কেন পারছে না আবাহনী-মোহামেডান

পেছনে উজ্জ্বল অতীত। কিন্তু বর্তমানটা বড্ড ধূসর। ফুটবলে আবাহনী-মোহামেডানের আত্মপরিচয় তুলে ধরতে এই দুটি বাক্যই সবচেয়ে উপযুক্ত।
আবাহনী-মোহামেডানকে নিয়ে এ দেশের ফুটবলে হাহাকার চলছে। সেটি আরও বাড়িয়ে দিল শেখ জামাল ধানমন্ডি। তিন দিন আগে ভুটানের কিংস কাপ জিতেছে তারা, গত তিন বছরে তিনবার বিদেশে গিয়ে দুটি শিরোপা, একবার রানার্সআপ। দেশের বাইরেও উজ্জ্বল শেখ জামাল।
নতুন সূর্য উঠবে, নতুন আলো ছড়াবে, এই তো নিয়ম। কিন্তু বাংলাদেশের ফুটবলে আবাহনী-মোহামেডান বিবর্ণ মানে মাঠে দর্শক-খরা, উন্মাদনায় ভাটা। দুর্ভাগ্যজনকভাবে এসবের কুপ্রভাবে দুই প্রধানই গতি হারিয়েছে। ঘরোয়া ফুটবলেও পড়েছে এর নেতিবাচক প্রভাব।
আবাহনী ২০১০ সালে আসামে বরদুলই ট্রফি জিতেছিল। তার আগে দুবার নাগজি ট্রফি ও চার্মস কাপ জিতেছে। টুকটাক আরও কিছু সাফল্য আছে। মোহামেডানও ঘরে এনেছে ভারতের এয়ারলাইনস কাপসহ আরও দু-একটা ট্রফি। সেসবের সঙ্গে শেখ জামালের সাফল্য তুলনীয় নয়। কিন্তু আজকের বাস্তবতায় আবাহনী-মোহামেডান কেন পারছে না, এমন প্রশ্ন আসবেই।
আবাহনীর ম্যানেজার সত্যজিৎ দাস রুপুকে একটু ক্রুদ্ধই লাগল প্রশ্নটা করার পর। এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করবেন না বলে পণ করলেন। তিনি যেন বোঝাতে চাইলেন শেখ জামালকে ঘিরে এখন যে মাতামাতি চলছে, আবাহনী বরদুলই ট্রফি জেতার পর তো তেমনটা হয়নি।
সেটা ভিন্ন বিতর্ক। তবে অনেকেই আফসোস করেন, আবাহনী-মোহামেডানের যে ঐতিহ্য তারা চাইলে অনেক কিছুই করতে পারে। কিন্তু যেকোনো কারণেই হোক সেটা হচ্ছে না। দুই দলেরই ব্যবস্থাপনায় কমবেশি গলদ বেরিয়ে আসে প্রায়ই। সমর্থকেরা এসব নিয়ে মাঠে এসে চেঁচামেচি করেন। কর্মকর্তাদের কারও কারও নাম ধরে গালাগালও করতে শোনা যায়।
মোহামেডানের দাপট কেন নেই মাঠে? ক্লাবের ডাইরেক্টর ইনচার্জ লোকমান হোসেন ভূঁইয়ার উত্তর, ‘শেখ জামাল যেভাবে টাকা খরচ করে সেভাবে আমরা পারি না। আমাদের সেই সামর্থ্য নেই। ক্লাব চলছে চাঁদার টাকায়। তাই ইচ্ছে থাকলেও অনেক কিছু করা যায় না।’ এ অবস্থা থেকে উত্তরণে ক্লাবের নিজস্ব বিলাসবহুল বহুতল ভবনসহ স্থায়ী আয়ের উৎস তৈরি হচ্ছে বলে আশার বাণী শোনালেন তিনি।
আবাহনীর তো ‘টাকার সমস্যা’ আছে বলে কোনো কর্মকর্তাকে হাপিত্যেশ করতে শোনা যায়নি! তার পরও গত দুই মৌসুম দলটির ট্রফিঘর শূন্য। এবার ভুটানের কিংস কাপে গিয়ে স্থানীয় উগেন একাডেমির তরুণ দলের কাছে হারের লজ্জায় ডুবেছে। যে উগেনকে নেপালের মানাং মার্সিয়াংদি ভাসিয়েছে ৫ গোলে। সাম্প্রতিক সময়ে পাঁচবার এএফসি প্রেসিডেন্টস কাপে প্রতিবারই প্রথম পর্বে বিদায়। এমন ব্যর্থতা আবাহনী সমৃদ্ধ অতীতকে মলিনই করছে।
মোহামেডান তো দেশের বাইরে যাওয়ারই সুযোগ পায়নি গত কয়েক বছর। ৭টি পেশাদার লিগে একটি বারও চ্যাম্পিয়ন হতে পারেনি তারা। মাঝেমধ্যে টুর্নামেন্টে জেগে ওঠে মোহামেডান, কিন্তু লম্বা পরিসরে খাবি খায়। গত মৌসুমে বড় বাজেটের দল গড়া হয়েছিল, কিন্তু কয়েকজন খেলোয়াড় নাকি মাঠে শতভাগ দেননি। দু-তিনজন নানা বাহানা করে মাঠের বাইরেই বসে ছিলেন বছরজুড়ে! খেলোয়াড়দের কাছ থেকে শতভাগ আদায় করার দায়িত্ব টিম ম্যানেজমেন্টের। সেটি তারা পারেনি। এটাই বাস্তবতা।
মোহামেডান এবার তো শিরোপা জেতার মতো দলই হয়নি। শেখ জামালের পর আবাহনী তুলনামূলক ভালো দল গড়েছে। স্থানীয় খেলোয়াড় আসলে উনিশ-বিশ। দলের শক্তি বাড়ায় ভালো বিদেশি। ঠিক এখানেই গত কয়েক বছরে মোহামেডান চরমভাবে ব্যর্থ। সস্তায় খেলোয়াড় আনে দলটি। আবাহনী বিদেশি খেলোয়াড়ের পেছনে টাকা ঢালে ঠিকই, কিন্তু তাদের চিন্তায় বড় গলদ, ‘চলে না’ তকমা পাওয়া বিদেশি আনা। টাকার বড় অংশই অপাত্রে ব্যয়! সনি নর্দের মতো একজন মনকাড়া বিদেশি আনার চেষ্টা আবাহনী করছে বলে শোনা যায়নি আজও।
আবাহনী তবু একটু হলেও চাইছে মাঠে কিছু করতে, এবার তারা কোচ করে আনছে বাংলাদেশের সাবেক কোচ জর্জ কোটানকে। কিন্তু মোহামেডান? মতিঝিল ক্লাব চত্বর ঝকঝকে হলেও ফুটবল মাঠে দাপট ফেরানোর কোনো ইচ্ছেরই প্রতিফলন আপাতত সেখানে খুঁজে পাওয়া কঠিন।