স্লিপে সাকিবের উপস্থিতি, ফিল্ডিংয়ে দেখা যাবে নতুন বাংলাদেশকে?
জিম্বাবুয়ের নির্বাচিত একাদশের সঙ্গে বাংলাদেশের প্রস্তুতি ম্যাচের লাইভ স্ট্রিমিং ছিল একটি ক্যামেরায়। ক্রিজ বরাবর তাক করা সে ক্যামেরায় মাঠের অন্যান্য অংশ অদৃশ্য হলেও স্লিপ কর্ডন মোটামুটি দৃশ্যমান।
সেখানেই স্পষ্ট ফুটে উঠছিল সাকিব আল হাসানের প্রতিক্রিয়া। অন্য জায়গায় ক্যাচের সুযোগ হাতছাড়া হলে বা দারুণ কোনো ডেলিভারিতে ব্যাটসম্যান পরাস্ত হলে সাকিবের হতাশা ছিল স্পষ্ট—কখনো মাথায় হাত দিচ্ছেন, কখনো–বা প্রায় নুয়েই পড়ছেন!
বোলিংয়ে সেদিন ৩ উইকেট নিয়েছিলেন, তবে সাকিবের উপস্থিতি যেন নতুন করে দেখা গিয়েছিল স্লিপ কর্ডনে। বাংলাদেশের অন্যতম দুর্বল এই দিকটায় সাকিবের আগমন কি বাড়তি প্রেরণা দেবে শেষ পর্যন্ত?
এমনিতে সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের অন্যতম দুশ্চিন্তার নাম ফিল্ডিং। বিশেষ করে ক্যাচ ধরার ব্যাপারটি। আর সেই ক্যাচ নেওয়া যখন স্লিপে, তখন বাংলাদেশ সেখানে পিছিয়ে সবার চেয়ে।
ক্রিকভিজের এক তথ্য অনুযায়ী, ২০১৯ সালের শুরু থেকে স্লিপ ক্যাচিংয়ে সাফল্যের হার বাংলাদেশের মাত্র ৭৬ শতাংশ। এ ক্ষেত্রে যুগ্মভাবে ইংল্যান্ডের সঙ্গে সবার নিচের অবস্থানটি তাদের।
জিম্বাবুয়েতে একমাত্র টেস্টের আগে কন্ডিশনের কথা উঠলে যখন পেসারদের কথা আসছে ঘুরেফিরে, গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে তাই স্লিপ কর্ডনের ক্যাচিংয়ের ব্যাপারটিও। ম্যাচের আগের দিন সংবাদ সম্মেলনে অধিনায়ক মুমিনুল হক জানালেন, আপাতত স্লিপ নিয়ে তাঁদের চিন্তা কম।
শেষ শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সিরিজে স্লিপে অন্যতম উপস্থিতি ছিল নাজমুল হোসেন শান্তর। একাদশে থাকা সাপেক্ষে সৌম্য সরকার থাকেন সেখানে। এমনকি ক্লোজ-ইন পজিশনে ফিল্ডিং করা সাইফ হাসানকেও পালন করতে হয়ে স্লিপে দাঁড়ানোর দায়িত্ব। মাঝে মাঝে শিন-প্যাড পরা অবস্থাতেও সে পজিশনে ফিল্ডিং করতে দেখা গিয়েছিল সাইফকে।
এখন অবশ্য স্লিপে কারা দাঁড়াবেন, সেটি নির্দিষ্ট বলেই জানিয়েছেন মুমিনুল। দেশের মাটিতে শেষ শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সিরিজে ব্যক্তিগত কারণে ছুটিতে থাকায় দলের সঙ্গে ছিলেন না ফিল্ডিং কোচ রায়ান কুক। এবার অবশ্য তাঁকে পাচ্ছে বাংলাদেশ।
স্লিপে সেই চার-পাঁচজনের সঙ্গে সাকিবকে নিয়ে কাজ হয়েছে, ‘স্লিপে ক্যাচ নেওয়া আমাদের জন্য আগে চিন্তার ছিল। কিন্তু এখন তো আমাদের চার-পাঁচজন থাকে স্লিপ ক্যাচিংয়ের জন্য নির্দিষ্ট। এখন নতুন একজন—সাকিব ভাই যুক্ত হয়েছেন। এ ছাড়া শান্ত আছে। আগের যারা (ছিল) তাদের নিয়েই কাজ হয়েছে।’
স্লিপ ক্যাচিং বাদ দিলে সাম্প্রতিক সময়ে আলোচনায় আছে পেস আক্রমণ, সেটি অবশ্য ইতিবাচক দিক দিয়েই। ম্যাচের আগের দিনও উইকেট দেখতে পারেনি বাংলাদেশ। মুমিনুলের সম্বল তাই শেষ জিম্বাবুয়ে সফরের স্মৃতি, যেটিও ২০১৩ সালের ঘটনা।
তবে তখনকার সঙ্গে সাম্প্রতিক সময়ের পার্থক্য দেখছেন বাংলাদেশ অধিনায়ক, ‘আসলে উইকেট না দেখে তো বলা কঠিন। কিন্তু যখন খেলেছিলাম, সাত-আট বছর আগে তখন দেখেছিলাম পেসাররা খুব দাপট দেখিয়েছে। (তবে) শেষ দু-একটা সিরিজে জিম্বাবুয়ে এই উইকেটে পেসার-স্পিনাররা সবাই দাপট দেখিয়েছে বা সুবিধা পেয়েছে। কিন্তু এখন উইকেট না দেখে কিছু বলাটা কঠিন।’
এ সফরের আগে বাংলাদেশ স্কোয়াডের সদস্যরা শেষ প্রতিযোগিতামূলক ম্যাচ খেলেছিলেন ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে, যেটি এবার হয়েছিল টি-টোয়েন্টি সংস্করণে।
তবে শেষ কয়েক দিনের প্রস্তুতিতে সন্তুষ্ট মুমিনুল, ‘আমি এদিকটা নিয়ে একটু চিন্তায় ছিলাম। কিন্তু এখন দেখছি এই চিন্তাটা অনেক দূর কেটে গেছে। এখানে আসার পর এক সপ্তাহ ধরে লাল বলে অনুশীলন করছি। প্রস্তুতি ম্যাচটাতে সবাই খুব ভালো করেছে। তাই যে ঘাটতি ছিল, সেটা এখন নেই, আশা করি টেস্ট ম্যাচটা ভালো কাটবে।’
জিম্বাবুয়ের সঙ্গে তাদের মাটিতে শেষ সিরিজের পর থেকে দুই দলের মধ্যে পার্থক্যটা স্বাভাবিকভাবেই বেড়েছে। প্রতিপক্ষ যখন জিম্বাবুয়ে, তখন বাংলাদেশকে নিয়ে প্রত্যাশাটাও তাই থাকবে বাড়তি।
জিম্বাবুয়ের সঙ্গে হারলে বাড়তি কথা হবে, সেটা জানেন মুমিনুলও, ‘এটা আমিও ভাবি। কিন্তু শুধু জিম্বাবুয়ে না, যেকোনো দলের সঙ্গেই যখন দেশের বাইরে খেলব, তখন ব্যাটিং-বোলিং-ফিল্ডিং তিন দিকটাই ভালো করতে হয়, ফোকাস রাখতে হয়। সেই সঙ্গে দলীয় সমন্বয়টা খুব গুরুত্বপূর্ণ। এদিকটায় ভালো করলে আশা করি টেস্ট ম্যাচটা জিততে পারব।’