অলিম্পিকের ৬ দিন আগে ভিলেজে করোনার হানা
টোকিও অলিম্পিকের বাকি আর মাত্র ৬ দিন। এর আগে অ্যাথলেটদের ভিলেজেও ঢুকে পড়ল করোনা। টোকিও অলিম্পিকের আয়োজন আগে থেকেই জাপান ও এর বাইরে প্রশ্নবিদ্ধ।
করোনায় আক্রান্ত ব্যক্তি জাপানের নন, এতটুকু জানিয়েছেন টোকিও ২০২০ অলিম্পিকের প্রধান নির্বাহী তোশিরো মুতো। করোনায় আক্রান্ত ব্যক্তি কোনো অ্যাথলেট নন, এতটুকুও জানিয়েছেন তিনি। কিন্তু কোন দেশের কিংবা তাঁর নাম বা পরিচয় তো আর জানানো যায় না, গোপনীয়তার স্বার্থে তা জানানওনি তোশিরো মুতো।
তবে মুতো জানান বা না জানান, অলিম্পিক ভিলেজে একজন করোনায় আক্রান্ত হওয়ার খবরের পর টোকিও অলিম্পিক নিয়ে শঙ্কা, উষ্মা আরও বেড়ে যাচ্ছে। আরও প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়েছে গেমসের আয়োজন। গেমসের বাকি আর ছয়দিন, এর আগে আজ শনিবার আয়োজকেরা নিশ্চিত করলেন, টোকিও অলিম্পিকে অ্যাথলেটদের ভিলেজে একজন করোনায় আক্রান্ত।
গেমসের সময় অ্যাথলেটদের থাকার জায়গাতেই করোনার হানায় টোকিও অলিম্পিক নিয়ে প্রশ্ন তো আরও বাড়বেই!
২৩ জুলাই শুরু হয়ে ৮ আগস্ট পর্যন্ত চলবে অলিম্পিক। গেমসে অংশ নিতে ২০৫টি দেশের ১১ হাজারের বেশি অ্যাথলেট জাপানে আসবেন।
এর মধ্যে আজ ভিলেজে এক ব্যক্তির করোনায় আক্রান্ত হওয়ার খবর নিশ্চিত করে সংবাদ সম্মেলনে টোকিও অলিম্পিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা তোশিরো মুতো জানিয়েছেন, করোনায় আক্রান্ত রোগীকে ভিলেজের বাইরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। ভিলেজের বাইরেই আলাদাভাবে চলছে তাঁর আইসোলেশন।
সংবাদমাধ্যম সিএনএনের প্রতিবেদন অনুযায়ী, এ নিয়ে গেমসকে ঘিরে ৪৫ জনের করোনায় আক্রান্ত হওয়ার খবর এসেছে। এর মধ্যে কেউ অ্যাথলেট, কেউবা আয়োজনে জড়িত কর্মকর্তা, কেউবা আবার চুক্তিভিত্তিক কোনো কাজে জড়িত।
অলিম্পিকের আয়োজন গত বছর হওয়ার কথা থাকলেও করোনার কারণে এক বছর পিছিয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু এ বছরেও সেই করোনাকে ঘিরেই অলিম্পিকের আয়োজন প্রশ্নবিদ্ধ! অলিম্পিক এগিয়ে আসছে, অন্যদিকে জাপানে করোনা সংক্রমণের সংখ্যা দিনে দিনে বাড়ছে। আগামী শুক্রবার অলিম্পিকের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের আগে সমালোচকেরা প্রশ্ন তুলছেন, আয়োজন চালিয়ে যাওয়া উচিত হবে কি না!
করোনার সংক্রমণ ঠেকাতেই গত মার্চে আয়োজকেরা ঘোষণা করেছিলেন, অলিম্পিক গেমসে গ্যালারিতে কোনো বিদেশি দর্শক থাকতে পারবেন না। কিন্তু গত কয়েক মাসে জাপানে করোনা সংক্রমণের উর্ধ্বগতির কারণে চলতি মাসেই জাপানের অলিম্পিক কমিটি সিদ্ধান্ত নিয়েছে, বিদেশি তো নয়ই, জাপানি কোনো দর্শকও থাকবেন না গ্যালারিতে। অর্থাৎ দর্শকশূন্য স্টেডিয়ামে হবে অলিম্পিকের আয়োজন। আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটির (আইওসি) এক মুখপাত্রের নাম প্রকাশ না করে তাঁকে উদ্ধৃত করে সিএনএন লিখেছে, আইওসির চোখে জাপানের এই সিদ্ধান্ত ‘অভূতপূর্ব’।
দর্শক থাকুক আর না-ই থাকুক, এরই মধ্যে অনেক অ্যাথলেট করোনাকে কারণ দেখিয়ে গেমস থেকে নাম সরিয়ে নিয়েছেন। তাঁদের মধ্যে আছেন অস্ট্রেলিয়ার বিতর্কিত টেনিস তারকা নিক কিরিওস, অস্ট্রেলিয়ার বাস্কেটবল খেলোয়াড় লিজ কাম্বাজ। অলিম্পিকে কাজ করতে চাওয়া হাজারো স্বেচ্ছাসেবীও এরই মধ্যে নাম কাটিয়ে নিয়েছেন গেমস থেকে।
জাপানের মানুষই তো এভাবে করোনার মধ্যে অলিম্পিক আয়োজনের পক্ষে নন! অলিম্পিকই করোনার ‘সুপার স্প্রেডার’ ইভেন্ট হয়ে পড়ার বড় শঙ্কা দেখা দিয়েছে জাপানে। এমনিতেই আগে থেকে বিশেষজ্ঞদের সতর্কতা ছিল, অলিম্পিকে এত দেশের এত মানুষ আসবেন, তার ওপর জাপানেও করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা প্রতিদিন বাড়ছে, সব মিলিয়ে অলিম্পিকই হয়ে উঠতে পারে করোনা ছড়ানোর কেন্দ্র। করোনা পরিস্থিতি সামলাতে হিমশিম খাওয়া জাপানি চিকিৎসাব্যবস্থার ওপর তাতে চাপ আরও বাড়বে বলে শঙ্কা অনেকের।
করোনার বিপরীতে টিকার চিত্রও খুব একটা আশা জাগায় না। আইওসির হিসাবে গেমসে আসা অ্যাথলেটদের ৮৫ শতাংশকেই টিকা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু অ্যাথলেটদের বাইরে? জাপানের সাধারণ মানুষের মধ্যে টিকার চিত্র তো খুব একটা ভালো নয়। সিএনএনের বৈশ্বিক টিকা পরিস্থিতির চিত্র অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রে যেখানে এরই মধ্যে ৪৮ শতাংশ মানুষকে টিকা দেওয়া হয়েছে, যুক্তরাজ্যে ৫২ শতাংশ, সেখানে জাপানে মাত্র ২০ শতাংশ মানুষ টিকা পেয়েছেন।