পাত্তা না দিয়ে এখন করতে হচ্ছে হাহাকার

চোট আবারও কেড়ে নিয়েছে আগুয়েরোকে।ছবি: এএফপি

ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ বিশ্বের জনপ্রিয়তম ফুটবল লিগ। চাইলে আরও নানা বিশেষণ যোগ করা যায়। প্রতিযোগিতাটি অনেক ক্ষেত্রেই নানা দেশের ঘরোয়া ফুটবলের পথ-প্রদর্শক। নেতৃত্ব দিয়ে আসছে আর কি! কিন্তু এই প্রিমিয়ার লিগ ঘিরেই এখন বলা হচ্ছে ‘নেতৃত্বের ঘাটতি’ রয়েছে। কথাটা যেন-তেন কারও হলে না হয় উড়িয়ে দেওয়া যেত। ইয়ুর্গেন ক্লপ, পেপ গার্দিওলা থেকে ওলে গানার সুলশারদের মতো কোচেরা সুর মেলাচ্ছেন এ ভাষায়।

কেন? বদলি খেলোয়াড় নামানোর নিয়ম নিয়ে খেপেছেন কোচেরা। গত মৌসুমে করোনাভাইরাস মহামারির কারণে স্থগিত ছিল খেলা। জুনে তা পুনরায় শুরু হওয়ার পর ফিফাই নিয়মটা করে দিয়েছিল—প্রচলিত তিন বদলি খেলোয়াড় নামানোর পরিবর্তে পাঁচ খেলোয়াড় নামানো যাবে। এ বছরের শেষ পর্যন্ত এ নিয়ম রাখা যাবে, জানিয়ে দিয়েছিল ফিফা। অনেক কিছু ভেবেই নিয়মটি করা হয়েছিল। ঠাসা সূচি, প্রস্তুতির অভাব, চোট, সংক্রমণের শঙ্কা—দলগুলো যেন এসব বাধা ম্যাচে ডিঙিয়ে যেতে পারে সে ভাবনা থেকেই নিয়মটি করা হয়েছিল। নতুন মৌসুমের শুরুতে ফিফা এ নিয়ম পুরো মৌসুমের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়। কিন্তু প্রিমিয়ার লিগ এ নিয়মকে গুরুত্বপূর্ণ ভাবেনি। তারা ফিরে গেছে তিন বদলির নিয়মে।

ইংল্যান্ডের শীর্ষস্থানীয় লিগটির পরিচালকমণ্ডলীরা এ মৌসুমে আগের নিয়মে ফিরে আসার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। পেপ, সুলশার ও ক্লপ এখন সে সিদ্ধান্তের বলি হচ্ছেন। প্রিমিয়ার লিগ পাঁচজন বদলি খেলোয়াড় নামানো থেকে সরে এসেছে তিনজন নামানোর নিয়মে। এমন নয় যে, ইউরোপের শীর্ষস্থানীয় বাকি লিগগুলোও একই নিয়মে ফিরে গেছে। স্প্যানিশ লা লিগা, ইতালিয়ান সিরি ‘আ’ থেকে বেশির ভাগ লিগে এখনো পাঁচজন বদলি খেলোয়াড় নামানোর নিয়ম চালু আছে। চ্যাম্পিয়নস লিগ বা ইউরোপা লিগেও চাইলে পাঁচজন বদলি নামানোর সুযোগ আছে।

লিভারপুল কোচ ইয়ুর্গেন ক্লপ মনে করেন, প্রিমিয়ার লিগের এ সিদ্ধান্ত ‘নেতৃত্বের অভাব’কে প্রকটভাবে বুঝিয়ে দেয়, ‘এটায় (পাঁচজন নামানোর নিয়ম) ফেরা উচিত। কিন্তু যে প্রক্রিয়া তাতে আমার মনে হয় না সেটি সম্ভব হবে। তবে এতে (তিনজন নামানো) কোনো উপকার হবে না। চেলসি, লিভারপুল, সিটি, ইউনাইটেড, টটেনহাম, আর্সেনাল, লেস্টার চোট নিয়ে ভুগছে। আমার কাছে মনে হয় এটি নেতৃত্বের অভাবের জন্য ঘটেছে। শীর্ষ সাতটি ক্লাব কিন্তু কোনো সুবিধা চায়নি। আমরা শুধু জানি সামনের সূচিটা ঠাসা ও কঠিন। আমাদের এটা নিয়ে আবারও ভাবা উচিত।’

