উত্তরসূরিদের নিয়ে শঙ্কা সাবেক অধিনায়কের
আফগানিস্তানের মেয়ে ফুটবলারদের জার্সি পোড়ানো ও ছবি মুছে ফেলার পরামর্শ
আফগানিস্তানে ক্ষমতার পালাবদল চলছে। দুই দশক পর দেশটির শাসনভার বুঝে নিচ্ছে তালেবান। এই গোষ্ঠীর বিতর্কিত নীতি ও অতীত ইতিহাস দেশটির জীবনযাত্রা নিয়ে শঙ্কার জন্ম দিয়েছে। বিশেষ করে তালেবান শাসনে আফগান নারীদের কী অবস্থা হবে, তা নিয়ে শঙ্কায় অনেকে।
তালেবানের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এবার তারা নারীদের ব্যাপারে কিছুটা হলেও ভিন্ন পথে এগোবে। কিন্তু আফগানিস্তান নারী ফুটবল দলের সাবেক অধিনায়ক খালিদা পোপাল এতে ভুলছেন না। উত্তরসূরিদের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত খালিদা। বর্তমান ফুটবলারদের বলে দিয়েছেন, নিরাপত্তার স্বার্থে সব জার্সি পুড়িয়ে ফেলতে, ফুটবলার হিসেবে তাঁদের যত ছবি আছে, সব নষ্ট করে ফেলতে।
সাবেক এই ফুটবলার থাকেন কোপেনহেগেনে। সেখান থেকে গতকাল বুধবার এক ভিডিও সাক্ষাৎকারে এখনকার খেলোয়াড়দের উদ্দেশে খালিদা বলেছেন, খেলোয়াড়ি সত্তা বোঝায় এমন সবকিছু সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থেকে মুছে ফেলতে। তালেবান শাসনে চলে যাওয়া দেশটিতে নিরাপত্তার স্বার্থে খেলোয়াড়দের পেজগুলোও বন্ধ করে দিতে বলেছেন, বলছেন জার্সিও পুড়িয়ে ফেলতে।
খালিদার ধারণা, তালেবান এর আগে মেয়েদের নির্বিচারে খুন, ধর্ষণ করেছে, পাথর নিক্ষেপ করে মেরেছে। তাই বর্তমান ফুটবলারদেরও ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কিত হওয়ার যথেষ্ট কারণ আছে। আফগান ফুটবল লিগেরও সহপ্রতিষ্ঠাতা খালিদা বলেছেন, একসময় তিনি মেয়েদের ‘শক্ত থাকতে, সাহসী হতে এবং প্রকাশে আসা’র আহ্বান জানিয়েছেন। কিন্তু পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে এখন উল্টোটাই করতে বলছেন, ‘আজ আমি ওদের ডেকে বলছি, নাম সরিয়ে নাও, তোমাদের পরিচয় মুছে ফেলো, নিরাপত্তার জন্য ছবি মুছে ফেলো। এমনকি তোমাদের জাতীয় দলের জার্সিও পুড়িয়ে ফেলতে বা ফেলে দিতে বলছি আমি।’
এমন কিছু বলতে যে তাঁর যে অনেক কষ্ট হচ্ছে, সেটাও স্বীকার করে নিয়েছেন খালিদা, ‘আমার মতো একজন সমাজকর্মী, যে কিনা সব সময় প্রতিবাদ করেছে এবং যে “জাতীয় নারী দলের একজন খেলোয়াড়” পরিচয়টা পাওয়ার জন্য লড়াই করেছে, তাঁর জন্য এটা খুবই কষ্টকর। জার্সির এই ব্যাজ অর্জন করা, দেশের হয়ে খেলার অধিকার আদায় ও সম্মান অনেক গৌরবের একটা ব্যাপার।’
১৯৯৬ থেকে ২০০১ সালের শাসনামলে তালেবান মেয়েদের চাকরি নিষিদ্ধ করেছিল। মেয়েদের স্কুলে যাওয়া নিষিদ্ধ ছিল এবং মেয়েদের সব সময় বাইরে বোরকা পরা বাধ্যতামূলক ছিল এবং পুরুষ কোনো সঙ্গী নিয়েই বের হতে হতো। তবে এবার তালেবান বলেছে, ইসলামি নিয়ম মেনে নারীদের অধিকারের ব্যাপারে সচেতন হবে তারা।
খালিদার ধারণা, যাঁরা ফুটবল খেলেছেন এবং নারীদের অধিকার নিয়ে কাজ করেছেন, তাঁরা সবাই এখন বিপদের মুখে, ‘তারা খুব ভয়ে আছে। তারা চিন্তিত। শুধু খেলোয়াড় নয়, অধিকারকর্মীরাও ভয়ে আছেন। ওদের যাওয়ার কোনো জায়গা নেই। কোথাও নিরাপত্তা দেওয়ার কেউ নেই। বিপদে পড়লে সাহায্য চাওয়ার মতো কেউ নেই। ওরা ভয়ে আছে, যেকোনো সময় দরজায় কড়া নাড়ার শব্দ শুনতে হবে।’
এদিকে ফুটবলের নিয়ন্ত্রক সংস্থা ফিফা বলেছে, তারা আফগানিস্তানের অবস্থা দেখে ‘চিন্তিত’, ‘আমরা আফগানিস্তান ফুটবল ফেডারেশন ও সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছি। নিয়মিত সেখানকার পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে রাখা হবে এবং সামনের সপ্তাহ ও মাসে সাহায্য করা হবে।’