এবার আর্জেন্টিনা অনেক শক্তিশালী
আর্জেন্টিনার দক্ষিণ অঞ্চলে আমার জন্ম। সেখানে প্রচুর ঠান্ডা ও সারা বছর খুব ঝোড়ো হাওয়া বইতে থাকে। আমার বেড়ে ওঠাটা ইনডোরে ফুটবল খেলে। প্রতিবেশীদের সঙ্গে খুব হইহুল্লোড় করে ফুটবল খেলতাম। আমার ফুটবলপ্রিয় পরিবার কখনোই আমার ফুটবলস্বপ্নে বাধা হয়ে দাঁড়াননি। পরিবারের অন্য কেউ ফুটবল না খেললেও তাঁরা আমাকে পেশাদার ফুটবলার হিসেবে বেড়ে ওঠার স্বপ্নে অনুপ্রেরণা জুগিয়েছেন। পেশাদার ফুটবলার হিসেবে পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলে খেলেছি। বাংলাদেশে না এলে দারুণ কিছু বিষয় আমার অজানা থেকে যেত।
আর্জেন্টিনা ও বাংলাদেশে ভিন্ন মহাদেশের দুটি দেশ। ভাষা আলাদা, সংস্কৃতি আলাদা। ফুটবলে পার্থক্যটা আরও অনেক বেশি। অথচ এমন একটি দেশে আর্জেন্টিনার বিপুলসংখ্যক সমর্থক আমাকে অবাক করে দেয়।
আর্জেন্টিনার প্রতিটি ম্যাচই আমার কাছে বিশেষ কিছু এবং নিজের দেশকে প্রতিটি ম্যাচেই জয়ী দেখতে চাই। পৃথিবীর অনেক দেশে বসেই তো নিজের দেশের খেলা দেখেছি। একেক জায়গার অনুভূতি একেক রকম। বাংলাদেশে বসে আর্জেন্টিনার খেলা দেখার আনন্দটা একেবারেই উৎসবের মতো মনে হয়। কারণ, আশপাশে ছড়িয়ে আছে আমাদের দেশের বিপুলসংখ্যক সমর্থক। আমি আর্জেন্টিনার ফুটবলার হিসেবে বাড়তি ভালোবাসাও পাই।
বাংলাদেশে দেখেছি ব্রাজিলের সমর্থকও অনেক বেশি। শুনেছি, বিশ্বকাপের সময় এখানে প্রচুরসংখ্যক ব্রাজিল-আর্জেন্টিনার পতাকা ওড়ে। এ দুটি দল এবার কোপা আমেরিকার ফাইনালে ওঠায় বাংলাদেশের সমর্থকদের মধ্যে রোমাঞ্চটা যে অনেক বেশি, তা বুঝতে পারছি। একটি খবর শুনে খুবই মর্মাহত হয়েছি। বাংলাদেশের কোথায় নাকি ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনার সমর্থকেরা মারামারি করেছেন। আর্জেন্টিনার সমর্থককে হাসপাতালে নিতে হয়েছে। এটা কোনো ভালো সমর্থকদের কাজ নয়।
প্রতিপক্ষ সমর্থকদের সঙ্গে মজাও করতে পারে। কিন্তু মারামারি করা পাগলদের কাজ।
সমর্থকেরা খেলা উপভোগ করবে। প্রতিপক্ষ সমর্থকদের সঙ্গে মজাও করতে পারে। কিন্তু মারামারি করা পাগলদের কাজ। বসুন্ধরা কিংসে ব্রাজিলের রবসন রবিনিও ও জোনাথন ফার্নান্দেজ আমার সতীর্থ। আমরা নিজেরা তো শত্রু নই। ফাইনাল খেলা নিয়ে তাঁদের সঙ্গে আমি খোঁচাখুঁচি শুরু করেছি। কিন্তু সেটা শুধু মজা করে।
বুঝতে পারছি আমরা এখানে এমন দুটি দেশের প্রতিনিধিত্ব করছি, যেখানে আমাদের প্রচুরসংখ্যক সমর্থক রয়েছে, যাঁরা ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনাকে পুরোপুরি আবেগ দিয়ে ভালোবাসেন। বাস্তবতা হলো ফুটবলের বাইরে আমরা দক্ষিণ আমেরিকান দুটি দেশের ভাই। তাই আমরা সবাই একসঙ্গে বসেও উপভোগ করতে পারি ফাইনাল খেলাটা।
ফাইনালটা খুবই উপভোগ্য হবে। দুই দলেরই জয়ের সম্ভাবনা সমান সমান। ব্রাজিলের মাটিতে ব্রাজিলকে হারানো খুব কঠিন কাজ। তবে আমি এবার আমাদের দলের ওপর বেশি আত্মবিশ্বাসী। দলটা এবার অনেক বেশি শক্তিশালী। খুব কৌশলী ফুটবল খেলছে তারা। ‘ওপেন প্লে’তে নিজেদের পরীক্ষা দেওয়ার পর সেমিফাইনালে কলম্বিয়ার বিপক্ষে দিয়েছে কঠিন স্নায়ুর পরীক্ষাও। আর্জেন্টিনা দল নিয়ে কথা বলতে গেলে লিওনেল মেসির জন্যই বেশি কথা বলতে হয়। এই টুর্নামেন্টে মেসিকে খুব প্রাণবন্ত দেখছি।
ব্রাজিলের মাঠে থেকেই সে যে কাপটি জিততে মরিয়া, তার শরীরী ভাষায় তা ফুটে উঠেছে। দলটাকে কীভাবে একটা সুতোয় গাঁথা যায়, সেদিকেও মেসির মনোযোগ আছে। সতীর্থ খেলোয়াড়দের নিয়ে প্রতিটি গোল উদ্যাপন করছেন খুব প্রাণবন্ত হয়ে। দেখে মনে হচ্ছে গোলটা যেন সবার। ৩৪ বছর বয়সে এসেও তাকে তরুণ ফুটবলারদের ক্ষুধার্ত মনে হচ্ছে। আশা করি, সে এই কাপটি জিতবে এবং আর্জেন্টিনার জার্সিতে আরও তিন থেকে চার বছর খেলবে।