আর্জেন্টাইন গোলকিপারের ‘স্লেজিং’ রোনালদোদের হারের কারণ?
ম্যাচের আগেই উত্তেজনা ছড়িয়েছিলেন ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের কোচ ওলে গুনার সুলশার।
তাঁর দল প্রিমিয়ার লিগের প্রথম পাঁচ ম্যাচে কোনো পেনাল্টি পায়নি। এ নিয়ে প্রশ্ন করতেই দায়টা লিভারপুল কোচ ইয়ুর্গেন ক্লপের ঘাড়ে দিয়েছিলেন। বলেছিলেন, ক্লপ এ নিয়ে অনুযোগ করাতেই তাঁরা প্রাপ্য পেনাল্টি পাচ্ছেন না। এবার পেনাল্টি পেলেন ঠিকই, কিন্তু গোল এল না। ব্রুনো ফার্নান্দেস পেনাল্টিটা মারলেন আকাশে।
ইউনাইটেডও বাড়ি ফিরল মুখ চুন করে, অ্যাস্টন ভিলার বিপক্ষে ১-০ গোলে হেরে।
গতকাল যাঁরা খেলা দেখেননি, তাঁরা ফার্নান্দেসের নাম দেখে অবাক হতেই পারেন। যে দলে রোনালদো আছেন, সে দলে পেনাল্টির দায়িত্ব অন্য কেউ কী করে পান? এমনকি পর্তুগাল দলেও ফার্নান্দেস নন, রোনালদোই পেনাল্টি নিয়ে আসছেন বছরের পর বছর ধরে।
তবে রোনালদো আসার আগে থেকেই ইউনাইটেডে পেনাল্টি নেওয়ার দায়িত্ব পালন করছেন ব্রুনো ফার্নান্দেস। কিন্তু ফার্নান্দেসের সব জারিজুরি যেন ফাঁস হয়ে গেল অ্যাস্টন ভিলার আর্জেন্টাইন গোলকিপার এমিলিয়ানো মার্তিনেজের সামনে এসে!
কয়েক মাস ধরে আর্জেন্টাইন সমর্থকদের চোখের মণি হয়ে গেছেন এই মার্তিনেজ। গত জুলাইয়ে আর্জেন্টিনা যে কোপা আমেরিকা জিতে আন্তর্জাতিক শিরোপাখরা ঘোচাল, তার পেছনে এই মার্তিনেজের অনেক বড় ভূমিকা ছিল।
গোটা টুর্নামেন্টে দুর্দান্ত খেলেছেন, সেমিতে কলম্বিয়ার বিপক্ষে মনস্তাত্ত্বিক লড়াই চালিয়ে সফল হয়ে প্রশংসিত হয়েছিলেন। দলকে জেতান টাইব্রেকারে। ‘স্লেজিং’ করেই সেদিন কলম্বিয়ান ফুটবলারদের মনোবল ভেঙে দিয়েছিলেন মার্তিনেজ। একই কাজ কাল রোনালদোদের বিপক্ষেও করেছেন। ফলাফল, ফার্নান্দেসের পেনাল্টি মিস!
কিন্তু এমন কী করেছেন মার্তিনেজ?
দেখা যাক। ম্যাচের একদম শেষ দিকে এসে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডে যখন পেনাল্টি পেল, ব্রুনো ফার্নান্দেস এলেন পেনাল্টি নিতে। হাতে বল, রাখলেন পেনাল্টির জন্য নির্দিষ্ট জায়গায়। রোনালদো তখন বাকি সতীর্থদের সঙ্গে পেছনে ঘোরাফেরা করছেন। ব্যস, শুরু হয়ে গেল মার্তিনেজের স্লেজিং।
রোনালদোর দিকে ইঙ্গিত করে বলা শুরু করলেন, ‘তুমি পেনাল্টি নাও। তুমি নিচ্ছ না কেন? তুমি নাও।’ মার্তিনেজের ভাবভঙ্গি এমন ছিল যে পারলে যেন ফার্নান্দেসের হাত থেকে বল কেড়ে নিয়ে তিনি নিজেই রোনালদোর হাতে তুলে দেন!
