ইতালিকেই এগিয়ে রাখছি

জমে উঠেছে ইউরো ২০২০-এর লড়াই। জমজমাট নকআউট পর্বে বাংলাদেশ থেকেই চোখ রাখছেন জাতীয় ফুটবল দলের সাবেক কোচ মারুফুল হক। সেই দেখা থেকেই প্রথম আলোর পাঠকদের জন্য তাঁর বিশ্লেষণ—

ওয়েম্বলিতে স্পেনের বিপক্ষে আজ সেমিফাইনালে মুখোমুখি হবে ইতালি। রোমাঞ্চকর একটা ম্যাচ দেখার অপেক্ষায় আছি। এই ম্যাচের একটা মজার বিষয় হচ্ছে স্পেন ও ইতালি টুর্নামেন্টের শুরু থেকে খেলার ছক, কৌশল কিছুই বদলায়নি। দুই দল তাদের ফুটবলার বদলালেও আক্রমণ ও রক্ষণভাগের ছক একই রেখেছে।

স্পেন সাধারণত নিচ থেকে খেলা তৈরি করে। ব্যাক ফোর যে চারজন আছে, ওরা বক্সের মতো তৈরি করে, আর দুই উইংয়ে সারাবিয়া ও তোরেস মাঠটাকে বড় করে নেয়। পেদ্রি ও কোকে প্রতিপক্ষের মাঝমাঠ ও রক্ষণের মাঝখানে জায়গা করে নেয়। এভাবেই মূলত তাদের বিল্ড আপটা হয়। আগের ম্যাচে যেভাবে তারা বিল্ড আপ খেলেছে, তাদের আক্রমণটা উইং নয়, মাঝখান দিয়ে হয়েছে। এই ম্যাচে হয়তো সেই সুবিধা করতে পারবে না স্পেন। কারণ, ইতালি দলে থাকবেন কিয়েলিনি ও বোনুচ্চি।

ইংরেজিতে ‘টেরোরিস্ট উইঙ্গার’ বলে একটা কথা আছে। স্পেনে তেমনই দুজন আলবা ও আজপিলিকুয়েতা। এদের টেরোরিস্ট বলছি এ জন্যই যে ওরা গুপ্তঘাতকের মতো পেছনে থাকে। দলের প্রয়োজনে আক্রমণে ওঠে, গোল করে, গোল করায়। এদিক থেকে ইতালির দুর্ভাগ্য, উইংব্যাক স্পিনাৎসোলা চোটে ছিটকে গেছে।

আমি মনে করি, বিল্ড আপের সময় ইতালির এগিয়ে থাকার সম্ভাবনা বেশি। দুই দলের প্রেসিং, কাউন্টার প্রেসিং হবে দেখার মতো। এটা দেখার জন্যই বসে থাকব আমি। দুই দলই কিন্তু প্রতিপক্ষকে কখনো নিচ থেকে খেলা তৈরি করতে দেয় না। অথবা কেউ বল হারালেই তাড়াতাড়ি দখল নেওয়ার জন্য ৩-৪ জন বলের আশপাশে থাকে এবং বল দখলের চেষ্টা করে। উদাহরণ হিসেবে বলব, স্পেন যতগুলো বল দখলে নিয়েছে, এর ৯০ ভাগই প্রতিপক্ষের অর্ধে। এতে একটা বড় অসুবিধাই হবে ইতালির। তবে ইতালি যখন নিজেদের অর্ধে বলটা পায়, তখন ওরা ২-৩ সেকেন্ডের মধ্যে ২-৩ টাচেই বলটা প্রতিপক্ষের অর্ধে পাঠিয়ে দেয়। ওদের লম্বা পাসগুলো বেশ কার্যকর। স্পেনের টিকিটাকার সঙ্গে লং পাসের যে বৈচিত্র্য এসেছে, এটা বেশ কার্যকর। আরেকটা বিষয় হলো যে ম্যাচগুলোতে স্পেন তাদের মোট পাসের ১০ ভাগ লম্বা পাস ফেলেছে, সেখানে বড় জয় পেয়েছে। আমি মনে করি, অবশ্যই কোচ লুইস এনরিকের বিবেচনায় থাকবে এসব।

চোটের কারণে স্পিনাৎসোলা ছিটকে গেছেন, এটা স্পেনের জন্য বাড়তি সুবিধা হতে পারে। কারণ, স্পিনাৎসোলার সঙ্গে ইনসিনিয়ের যে বোঝাপড়া, ওটা অনেকটাই ব্যাহত হবে। আবার এটা ইতালির শাপে বরও হতে পারে। এ ছাড়া স্পেনের অসুবিধা হচ্ছে, ওরা খুব বেশি হাইলাইন প্রেসিং করে না।

এই ম্যাচে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় থাকবে জর্জিনিও ও বুসকেতস। মোরাতাও ভালো খেলছে। দুটি গোল পেয়েছে। সর্বশেষ ম্যাচে ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে যে কার্যকর গোলটা সে করেছে, বলা যায় স্পেন সে জন্যই টুর্নামেন্টে টিকে আছে।

এই ম্যাচে একটি বিষয় খেয়াল রাখতে হবে, যারা বেশি প্রতি–আক্রমণে কার্যকর হতে পারবে, তারাই এগিয়ে যাবে। সে ক্ষেত্রে ইতালিকেই আমি একটু এগিয়ে রাখছি।