উন্নতির খাতায় ২৬ রান যোগ ওয়েস্ট ইন্ডিজের

সাকিবদের তোপে আজ টিকতে পারেনি উইন্ডিজ।ছবি : শামসুল হক

ওয়েস্ট ইন্ডিজের মাটিতে ২০০৯ সালে সিরিজ জিতেছিল বাংলাদেশ। বলা হয়, সেটা ছিল ক্যারিবীয়দের দ্বিতীয় সারির দল। এখন প্রশ্ন উঠতে পারে, ওয়েস্ট ইন্ডিজের বর্তমান ওয়ানডে দলটি কি সেই দলের চেয়েও বাজে?

চলতি ওয়ানডে সিরিজে দুই ইনিংসে ব্যাট করল সফরকারী দল। দৃশ্যপটের কোনো পরিবর্তন নেই। বলা ভালো, জেসন মোহাম্মদের দল ফেরার মিছিলের দৃশ্যপট পাল্টাতে পারেনি। প্রথম উইকেট যাওয়ার পর তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়েছিল ব্যাটিং অর্ডার। ওদিকে এ সুযোগে নিজেদের বোলিং ফিগার সমৃদ্ধ করার চেষ্টা করেছেন বাংলাদেশের বোলাররা। যদিও শেষ উইকেট জুটিতে রোভম্যান পাওয়েল ও আকিল হোসেনের ৪০ বল ব্যাট করাটা চোখে বিঁধবে বোলারদের।

প্রথম ওয়ানডেতে ১২২ রানে অলআউট হওয়া ওয়েস্ট ইন্ডিজ আজ দ্বিতীয় ম্যাচেও আগে ব্যাট করতে নেমে মাত্র ২৬ রান উন্নতি করতে পেরেছে। দ্বিতীয় ম্যাচে ১৪৮ রানে অলআউট হয়েছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। বাংলাদেশের বোলারদের অস্বস্তির জায়গা হতে পারে, আগের ম্যাচের তুলনায় (৩২.২ ওভার) আজ বেশি সময় (৪৩.৪ ওভার) ব্যাট করেছে সফরকারী দল। কিন্তু ক্যারিবীয়ানসুলভ ব্যাটিংয়ের ছিটেফোঁটাও ছিল না। ছিল না বাজে বল পেলেই সীমানাছাড়া করার চেষ্টা। দ্রুত উইকেট হারিয়ে শেষ দিকে পুরো ৫০ ওভার খেলার চেষ্টা করতে গিয়ে খোলসে ঢুকে গিয়েছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ।

৩০ রানে ২ উইকেট নেন সাকিব আল হাসান।
ছবি : রয়টার্স

করোনাভাইরাসের কারণে মাঠে কোনো দর্শক ঢুকতে দেওয়া হয়নি। একদিক থেকে ভালো করেছে—মনে হতে পারে অনেকের। ব্যাটে-বলের যে লড়াই, সেটাই যে দেখা যাচ্ছে না! লড়াইটা হচ্ছে মূলত একপেশে, ম্যাড়ম্যাড়ে। বাংলাদেশের বোলারদের সামনে দাঁড়াতে পারছে না নিয়মিত খেলোয়াড়দের রেখে আনকোরা নতুন দল নিয়ে আসা ওয়েস্ট ইন্ডিজ। যদিও এই দলের প্রথম সাত ব্যাটসম্যানদের মধ্যে ঘরোয়া ক্রিকেটে সেরা কিছু পারফরমারও আছেন। কিন্তু বাংলাদেশের মাটিতে এই সিরিজে তাদের ব্যাটিং দেখে তা বিশ্বাস করা কঠিন, খুব কঠিন!

