কী কথা হয়েছিল মেসি-তিতে-স্কালোনির?

মেসি-নেইমার-তিতে ও স্কালোনির আলাপে জড়িয়ে যান আনভিসার এক কর্মকর্তাওছবি: রয়টার্স

ম্যাচের মিনিট সাতেক খেলা হয়ে গিয়েছিল। এর মধ্যে নেইমারের সঙ্গে ক্রিস্টিয়ান রোমেরো ও লিয়ান্দ্রো পারেদেসের একটু ধাক্কাধাক্কিও হলো মাঠে। ধাক্কাধাক্কি বলতে কড়া ট্যাকল আর এরপর কথা-কাটাকাটি কী! ব্রাজিল আর আর্জেন্টিনার ম্যাচ বলে কথা, এমন একটু ধাক্কাধাক্কি তো হবেই!

কিন্তু ম্যাচটাতে যখন উত্তেজনা ছড়াবে বলে অনুমান করা যাচ্ছিল, তখনই হঠাৎ খেলা বন্ধ। মাঠে ঢুকলেন ব্রাজিলের স্বাস্থ্যসেবা বিষয়ক প্রতিষ্ঠান আনভিসার লোকজন। ইংল্যান্ড থেকে ব্রাজিলে যাওয়া অ-ব্রাজিলীয়দের স্বাস্থ্যবিধি মানা নিয়ে ব্রাজিলে অনেক কড়াকড়ি আছে, ইংল্যান্ডের ক্লাবে খেলা আর্জেন্টিনার চার খেলোয়াড় সেসব মানেননি—এই অভিযোগে ওই চার খেলোয়াড়কে মাঠ থেকে উঠিয়ে নিয়ে আর্জেন্টিনায় ফেরত পাঠানোর ব্যবস্থা নিতে চেয়েছিল আনভিসা। ব্যস, খেলা বন্ধ!

শেষ পর্যন্ত স্থগিত হয়ে যায় ম্যাচটা। কিন্তু তার আগে দুই পক্ষের অনেক কথা হয়েছে এর মধ্যে। আর্জেন্টিনা অধিনায়ক লিওনেল মেসি ও কোচ লিওনেল স্কালোনি আর ব্রাজিলের অধিনায়ক নেইমার ও ব্রাজিল কোচ তিতেকেও একটা পর্যায়ে দেখা গেল কথা বলতে। কী কথা হয়েছে তাঁদের, সেটা জানিয়েছে আর্জেন্টাইন সংবাদমাধ্যম টিওয়াইসি স্পোর্ত।

আনভিসার কর্মকর্তার সঙ্গে কথা কাটাকাটি হচ্ছে মেসির
ছবি: রয়টার্স

আনভিসার বিতর্কিত ভূমিকায় কাল দারুণ রোমাঞ্চ ছড়ানো দ্বৈরথ আর হতে পারেনি। ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা ম্যাচের আগে দুই দল ঘোষিত হওয়ার সময়ই জানা ছিল, যে চার আর্জেন্টাইন ফুটবলারকে আনভিসার আপত্তি, সেই এমিলিয়ানো মার্তিনেজ (অ্যাস্টন ভিলা), এমিলিয়ানো বুয়েন্দিয়া (অ্যাস্টন ভিলা), জিওভান্নি লো সেলসো (টটেনহাম) ও ক্রিস্টিয়ান রোমেরো (টটেনহাম) আর্জেন্টিনা দলে আছেন। ব্রাজিলে যাওয়ার আগে তাঁরা ভেনেজুয়েলায় বিশ্বকাপ বাছাইপর্বের আরেক ম্যাচ খেলবেন, সে-ও জানা ছিল।

বিশ্বকাপ বাছাইপর্বের ম্যাচের আগে সর্বশেষ ২৯ আগস্ট তাঁরা প্রিমিয়ার লিগে খেলেছেন, সেটাও জানা। অর্থাৎ, ইংল্যান্ডে লিগের ম্যাচ খেলে ভেনেজুয়েলা হয়ে ব্রাজিলে ফিরলেও তত দিনে ১৪ দিন পার হবে না, জানা ছিল। কিন্তু তখন কিছুই বলেনি আনভিসা।

আর্জেন্টিনা দল তিন দিন ধরে ব্রাজিলে অবস্থান করলেও সে সময়ে আনভিসা কিছুই করেনি। এর মধ্যে হোটেল ছেড়ে বেরিয়ে খেলোয়াড়েরা অনুশীলন করেছেন।

