১৫ কোটিতে কত হয়? আইপিএলে দাম শুনে ক্যালকুলেটর টেপার দশা তাঁর
আইপিএল নিলাম নিয়ে যে কাইল জেমিসনের খুব একটা আগ্রহ ছিল, বলা যাবে না। নিলামের আগেই ঘোষণা দিয়েছিলেন, অনুষ্ঠান না দেখে বরং ওই সময়টায় ঘুমাবেন। ঘুম থেকে উঠে যখন নিজেকে কোটিপতি হিসেবে আবিষ্কার করলেন, কেমন লেগেছে এই নিউজিল্যান্ডের পেসারের? ঘুম ঘুম চোখে রীতিমতো ক্যালকুলেটরে টেপাটিপির দশা তাঁর! ১৫ কোটি রুপি মানে নিজের দেশ নিউজিল্যান্ডের মুদ্রায় কত, সেটা নাকি বুঝতেই পারেননি রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুতে বিরাট কোহলিদের সতীর্থ হতে যাওয়া জেমিসন।
জেমিসনকে নিয়ে যে টানাটানি হবে, এটা নিলামের আগেই বোঝা গিয়েছিল। তাই বলে দাম বাড়তে বাড়তে এভাবে আকাশ ছোঁবে, সেটা হয়তো জেমিসনের সবচেয়ে বড় শুভানুধ্যায়ীর কল্পনাতেও ছিল না! বেঙ্গালুরু, পাঞ্জাব কিংস, দিল্লি ক্যাপিটালস—তিন ফ্র্যাঞ্চাইজিই মূলত দীর্ঘদেহী এই পেসারের জন্য একের পর এক বিড করে যাচ্ছিল। শেষমেশ জয় হয়েছে কোহলির বেঙ্গালুরুর। বহুদিনের বিদেশি পেসার ডেল স্টেইনের আর আগের মতো ফর্ম নেই, কেইন রিচার্ডসনও ঠিক অতটা ভরসা করার মতো পেসার নন। তাই জেমিসনের জন্য যেন টাকার বস্তা নিয়ে নেমেছিল কোহলির দল। গুনে গুনে ১৫ কোটি খরচ করে তবেই থেমেছে বেঙ্গালুরু।
আইপিএলে খেলার সুযোগ পাচ্ছেন, পাচ্ছেন বিরাট কোহলি-এবি ডি ভিলিয়ার্সদের সঙ্গে ড্রেসিংরুম ভাগাভাগি করার সুযোগ। ব্রেন্ডম ম্যাককালাম, শেন বন্ড, কেইন উইলিয়ামসন, ড্যানিয়েল ভেট্টোরি, জ্যাকব ওরামদের মতো দেশীয় কিংবদন্তিদের হটিয়ে হয়েছেন আইপিএল ইতিহাসের সবচেয়ে দামি কিউই খেলোয়াড়। নিলামে যখন নিশ্চিত হলো তিনি বেঙ্গালুরুতে যাচ্ছেন, জেমিসনের মাথায় এসব কথা ঘোরারই কথা ছিল। কিন্তু আসলেই কি সেসব ঘুরছিল? জেমিসনের কথা শুনলে মনে হবে না; বরং ১৫ কোটি রুপিকে নিউজিল্যান্ড ডলারে রূপান্তরিত করলে কত পাওয়া যাবে, সেটাই মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছিল ৬ ফুট ৮ ইঞ্চি উচ্চতার পেসারের!
তবে আগে অন্য ঘোষণা দিলেও একেবারেই যে আইপিএলের নিলাম দেখেননি, সেটা বলা যাবে না। নিজের নাম যেহেতু আছে, আছে ফ্র্যাঞ্চাইজি পাওয়ার সম্ভাবনাও—সবকিছু মিলিয়ে কিছুক্ষণের জন্য টিভি ছেড়েছিলেন জেমিসন, ‘মাঝরাতে ঘুম ভাঙল, সবার আগে ফোনের নোটিফিকেশন চেক করলাম। তারপর মনে হলো, নিলাম দেখা যাক কিছুক্ষণ। ঘণ্টা দেড়েক অপেক্ষা করার পর আমার নাম এল। ওই দেড় ঘণ্টা অপেক্ষা করতে একটু অদ্ভুতই লেগেছে।’
নিলাম শেষে যখন দেখলেন তাঁর নামের পাশে জ্বলজ্বল করছে ১৫ কোটি রুপি, তখন সবার আগে চুক্তির আর্থিক দিকটাই মাথায় এসেছে জেমিসনের, ‘আমি প্রথমে বুঝিনি ১৫ কোটি রুপি মানে আমাদের মুদ্রামানে কত হবে। ব্যাপারটা নিয়ে শেন বন্ডের সঙ্গে কিছুক্ষণ কথা বললাম, তার সঙ্গে অনুভূতিগুলো ভাগাভাগি করলাম।’
রাতারাতি কোটিপতি হয়ে গেছেন, জাতীয় দলের সতীর্থদের খাওয়াতে তো হবেই! যেটাকে ‘ট্রিট’ দেওয়া বলে আরকি! তো, জেমিসন সতীর্থদের কীভাবে ট্রিট দেবেন? সে চিন্তাও করে রেখেছেন কিউই পেসার, ‘কী আর করব, সবাইকে হয়তো কয়েক কাপ কফি খাইয়ে দেব!’
বাড়তি লম্বা হওয়ার সুবাদে হুটহাট বাউন্সার মারার ব্যাপারে সুখ্যাতি আছে জেমিসনের। ২০১৯ সুপার স্ম্যাশ লিগে একবার ৪ ওভার বল করে ৭ রান দিয়ে ৬ উইকেট নিয়েছিলেন। বিশ্বে টি-টোয়েন্টিতে এর চেয়ে ভালো বোলিং করার রেকর্ড আছে আর মাত্র তিনজনের। ছয় টেস্ট, দুই ওয়ানডে আর চার টি-টোয়েন্টির ক্যারিয়ারে এর মধ্যেই নিজের জাত চিনিয়েছেন এই পেসার। প্রথম চার টেস্টে দুবার ইনিংসে পাঁচ উইকেট নিয়েছেন। ব্যাট হাতেও নিজের যোগ্যতা দেখিয়েছেন। বুঝিয়েছেন, প্রয়োজনের সময় রান আসতে পারে তাঁর ব্যাট থেকেও।
জেমিসনের হাত ধরেই কি তবে কোহলির অধরা আইপিএল শিরোপাটা আসবে? দেখা যাক!