১২৯ রানের লক্ষ্যেই ঘাম ছুটে গেছে কোহলিদের

হাসারাঙ্গাদের বোলিংয়ে কলকাতা অল্পতেই গুটিয়ে গেলেও সেটি পেরোতে ঘাম ছুটে গেছে কোহলিদেরছবি: আইপিএল

কলকাতা নাইট রাইডার্স যখন মাত্র ১২৮ রানেই গুটিয়ে গেল, বেঙ্গালুরু রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স সমর্থকেরা বুঝি সহজ জয়ের মানসিক প্রস্তুতিই নিয়ে রেখেছিলেন। মুম্বাইয়ে আজ শেষ পর্যন্ত জিতেছেন কোহলি-ডু প্লেসিদের বেঙ্গালুরু, কিন্তু সে জয় পেতে এভাবে ঘাম ঝরবে তাঁদের তা কে ভেবেছিল!

শেষ পর্যন্ত অনেক কষ্টে ৩ উইকেটে জিতেছে বেঙ্গালুরু, হাতে বল বাকি ছিল মাত্র চারটি। তা যা-ই হোক, হার দিয়ে আইপিএল শুরু করা বেঙ্গালুরু দ্বিতীয় ম্যাচেই যে জয়টা পেয়েছে, এতেই আপাতত স্বস্তি খুঁজে নেবেন বেঙ্গালুরুর সমর্থকেরা।

১২৯ রানের লক্ষ্যে নেমে ইনিংসের তৃতীয় বলে যখন অনুজ রাওয়াতের উইকেট গেল, বেঙ্গালুরু সমর্থকেরা হয়তো তেমন গা করেননি। পরের ওভারের শেষ বলে দলকে ১৭ রানে রেখে যখন ফাফ ডু প্লেসিও ফিরলেন, তখন ক্রিজের অন্য প্রান্তে বিরাট কোহলিকে দেখে অস্বস্তিটা কেটে যাওয়ার কথা।

কলকাতার সাউদি নিয়েছেন ৩ উইকেট
ছবি: আইপিএল

কিন্তু এক বল পর অস্বস্তিটা যে আর চাপা থাকল না! গত এক-দেড় বছরে অফ স্টাম্পের বাইরের বলে দুর্বলতা কোহলির, সে সংস্করণ যা-ই হোক, বলের রং যা-ই হোক, বোলার যে-ই হোন। আজ উমেশ যাদবের বলেও পঞ্চম-ষষ্ঠ স্টাম্পের বলে খোঁচা মেরে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে কোহলি যখন (৭ বলে ১২) ফিরছেন, দলের রান ১৭, ইনিংসের বয়স ১৩ বল!

মাত্র ১৩ বল আগে যে লক্ষ্যটা একেবারে জলবৎ তরলং মনে হচ্ছিল, সেটি তাড়ায়ই তখন বেঙ্গালুরুর সমর্থকদের কাছে হয়তো মনে হচ্ছিল—এই বুঝি আবার হারল!

অনুভূতিটা যে একেবারে জেঁকে বসেনি, সে জন্য শেরফান রাদারফোর্ডকে ধন্যবাদ দেবে বেঙ্গালুরু। চতুর্থ উইকেটে ডেভিড উইলির (২৮ বলে ১৮) সঙ্গে ৪৫ রানের জুটিতে বেঙ্গালুরুর ইনিংসে ঘুরে দাঁড়ানোর শুরুটা রাদারফোর্ডের ব্যাটেই। পঞ্চম উইকেটে শাহবাজ আহমেদের (২০ বলে ৩ ছক্কায় ২৭) সঙ্গেও গড়েছেন ৩০ বলে ৩৯ রানের জুটি।

রাদারফোর্ডের ইনিংস বেঙ্গালুরুকে পথে রেখেছে
ছবি: আইপিএল

শাহবাজ আউট হওয়ার পর অবশ্য বেশিক্ষণ টেকেননি রাদারফোর্ড। ১৮তম ওভারের দ্বিতীয় বলে ষষ্ঠ ব্যাটসম্যান হিসেবে যখন ফিরছেন, তাঁর নামের পাশে ৪০ বলে ১ চার ১ ছক্কায় ২৮ রান। স্ট্রাইকরেট বিবেচনায় টি-টোয়েন্টির ইনিংস নয়, কিন্তু ১২৮ রানের জবাবে শুরুতেই হোঁচট খাওয়া বেঙ্গালুরুর কাছে এই ইনিংস সোনার চেয়েও দামি!

