কালবৈশাখীর পর কিংসের ওপর বয়ে গেল কোলাসো–ঝড়

হ্যাটট্রিক করেছেন লিস্টন কোলাসো ( সবার বামে)ছবি: সংগৃহীত

অবিশ্বাস্য, দুঃস্বপ্ন—এ রকম আরও কিছু শব্দ যোগ করে দেওয়া যেতে পারে। বসুন্ধরা কিংস ৪-০ গোলে উড়ে গেছে, এমনটা হয় নাকি!

এএফসি কাপে সেই কাজটি করে দেখিয়েছে মোহনবাগান। কলকাতার সল্টলেক স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়নদের ওপর দিয়ে আজ ঝড় বইয়ে দিয়েছে তারা।

হ্যাটট্রিক করেছেন ভারতের স্থানীয় উইঙ্গার লিস্টন কোলাসো, অন্য গোলটি ডেভিড উইলিয়ামসের। দুই অর্ধে দুটি করে গোল খেয়েছে কিংস।

আরও পড়ুন

ম্যাচের শুরুতেই কালবৈশাখী। ১২ মিনিট খেলা হওয়ার পর ঝড় ও প্রচণ্ড বৃষ্টির কারণে ম্যাচটি সাময়িকভাবে স্থগিত করা হয়। মাঝে প্রায় ৩৫ মিনিট খেলা বন্ধ থাকার পর ঝড়বৃষ্টির চোখরাঙানো শেষে আবার শুরু হয় খেলা।

এর পরে কিংসের ওপর দিয়ে বয়ে গেল কোলাসো–ঝড়। ২৯ মিনিটের ব্যবধানে হ্যাটট্রিক করেছেন ২৩ বছর বয়সী গোয়ানিজ ফরোয়ার্ড।

৪-০ গোলের স্কোরলাইন শুনলে মনে হতে পারে একেবারেই মোহনবাগানের কাছে আত্মসমর্পণ করেছে বাংলাদেশের চ্যাম্পিয়নরা। অথচ শুরুর গল্পটা ছিল অন্য রকম। প্রথম ২১ মিনিটের মধ্যে তিনটি গোলের সুযোগ পায় কিংস।

এর মধ্যে দুটি বল পোস্টে লেগে ফিরে আসে। এর পর থেকে বাগানে ফুটবল ফুল এবং এর বেশির ভাগ দায় কিংসের রক্ষণভাগকে দিতে হবে। অবশ্য শুধু কিংসের রক্ষণভাগ নয়, মাঝমাঠ বা ফরোয়ার্ড লাইন—কোনো বিভাগেই বাগানের খেলোয়াড়দের সঙ্গে পেরে ওঠেনি কিংসের খেলোয়াড়েরা। কোলাসোকে তো থামানোই গেল না।

অথচ দুরন্ত গতিময় কোলাসোকে থামানোর জন্য আজ ডান প্রান্তে খেলানো হয় প্রথাগত দুই রাইটব্যাককে। এর মধ্যে তারিক কাজী রাইটব্যাকে আর রিমন হোসেন রাইট উইঙ্গার হিসেবে খেলেন।

আসলে নামেই উইঙ্গার, তাঁর কাজ ছিল কোলাসোকে মার্কিংয়ে রাখা আর তাঁর পায়ে বল গেলে বাধা দেওয়া। কিন্তু ভারতীয় জাতীয় দলের এই উইঙ্গারকে থামানো গেল না। তাঁর কাছে লন্ডভন্ড হতে হলো কিংসকে।

অবশ্য কোলাসো তিনটি গোলই করেছে কিংসের ডিফেন্ডারদের বড় বড় ভুলের সুযোগে। কিংসের দুই সেন্টারব্যাক বিশ্বনাথ ঘোষ ও খালিদ শাফিই আজ যে ভুল করেছেন, এএফসি কাপের মতো আসরে তার মূল্য চুকাতেই হয়।

২৫ মিনিটে বিশ্বনাথের ভুলে গোলের খাতা খুললেন কোলাসো। গোলমুখে বল বিপদ–মুক্ত করতে ব্যর্থ হন বিশ্বনাথ, কোলাসোর কাজ ছিল শুধু টোকা দিয়ে জালে জড়ানো। সে কাজ করতে কোনো ভুলই করেননি বাগানের এই উইঙ্গার।

গোল করছেন কোলাসো
ছবি: সংগৃহীত

কিংসকে রক্ষণভাগ ওপরে উঠিয়ে খেলানোর খেসারত দিতে হলো ৩৩ মিনিটে দ্বিতীয় গোল খেয়ে। শ্লথগতির রক্ষণভাগের খেলোয়াড়েরা মাঝমাঠে এসে দাঁড়িয়েছিলেন। জনি কাউকো রক্ষণচেরা এক পাস দিলেন আর তাতেই উন্মুক্ত হয়ে গেল কিংসের গোলমুখ।

গতির ঝড় তুলে বলের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে বক্সে ঢুকে পড়লেন কোলাসো। পোস্ট ছেড়ে বের হয়ে এসেছিলেন গোলকিপার আনিসুর রহমান। তাঁকে আউটসাইড ডজে পরাস্ত করে দেখে শুনে বলটা পোস্টে রাখলেন কোলাসো।

প্রথমার্ধের গোলের ধারাটা দ্বিতীয়ার্ধেও ধরে রাখলেন কোলাসো। ৫৩ মিনিটে খালিদের ভুলের সুযোগটা কাজে লাগালেন মানভির সিং ও কোলাসো জুটি। ইরানের এই ডিফেন্ডার বল ক্লিয়ার করতে ব্যর্থ হলে বল পায় মানভির।

বক্সে ঢুকে কাটব্যাক করলে সেটি দেখেশুনে জালে জড়িয়েছেন কোলাসো। কিংসের জালে চতুর্থ গোলটা বদলি অস্ট্রেলিয়ান ফরোয়ার্ড ডেভিড উইলিয়ামসের।

গোকুলাম কেরালার বিপক্ষে ৪-২ গোলে হেরে এএফসি কাপ শুরু করেছিল মোহনবাগান। আজ সেই দলটিই কিনা কিংসের বিপক্ষে করল গোল উৎসব। অবশ্য এই হারের পরও কিংসের পরবর্তী রাউন্ডে যাওয়ার স্বপ্ন টিকে থাকল। ২৪ মে শেষ ম্যাচে তাদের প্রতিপক্ষ ভারতের আরেক দল গোকুলাম কেরালা।