মোস্তাফিজুর রহমানের বল খেলতে ক্যারিবীয় ওপেনার সুনীল আমব্রিসের যে সমস্যা হচ্ছিল তা বোঝা গেছে প্রথম থেকেই। অতি সাবধানী ব্যাট করতে গিয়ে মোস্তাফিজকে উইকেট দেন আমব্রিস। ক্যাচ দেন মেহেদী হাসান মিরাজকে। ওয়েস্ট ইন্ডিজের সংগ্রহ তখন ৪.৫ ওভারে ১ উইকেটে ১০। অর্থাৎ, শুরুটা ভালো হয়নি ক্যারিবীয়দের। এখান থেকে ৫০ রান তুলতেই মিডলঅর্ডার হারিয়ে বসে তারা। ১৭.৪ ওভারে ৪১ রানে ৫ উইকেট! এখান থেকে ইনিংস গড়ার কাজটাও করতে পারেননি বাকিরা। পরিণতিটা তাই খুব স্বাভাবিক। ম্যাচের প্রথম ইনিংস শেষ হওয়া পর্যন্ত একপেশে, ভীষণ একপেশে লড়াই।

ক্যারিবীয়রা কতটা অগোছালো ব্যাট করেছে তার প্রমাণ মেহেদী হাসান মিরাজের করা ১৪তম ওভার। প্রথম বলেই এই স্পিনারের ভালো লেংথের বল উড়িয়ে মারতে গিয়ে এক্সট্রা কাভারে ক্যাচ দেন অভিষিক্ত ওটেলি। মাঝে দুই বল পর মিরাজের স্পিন বুঝতেই পারেননি জশুয়া দা সিলভা। বল বাঁক নেবে কি নেবে না—এটা ঠাহর করতে করতে বোল্ড! চারে ব্যাট করতে নামা আন্দ্রে ম্যাকার্থির ‘অপরাধ’ আরও বড়—আগের ওভারে দুটি উইকেট পড়লেও ম্যাকার্থির কাছে এটা কোনো বিষয় ছিল না! অন্তত পরের ওভারেই সাকিবকে স্লগ সুইপ করার অভিলাষ সে কথাই বলে। পরিণামে বোল্ড হতে হয় ম্যাকার্থিকে।

ওয়েস্ট ইন্ডিজের প্রথম ছয় ব্যাটসম্যানের স্কোর অনেকটাই মুঠোফোনের নম্বরের মতো। দুই অঙ্কে পৌঁছানো ওটেলি এতে খানিকটা আপত্তি জানাতে পারেন—৬,২৪,৫,৩,১১,০। প্রথম ছয় ব্যাটসম্যানের স্কোর এমন হলে বাকিদের কাছ থেকে এর চেয়ে ভালো কিছু দেখা নিশ্চিতভাবেই ‘বোনাস’। ওয়েস্ট ইন্ডিজ সেই বোনাসই পেয়েছে আটে নামা রোভমান পাওয়েলের কাছ থেকে। ওয়ানেডতে সেঞ্চুরি পাওয়া পাওয়েলের দৃঢ়তায় প্রথম ওয়ানডের স্কোর ছাপিয়ে যেতে পেরেছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ।৬৬ বলে ৪১ রান করেন তিনি। নবম উইকেটে আলজারি জোসেফের সঙ্গে ইনিংসে সর্বোচ্চ ৩২ রানের জুটি গড়েন পাওয়েল।

গোটা ইনিংসে উইকেট নিতে তেমন কষ্ট করতে হয়নি বাংলাদেশের বোলারদের। বুদ্ধি ও কৌশলের প্রয়োগে শুধু আলজারি জোসেফের উইকেটটা নিতে পেরেছে বাংলাদেশ। বাকি সব উইকেটের জন্য ক্যারিবীয়দের অবদানও কম না! দশে নামা পেসার জোসেফকে কাটার মেরে শর্ট গালিতে তামিমের ক্যাচে পরিণত করেন মোস্তাফিজ। শেষ দিকে তাঁর ‘কাটার শো’ দেখা গেছে। ৭.৫ ওভারে ১৫ রানে ২ উইকেট নেন মোস্তাফিজ। ৯.৪ ওভারে ২৫ রানে ৪ উইকেট মিরাজের। ৩০ রানে ২ উইকেট নেন সাকিব আল হাসান।