শেষ দিকে দীনেশ কার্তিকের ৭ বলে ১৪ রানের ইনিংস বুঝিয়ে দিল, কেন তাঁকে লোয়ার-অর্ডারের জন্য রেখে দিয়েছে বেঙ্গালুরু। এমন দিনগুলোর জন্যই তো! সঙ্গে হার্শাল প্যাটেলের ৬ বলে ২ চারে ১০ রানের ইনিংসের কথাও বলতে হবে।

১৮তম ওভারে রাদারফোর্ডের পর নেমে চার মেরে হাসারাঙ্গাও আউট হলে শেষ দুই ওভারে বেঙ্গালুরুর দরকার ছিল ১৭ রান। ১৯তম ওভারে ভেঙ্কটেশ আইয়ারকে দুই চার মেরে শেষ ওভারের জন্য কাজটা অনেক সহজ করে দেন হার্শাল। শেষ ওভারে ৭ রান দরকার ছিল, আন্দ্রে রাসেলকে প্রথম বলেই ছক্কা মেরে সব সংশয় শেষ করে দেন দীনেশ কার্তিক। পরের বলে চারে নিশ্চিত করেন জয়।

এর আগে টস জিতে ফিল্ডিং নিয়ে এর বেশি আর কিছু সম্ভবত চাইতে পারতেন না বেঙ্গালুরু অধিনায়ক ডু প্লেসি!

দীনেশ কার্তিক, হার্শাল প্যাটেলরা নিশ্চিত করেছেন বেঙ্গালুরুর জয়
ছবি: আইপিএল

মিডিয়াম পেসার আকাশ দীপ, শ্রীলঙ্কান লেগ স্পিনার ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গার পর আরেক পেসার হার্শাল প্যাটেলের তোপে কলকাতা গুটিয়ে গেছে ১২৮ রানেই। মুম্বাইয়ের ডিওয়াই পাতিল স্টেডিয়ামে অর্ধেক কাজ সেরে রেখেছিলেন বেঙ্গালুরু বোলাররাই।

ব্যাটিংয়ে কলকাতা উইকেট হারিয়েছে নিয়মিত বিরতিতে। সর্বোচ্চ ২৭ রান উঠেছে উমেশ যাদব ও বরুণ চক্রবর্তীর শেষ উইকেট জুটিতেই, দশম উইকেটে আইপিএলের যেটি চতুর্থ সর্বোচ্চ। মাঝে আন্দ্রে রাসেলের ১৮ বলে ২৫ ও শেষ দিকে যাদবের ১২ বলে ১৮ রানের ইনিংসেও খুব বেশি দূর এগোতে পারেনি কলকাতা।

কলকাতার ব্যাটসম্যানরা ইনিংসে শুরু পেয়েছেন, ১১ জনের মধ্যে ৮ জনই দুই অঙ্কে যাওয়া সেটি বলে। কিন্তু শুরুটা টেনে নিতে যে পারেননি, তা বলে এটি যে, শুধু রাসেল ছাড়া আর কেউই ২০-এর ঘরে যেতে পারেননি। বেঙ্গালুরুর হয়ে হাসারাঙ্গা ৪ উইকেট নিয়েছেন ২০ রান দিয়ে, হার্শাল প্যাটেল ২ উইকেট পেতে ৪ ওভারে দিয়েছেন মাত্র ১১ রান! আকাশ দীপ ৩ উইকেট পেলেও ৩.৫ ওভারে রান দিয়েছেন ৪৫।