'তিন মোড়লের' মাতবরি শেষ!

শেষ পর্যন্ত ‘তিন মোড়ল নীতি’ বদলাতে চলেছে? এক বছর আগেও যেখানে মনে হচ্ছিল—ভারত, অস্ট্রেলিয়া ও ইংল্যান্ডের আঙুলের ডগায় নাচবে ক্রিকেট, সেটির পরিবর্তন হতে চলেছে?
গতকাল আইসিসির বোর্ড সভা শেষে এমন সম্ভাবনাই দেখা দিয়েছে। দুবাইয়ে বিশ্ব ক্রিকেটের নিয়ন্ত্রক সংস্থাটির প্রধান কার্যালয়ে দুই দিন ধরে চলা এই সভায় ভারত, ইংল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়াকে মূল ক্ষমতাধর করে দুই বছর আগে আইসিসির গঠনতন্ত্রে যে সংশোধনী আনা হয়েছিল, সেটি পুনর্বিবেচনা করার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
আভাসটা অবশ্য আগেই দিয়েছিলেন শশাঙ্ক মনোহর। গত নভেম্বরে আইসিসির চেয়ারম্যান হওয়ার পর ভারতীয় ক্রিকেট কন্ট্রোল বোর্ডের নতুন সভাপতি এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, সর্বশেষ সংশোধনীতে তিন প্রধানের যে ‘খবরদারি’র ব্যবস্থা করে রাখা হয়েছে, ক্রিকেটের স্বার্থেই এটিকে বদলাতে হবে। তবে সেটি তখনো তাঁর ব্যক্তিগত মতামত ছিল। এবার আইসিসির সভায়ও হলো এই সিদ্ধান্ত।
দুই বছর আগে এন শ্রীনিবাসন, ওয়ালি এডওয়ার্ডস ও জাইলস ক্লার্ক মিলে আইসিসির গঠনতন্ত্রে পরিবর্তন এনে ক্রিকেটের সকল ক্ষমতার দণ্ডমুণ্ডের কর্তা বানিয়ে দিয়েছিলেন ভারত, অস্ট্রেলিয়া ও ইংল্যান্ডকে। আইসিসির সব কমিটিতে এই তিনটি দেশের সদস্যপদ নিশ্চিত ছিল। সঙ্গে আয়ের সিংহভাগও যাতে তিন বোর্ডের দখলে যায়, করা হয়েছিল সেই ব্যবস্থাও।
এই ভেদাভেদ ঘুচিয়ে দেওয়াই ছিল মনোহরের মূল লক্ষ্য। সেটি নিশ্চিত করার জন্যই নির্বাহী কমিটি (এক্স-কো) এবং অর্থ ও বাণিজ্যবিষয়ক কমিটি—আইসিসির মূল এই দুই কমিটিতে তিন মোড়লের স্থায়ী সদস্যপদও প্রত্যাহার করা হয়েছে। সভায় আরও যে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তগুলো নেওয়া হয়েছে, তার মধ্যে একটি হচ্ছে—স্বাধীন চেয়ারম্যান নীতি। এখন থেকে কেউ আইসিসির চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার পর কোনো বোর্ডের সঙ্গে যুক্ত থাকতে পারবেন না। গত নভেম্বরে এই বিষয়টি নিয়েও নিজের অসন্তোষের কথা জানিয়েছিলেন মনোহর। একই ব্যক্তি কোনো সদস্যদেশের বোর্ড সভাপতি এবং আইসিসির চেয়ারম্যান—দুটি পদেই থাকলে স্বার্থের দ্বন্দ্ব অনিবার্য বলেই আশঙ্কা ছিল নবনির্বাচিত আইসিসি-প্রধানের।
গঠনতন্ত্রে সংশোধন এনে আইসিসির পূর্ণ পরিষদের কাছে এই নিয়মের পরিবর্তন আনারও প্রস্তাবের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বোর্ড। আগামী জুনে বার্ষিক সভায় গোপন ব্যালটের মাধ্যমে আইসিসির চেয়ারম্যান নির্বাচনের কথা ভাবছে আইসিসি। যার মেয়াদ হবে দুই বছর। প্রার্থীদের মনোনয়নের যোগ্যতা হিসেবে আইসিসির বোর্ড পরিচালক হিসেবে কাজ করার অভিজ্ঞতা থাকতে হবে, পাশাপাশি পূর্ণ সদস্য ১০ দেশের কমপক্ষে দুটির সমর্থন থাকতে হবে। একজন চেয়ারম্যান তিন মেয়াদ দায়িত্বে থাকতে পারবেন। আর আর্থিক সুশাসন নিশ্চিত করতে সকল পূর্ণ সদস্য বোর্ডকেই প্রতিবছর নিরীক্ষিত আর্থিক বিবরণী আইসিসির কাছে জমা দিতে হবে।
সিদ্ধান্তগুলো নিশ্চিতভাবেই আইসিসিতে সুশাসন নিশ্চিত করবে। সভা শেষে মনোহরও বলেছেন সেটি, ‘গৃহীত সিদ্ধান্তগুলো অবশ্যই স্বচ্ছতার ভিত্তিতে আইসিসি ও এর সদস্যদেশগুলোর পরিচালনামানের উন্নয়ন ঘটাবে। এতে খেলাটির মান ও ভাবমূর্তিও বাড়বে। আইসিসির কোনো সদস্যই কারোর চেয়ে বড় নয়।’ আইসিসি।
ভারত, অস্ট্রেলিয়া ও ইংল্যান্ডকে মূল ক্ষমতা দিয়ে দেওয়া পরিবর্তিত গঠনতন্ত্র পর্যালোচনা করা হবে।
আইসিসির চেয়ারম্যান হওয়ার পর কেউ কোনো সদস্যদেশের বোর্ডের সঙ্গে জড়িত থাকতে পারবেন না।
নির্বাহী কমিটি (এক্সকো) এবং অর্থ ও বাণিজ্যসংক্রান্ত কমিটিতে ভারত, অস্ট্রেলিয়া ও ইংল্যান্ডের স্থায়ী সদস্যপদ থাকবে না।