স্তুতিবাক্য বিনিময়ের শুরুটা ক্লপই করেছেন, ‘পেপ বিশ্বের সেরা কোচ। আমার কাছে মনে হয় এ নিয়ে আমাদের সবারই একমত হওয়া উচিৎ। ওর সামর্থ্য নিয়ে কেউ সন্দেহ প্রকাশ করলে আমি জানি না মানুষ কীভাবে সেটা করতে পারে।’
গার্দিওলা গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচের আগে সবসময় বাড়তি চিন্তা করেন, বাড়তি চিন্তা করে সহজ জিনিসকেও ইচ্ছে করে কঠিন বানান। এমনই এক সমালোচনা বছরের পর বছর ধরে গার্দিওলা শুনে আসছেন। এই সমালোচনা নিয়ে সেদিন ঠাট্টাচ্ছলে জানিয়েছিলেন, ‘আমি বাড়তি চিন্তা করি। বাড়তি চিন্তা করতে পছন্দ করি।’
অনেক গণমাধ্যম ঠাট্টার ব্যাপারটা ধরতে পেরেছে, অনেকে পারেনি। পারেনি দেখে সেটা নিয়েও উল্টো সমালোচনা হচ্ছে। গার্দিওলার সমালোচনা দেখে ঢাল হয়ে এগিয়ে এসেছেন খোদ ক্লপ, ‘ওটা তিনি ব্যঙ্গ করে বলেছেন! আপনাদের (সাংবাদিক হিসেবে) একটা দায়িত্ব আছে, আপনারা যদি আমাদের সঙ্গে কথা বলতে চান তাহলে দয়া করে আমাদের এ ব্যাপারে সাহায্য করুন। সেদিন আমিও লুইস দিয়াজকে নিয়ে ঠাট্টা করে একটা কথা বলেছিলাম, যেটা ধরে ইকুয়েডরে দেখলাম একটা খবর ছাপা হয়েছে আমি নাকি লুইস দিয়াজের কথা বুঝতে পারি না! পেপ গার্দিওলাও ওভাবেই ঠাট্টা করেছেন, ইচ্ছে করে বলেছেন ‘‘আমি বাড়তি চিন্তা করি। বাড়তি চিন্তা করতে পছন্দ করি।’’’
গত চার বছর ধরে লিভারপুল আর সিটি একে অন্যকে নিয়মিত কঠিন সময় উপহার দিয়ে যাচ্ছে। সিটির জন্যই লিভারপুল অনেক শিরোপায় হাত দিতে পারেনি, আবার লিভারপুলও সিটিকে সহজে কোনোকিছু জিততে দেয়নি। ক্লপ আর গার্দিওলা প্রতিনিয়ত এভাবে যোগ্য প্রতিপক্ষ হয়ে একে অন্যের কাজ কঠিন করে প্রকারান্তরে নিজেদের আরও ঋদ্ধ করছেন, আরও উন্নত করছেন। এ ব্যাপারটাই রজার ফেদেরার আর রাফায়েল নাদালের দ্বৈরথের কথা মনে করিয়ে দিয়েছে ক্লপকে, ‘খেলাধুলায় একজন যোগ্য প্রতিপক্ষ থাকার ব্যাপারটা আপনাকে সবচেয়ে বেশি সাহায্য করবে। বিশেষ করে দীর্ঘমেয়াদে। আমি নিশ্চিত রজার ফেদেরার আর রাফায়েল নাদালও নিজেদের এভাবে অনেক সাহায্য করে। আমার মনে হয় না প্রতিপক্ষ হিসেবে তাঁদের একজন অন্য জনকে না পেলে এত উন্নতি করতে পারতেন।’
ব্রিটিশ গণমাধ্যম টেলিগ্রাফে লেখা এক কলামে লিভারপুলের সাবেক কিংবদন্তি জেমি ক্যারাঘার জানিয়েছেন, লিভারপুল-সিটির এই দ্বৈরথ ব্রিটিশ ফুটবল ইতিহাসেরই সেরা। নব্বইয়ের দশকে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড-আর্সেনাল কিংবা এই শতকের প্রথম দশকে চেলসির সঙ্গে ইউনাইটেডের দ্বৈরথকেও ছাড়িয়ে গিয়েছে লিভারপুল-সিটির এই লড়াই। ক্যারাঘারের কাছে মনে হয়েছে, এই দুটি দলই এখন বিশ্বের সেরা।
এ নিয়ে ক্লপের মন্তব্য জানতে চাওয়া হলে ক্লপ প্রথমে জানতে চান কথাটা কে বলেছেন। যেই শুনলেন ক্যারাঘারের নাম, সঙ্গে সঙ্গে সম্মত হলেন, অনেকটা ঠাট্টাচ্ছলেই! যেন অন্য কেউ বললে রাজি হতেন না। যদিও পরে এ নিয়ে নিজের দৃষ্টিভঙ্গি ব্যাখ্যা করেছেন, ‘আমি সারা জীবন অনেক ফুটবল খেলা দেখেছি। অনেক বড় বড় দ্বৈরথ দেখার সুযোগ হয়েছে। গত চার বছর ধরে এই দুই দলের মধ্যে যা হচ্ছে, তা দুর্দান্ত। আমরাও আমাদের খেলার মান বাড়াতে পেরেছি। সিটির বিপক্ষে ব্যবধান কমাতে পেরেছি আমরা, একে অপরকে উন্নত করার জন্য প্রতিনিয়ত অনুপ্রাণিত করে যাচ্ছি। আমি জানতাম না এই লিগে এসে এমন প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়ে তোলা সম্ভব, কিন্তু এই দুই দল নিয়মিত যে ধারাবাহিকতা দেখিয়েছে তা অবিশ্বাস্য।’
এই ধারাবাহিকতার ব্যাপারে একমত হয়েছেন গার্দিওলাও, ‘যখন আমি অবসর নেব, খেলা দেখব আর গলফ খেলব, ক্যারিয়ারের দিকে ফিরে তাকালে তখন লিভারপুলকেই আমার সবচেয়ে বড় প্রতিপক্ষ বলে মনে হবে। আমরা দুজনই নিজ নিজ ক্লাবে চার-পাঁচ বছর করে সময় পেয়েছি। এই সময়ে আমাদের ধারাবাহিকতা দুর্দান্ত ছিল। এই ধারাবাহিকতার কারণেই ফেদেরার, নাদাল ও জোকোভিচের মতো খেলোয়াড়েরা শীর্ষে থেকেছেন। আপনি যখনই ১০০ বা ৯৮ পয়েন্ট করে পাবেন, কোনো একজন প্রতিপক্ষ লাগবেই ক্রমাগত আপনাকে চ্যালেঞ্জ জানানোর জন্য। যাতে আপনি আরও উন্নতির পরবর্তী ধাপে যেতে পারেন।’
এই চ্যালেঞ্জেরই পরবর্তী অধ্যায় রচিত হতে যাচ্ছে আগামীকাল, সিটির মাঠ ইতিহাদে। লিভারপুল কী পারবে সিটির কাজ আরেকটু কঠিন করে তুলতে?