হারের স্বাদ সব সময়ই তেতো হয়। চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীদের বিরুদ্ধে হার তো আরও বেশি। বিশ্বকাপের মতো মঞ্চে ভারতের কাছে দুবার হেরেছেন শোয়েব আখতার। সর্বশেষ ২০০৩ সালে বিশ্বকাপে ভারতের বিপক্ষে খেলেছিলেন শোয়েব। এর পর আরও দুই বিশ্বকাপ এসেছে তাঁর ক্যারিয়ারে। কিন্তু সেঞ্চুরিয়নে ভারতের কাছে হারের স্বাদটা এখনো দুঃখ দেয় শোয়েবকে।
২০০৩ সালে গ্রুপ পর্বে মুখোমুখি হয়েছিল ভারত-পাকিস্তান। প্রথমে ব্যাট করে সাইদ আনোয়ারের সেঞ্চুরির সুবাদে ২৭৩ রানের বড় এক সংগ্রহ পেয়েছিল পাকিস্তান। কিন্তু শচীন টেন্ডুলকারের দুর্দান্ত ৯৮ রানের এক ইনিংসের কাছে লক্ষ্যটা মামুলি হয়ে গিয়েছিল। আরেকটি বিশ্বকাপ ম্যাচে ভারতের কাছে হেরে গেছে পাকিস্তান। বিশ্বকাপে এমন হারে অভ্যাস হয়ে গেছে পাকিস্তানের। কম তো নয়, সাতটি ম্যাচ খেলে প্রতিবারই হেরেছে তারা। তবে শোয়েবের দাবি, এ ধারা থামতে পারত ২০০৩ সালেই!
শোয়েব তাঁর ইউটিউব চ্যানেলে নতুন এক ভিডিও ছেড়েছেন। সেখানে দাবি করেছেন, তাদের ফিটনেস ও ওয়াকারের বাজে অধিনায়কত্বই নাকি ভারতের বিপক্ষে সেবার জিততে দেয়নি পাকিস্তানকে, আমার ক্যারিয়ারের সবচেয়ে হতাশাজনক ম্যাচ হলো ২০০৩ বিশ্বকাপে ভারর ম্যাচটি। সেঞ্চুরিয়নে দারুণ এক বোলিং লাইনআপ নিয়েও ২৭৪ রান ডিফেন্ড করতে পারিনি।
ম্যাচের আগে গতিতে ভড়কে দেওয়ার হুমকি দিয়েছিলেন শোয়েব। সেঞ্চুরিয়নের গতিময় উইকেটে যদিও কাজে লাগাতে পারেননি শোয়েব। বরং শেবাগ ও টেন্ডুলকার তাঁকে প্রথম স্পেলে পাত্তাই দেননি। এত দিন পর নিজের পারফরম্যান্সের পেছনে অজুহাত দেখাচ্ছেন শোয়েব। তাঁর দাবি ম্যাচের আগের রাতে তাঁর বাঁ পায়ে চার-পাঁচটি ইনজেকশন নিতে হয়েছিল তাঁকে, ‘ইনজেকশনের পানি আমার বাঁ পা ফুলিয়ে দিয়েছিল, পায়ে কোনো অনুভূতি ছিল না। আমাদের ইনিংস শেষ হওয়ার পর সতীর্থদের বলেছিলাম আমরা ৩০-৪০ রান কম করেছি। কিন্তু সবাই ধমক দিয়ে বলেছিল, “২৭৩ যথেষ্ট না হলে কোনটা যথেষ্ট?” তারা বলেছিল, আমরা ভারতকে অল আউট করে দেব। কিন্তু আমি জানতাম উইকেট ব্যাটিংয়ের জন্য খুব ভালো এবং দ্বিতীয় ইনিংসেও তাই থাকবে।’
নতুন বোলে খুব বাজে বল করেছিলেন শোয়েব। এত দিন পর সে বোলিংয়ের দাম নিজের হাঁটু ও ওয়াকার ইউনিসের ওপর দিচ্ছেন এই ফাস্ট বোলার, ‘আমরা যখন বোলিং শুরু করলাম, খেয়াল করলাম বাঁ হাঁটুতে কোনো সাড়া নেই। এর কারণে ঠিকভাবে দৌড়াতে পারছিলাম না, ঠিকভাবে বোলিং করতে পারছিলাম না। ভারতের দুই ওপেনারও শুরু থেকেই আক্রমণে গেল। শচীন আমাকে খুবই ভালো খেলছিল, আমাকে পয়েন্টের ওপর দিয়ে ছক্কা মেরেছে। আমার কোনো ধারণাই ছিল না কীভাবে বল করব এবং উইকেট নেব। দুর্ভাগ্যজনকভাবে অধিনায়ক আমাকে আক্রমণ থেকেও সরিয়ে দেয়। সে আমাকে পরে আবার আনে যখন আমি শুধু জোরে শর্ট বল করায় মন দিয়েছি। শচীনকে শর্টবলেই আউট করেছি। তখন অধিনায়ককে বলেছিলাম, শুরুতেও এভাবে করা উচিত ছিল। শেষ পর্যন্ত তো আমরা হারলামই।’
শোয়েবের বর্ণনা শুনে মনে হতেই পারে, তাঁকে আক্রমণ থেকে সরিয়ে দেওয়াতে ভারতের লাভ হয়েছিল এবং টেন্ডুলকারের উইকেট এনে দিয়ে ম্যাচে অনেক বড় অবদান রেখেছেন এই পেসার। কিন্তু বাস্তবতা হলো, সেদিন ১০ ওভার বল করে ৭২ রান দিয়েছিলেন শোয়েব। তাঁর চেয়ে বেশি খরচে ছিলেন ওয়াকার। কিন্তু প্রথম বদলি হিসেবে এসে শেবাগ ও গাঙ্গুলীকে টানা দুই বলে ফিরিয়ে পাকিস্তানকে আশা দেখিয়েছিলেন অধিনায়কই।
নিজের ভিডিও বার্তায় অবস্থায় শোয়েব এসব মনে রাখেননি। বরং ভারতকে হারানোর সুবর্ণ সুযোগ হাতছাড়া হওয়ার সে দুঃখের কথা আরেকবার জানিয়েছেন, ‘এখনো তেতো হয়ে আছে সে স্বাদ, কারণ আমরা ভারতকে হারাতে পারতাম। ১৯৯৯ সালে, ২০০৩ সালেও; কিন্তু পারিনি। ভারতের কাছ থেকে কিছু কেড়ে নিতে চাই না কারণ বিশ্বকাপে তারা সব সময় আমাদের চেয়ে ভালো খেলেছে। এখনো সে হার নিয়ে আমার দুঃখ আছে। আমরা একটু বেশি রান করলে আর একটু ভালো বল করলেই ম্যাচ জিততাম।’
১৬৩ ওয়ানডে খেলা শোয়েব হয়তো বা ভুলে গেছেন, প্রতিটি ওয়ানডের গল্পই এমন, ‘একটু বেশি রান আর একটু ভালো বল’ করলেই জয়!