাতিক ম্যাচ বা অনুশীলন ম্যাচ ছাড়া দলে ঢুকলে এবার ওকে সবাই কতটা স্বাগত জানাত, সেটি হয়তো ওকে ভাবিয়েছে।’

তামিমের এভাবে অন্যদের কথা ভেবে বিশ্বকাপের দল থেকে সরে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত ভবিষ্যতে ওয়ানডে অধিনায়ক হিসেবে দলে তাঁর গ্রহণযোগ্যতা আরও বাড়াবে বলেই মনে করেন মাশরাফি, ‘কোনো কোনো সিদ্ধান্ত মানুষের জীবন পাল্টে দেয়। এ সিদ্ধান্তের পর তামিম যখন পরের ম্যাচে ওয়ানডে অধিনায়ক হিসেবে মাঠে নামবে, তখন সৌম্য, লিটন, নাঈমরাই ওর জন্য জীবন বাজি রেখে খেলবে। কারণ, কেউ রাখুক আর না-ই রাখুক, তামিম ওদের কঠোর পরিশ্রমের প্রতি শ্রদ্ধা রেখেছে।’

মাশরাফি শেষ করেছেন এভাবে, ‘তামিম এখনো সেরাদের সেরা এবং সে সেরাদের সেরা হয়েই থাকবে। টি-টোয়েন্টিতে জোর করে খেলে অবশ্যই টেস্ট আর ওয়ানডেতে দলের সেরা ব্যাটসম্যানকে নিষ্প্রভ কেউ দেখতে চাইবে না। তামিমের এখনো অনেক ম্যাচ জেতানোর বাকি আছে। তামিম, তোমাকে আমরা অবশ্যই টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে মিস করব।’