স্বাভাবিকভাবেই মার্তিনেজের এসব কথায় রোনালদো-ফার্নান্দেস দুজনই বিব্রত হচ্ছিলেন। পরে রেফারি নিজে এসে মার্তিনেজকে থামিয়ে দেন। ঠেলে একটু দূরে সরিয়ে দেন। ম্যাচের শেষ দিকের অমন গুরুত্বপূর্ণ সময়ে মার্তিনেজের এসব কথা ফার্নান্দেসের মনে কিছুটা হলেও বাড়তি চাপ তৈরি করতে বাধ্য—তাই তো খোদ রোনালদোই যেখানে পেছনে দাঁড়িয়ে, সেখানে পেনাল্টি তিনি নিচ্ছেন!
সে চাপেই হয়তো পেনাল্টি মিস করে বসলেন ফার্নান্দেস। এরপর মার্তিনেজের আনন্দ দেখে কে! ওল্ড ট্রাফোর্ডের স্ট্র্যাটফোর্ড এন্ডে থাকা দর্শকদের দিকে তাকিয়ে তখন বেশ কিছু অঙ্গভঙ্গি করে ফার্নান্দেস ও রোনালদোদের কাটা ঘায়ে নুনের ছিটাটা বেশ ভালোই দিয়েছেন।
এত কিছু করার পরও যে মার্তিনেজকে রেফারি হলুদ কার্ড দেখাননি, তা নিয়ে অসন্তুষ্ট ছিলেন ইউনাইটেড কোচ সুলশার, ‘আমি ব্যাপারটা নিয়ে কথা বলতে চাইছিলাম না। তবে ও কাজগুলো করে ঠিক করেনি। আমার মনে হয় ওকে হলুদ কার্ড দেখানো উচিত ছিল।’
প্রতিপক্ষ পেনাল্টি নেওয়ার সময়ে কথার বাণে এভাবে শেষ করে দেওয়ার কাজটা আগেও করেছেন মার্তিনেজ। কোপার সেমিতে মার্তিনেজ কথার তোড়ে মানসিকভাবে বিধ্বস্ত করেছিলেন কলম্বিয়ার তিন খেলোয়াড় ডেভিনসন সানচেজ, ইয়েরি মিনা আর আন্দ্রেস কারদোনাকে। এই তিনজনই টাইব্রেকারে পেনাল্টি থেকে গোল করতে ব্যর্থ হয়ে ডুবিয়েছিলেন কলম্বিয়াকে। সানচেজ পেনাল্টি নেওয়ার আগে তাঁর দিকে তাকিয়ে আর্জেন্টিনা গোলকিপার বলেছিলেন, ‘আমি খুবই দুঃখিত! আমি তোমার সর্বনাশ করতে যাচ্ছি।’ পেনাল্টিটি নেওয়ার জন্য সানচেজ যখন দৌড় শুরু করেন, গোলপোস্টের নিচে দাঁড়িয়েই মার্তিনেজ আবারও বলেন, ‘আমি দুঃখিত। তবে ভাই, আমি কিন্তু তোমাকে খুব পছন্দ করি।’
ইয়েরি মিনার শট নেওয়ার আগেও স্লেজ করতে থাকেন মার্তিনেজ। মিনাকে তিনি বলেছিলেন, ‘তুমি তো দেখি রীতিমতো কাঁপছ, ভাই! আমি কিন্তু তোমাকে ভালোভাবেই চিনি।’
মার্তিনেজ যে ছোটবেলা থেকেই এমন খেলা খেলে অভ্যস্ত, সেটা বোঝা গিয়েছিল কয়েক দিন আগে তাঁর ভাইয়ের এক সাক্ষাৎকার থেকে। যেকোনো চ্যালেঞ্জ জিততেই মার্তিনেজ প্রতিদ্বন্দ্বীর সঙ্গে ‘মানসিক খেলা’ খেলেন বলে জানিয়েছিলেন তাঁর ভাই। মুন্দো আলবিসেলেস্তের সঙ্গে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে মার্তিনেজ বলেছেন, নিজেদের ‘ঘরের কথা’, ‘সে ভয়াবহ ধরনের ছেলে। আমাকে খুব জ্বালায়। মানসিকভাবে সে যে কাউকে শেষ করে দিতে পারে। কোনো কিছু আদায় করে নিতে ঘরে সে আমার সঙ্গেও ছোটবেলায় মানসিক খেলা খেলত।’
মার্তিনেজের মানসিক খেলা যে কত ভয়ংকর, সেটা কাল ফার্নান্দেস-রোনালদোরাও বুঝলেন!