হামেস ও মাতিপ, দুজনই চোটে পড়েছেন।
ছবি: রয়টার্স

ম্যানচেস্টার সিটি কোচ পেপ গার্দিওলা এ প্রসঙ্গে একটি পরিসংখ্যান টেনেছেন। গত মৌসুমের তুলনায় এবার খেলোয়াড়দের মাংসপেশির চোট বেড়েছে ৪৭ শতাংশ—এ তথ্য দেন গার্দিওলা। ক্লপের সঙ্গে সুর মিলিয়ে সিটি কোচ বলেন, ‘নির্দিষ্ট কিছু দলের এখান থেকে সুবিধা পাওয়ার কোনো কারণই নেই। সুবিধা ভুলে যান, এ নিয়মটা তো করা হয়েছিল খেলোয়াড়দের রক্ষা করতে। প্রতি তিন দিন পর খেললে ভুগতে হবেই। বাকি সব লিগে এটা আছে কিন্তু আমরা খেলোয়াড়দের রক্ষা করতে পারছি না। পরিসংখ্যানই কথা বলছে। খেলোয়াড়েরা আগের ম্যাচের এমনকি আগের মৌসুমের চোটও কাটিয়ে উঠতে পারছে না। এটা বোকামি। এই সিদ্ধান্তে ভোট দিয়েছে কারা? তারা কারা? খেলোয়াড়দের রক্ষা করতে হবে তাদের। ফিফা ও উয়েফার কাছে কিন্তু নিয়মটা গ্রহণযোগ্য।’

মৌসুমের শুরু থেকেই লিভারপুলের চোটের তালিকা দীর্ঘ হচ্ছে। ভার্জিল ফন ডাইককে গোটা মৌসুমে মাঠে আর নাও দেখা যেতে পারে। থিয়াগো, ফাবিনিও, নাবি কেইতা, জোয়েল মাতিপ, চেম্বারলিনরা চোট পেয়ে মাঠের বাইরে। সিটিও ভুগছে চোট নিয়ে। সার্জিও আগুয়েরো, ফার্নান্দিনিও, গ্যাব্রিয়েল জেসুস, বেনজামিন মেন্দিদের ফিটনেস নিয়েও সমস্যা আছে।

প্রিমিয়ার লিগের ক্লাবগুলো ভোটাভুটির মাধ্যমে বদলি খেলোয়াড় নামানোর আগের নিয়মে ফিরে গেছে। ক্লপ, গার্দিওলার মতো সুলশারেরও তা ভালো লাগেনি। ইউনাইটেড কোচের মতে এতে চোটের তালিকা আরও দীর্ঘ হবে। পাঁচজন বদলি নামানোর পক্ষে কি না—এ প্রশ্নের জবাবে সুলশার বলেন, ‘শতভাগ। আমার বিশ্বাসই হচ্ছে না বিপক্ষে ভোট পড়েছে, কারণ খেলোয়াড়দের রক্ষা করার দায়িত্বটা আমাদের। খেলোয়াড়দের নিয়ে ভাবতে হবে। এই মৌসুমটা অন্য যেকোনো মৌসুমের তুলনায় সবচেয়ে বেশি পরীক্ষা নিচ্ছে। প্রিমিয়ার লিগে আমরা এর মধ্যেই অনেক চোট দেখেছি। আমি তাই পাঁচ বদলি নামানোর পক্ষে।’