ফটোগ্রাফারের বিব পরে মাঠে ফেরেন মেসি
ছবি: এএফপি

কিন্তু ম্যাচের ঘণ্টা দু-এক আগে হঠাৎ আনভিসা দাবি করে বসে, আর্জেন্টিনার চার খেলোয়াড় ইংল্যান্ড থেকে যে গেছেন, সেটা জানাননি। তাঁরা ইমিগ্রেশনের কাগজ-পত্রে ভেনেজুয়েলা থেকে যাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন। ওদিকে আর্জেন্টিনার দাবি, তাদের খেলোয়াড়দের খেলতে কোনো বাধা নেই, সে কথা কনমেবল আগেই জানিয়ে দিয়েছে।

ব্যস, লেগে গেল দুই পক্ষের। ম্যাচের মিনিট সাতেক গড়াতে মাঠে ঢুকে পড়লেন আনভিসার কর্মকর্তারা। তাঁদের সঙ্গে পুলিশও ছিলেন। সেখান থেকেই ঝামেলার শুরু। কথা-কাটাকাটি, হালকা ধাক্কাধাক্কি, একে অন্যকে বোঝানো আর যুক্তি উপস্থাপনের চেষ্টা...কত কিছুই না হলো! এর মধ্যে আর্জেন্টিনা দল মাঠ ছেড়ে ড্রেসিংরুমে চলে গেল।

কিছুক্ষণ পর আবার দেখা গেল, ফটোসাংবাদিকের জন্য নির্ধারিত ‘ফোটো’ লেখা বিব গায়ে জড়িয়ে মাঠে এলেন মেসি। ড্রেসিংরুমের টানেলে তাঁর সঙ্গে অনেকক্ষণ খোশগল্প হলো সাবেক ক্লাব বার্সেলোনায় সাবেক সতীর্থ ও বন্ধু দানি আলভেসের। এরপর মেসি মাঠে এসে কথা বললেন ব্রাজিলিয়ানদের সঙ্গে। মেসির সঙ্গে ছিলেন স্কালোনি, ব্রাজিলের পক্ষে ছিলেন তিতে ও নেইমার। কাসেমিরো আর ব্রাজিল দলের ব্যবস্থাপক জুনিনিও পলিস্তাও ছিলেন।

কী কথা হলো তাঁদের মধ্যে? টিওয়াইসি স্পোর্ত লিখেছে, তিতে প্রথমে মেসির সঙ্গে কথা বললেন। সে সময়ে মেসি তাঁকে দলের সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে দিলেন, ‘আমি চলে যাচ্ছি।’ জুনিনিও বললেন, ‘ওরা (আনভিসা) সবকিছুই ভুলভাবে করছে। খেলোয়াড়দের সবকিছু জানানোর আগেই হুমকি ধামকি দিয়েছে!’

এ সময়ে মেসি কিছুটা রেগে যান, ‘ওরা তো আমাদের কিছু বলেনি। আমরা এখানে তিন দিন ধরে আছি। ওদের কিছু বলার থাকলে তো প্রথম দিনেই বলতে পারত, এভাবে (মাঠে এসে) নয়!’ তিতে তখন জিজ্ঞেস করেন, ‘ওরা তোমাদের কিছুই বলেনি!’ মেসি উত্তরে তিতেকে আশ্বস্ত করেন। স্কালোনি যোগ করেন, ‘জুনিনিও, ওরা হোটেলে কেন ওই খেলোয়াড়দের খোঁজে গেল না? কনমেবল তো বলেছে, ওরা খেলতে পারবে।’ পাশাপাশি জানিয়ে দেন, ‘আর খেলা হবে না।’

এরপর আরও কিছুক্ষণ আলোচনা চলে, এ সময়ে মেসি আবার রেগে গিয়ে বলেন, ‘তিন দিন ধরে ব্রাজিলে আছি আমরা, ওদের এসব জানানোর জন্য ম্যাচ শুরু হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হলো? ওরা আগে কেন জানায়নি? ওদের হোটেলে গিয়ে এসব বলা উচিত ছিল।’

এ সময়ে কাসেমিরো এসে মেসির কানে কানে কী যেন বলেন, তবে কথার সময়ে মুখ ঢেকে রাখায় সেটা বোঝা যায়নি। মেসি এরপর ড্রেসিংরুমে ফিরে যান।