আরেকটা ম্যাচ। আরেকটা হার। তাতে লিগ কাপ থেকে বিদায়। আরও গভীর সংকটে হোসে মরিনহো। দলের পারফরম্যান্স, খেলোয়াড়দের সঙ্গে বিবাদের গুঞ্জন, চাকরি হারানোর শঙ্কা—এসব এখন নিত্য সঙ্গী। তবে এত এত চাপ, হতাশার পরও রাতের ঘুমটা নাকি ভালোই হচ্ছে চেলসি কোচের!
হতাশা কাল আরও বাড়িয়ে দিল লিগ কাপ থেকে বিদায় নেওয়াটা। লিগে ওয়েস্ট হামের কাছে হারের চার দিনের মধ্যেই কাল লিগ কাপে স্টোক সিটির কাছে হারতে হলো পেনাল্টি শ্যুট আউটে ৫-৪ গোলে। দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই পিছিয়ে পড়া চেলসি নির্ধারিত সময়েই হেরে যেতে পারত। হারতে দেননি প্রথমার্ধে চোটে পড়া ডিয়েগো কস্তার বদলি হিসেবে নামা স্ট্রাইকার লোইক রেমি। ৯১ মিনিটে গোল করে দলকে সমতায় ফিরিয়েছিলেন তিনি। তবে পেনাল্টিতে গিয়ে আর শেষ রক্ষা হলো না।
ইংলিশ ফুটবলে সবচেয়ে বড় ‘চ্যালেঞ্জে’র সঙ্গে জড়িয়ে আছে স্টোক সিটির নামটা। রোনালদো-মেসির বিতর্কে আর্জেন্টাইন ফরোয়ার্ডের ‘দুর্বলতা’ বোঝাতে স্কাই স্পোর্টসের অনুষ্ঠানে সাবেক স্কটিশ স্ট্রাইকার অ্যান্ডি গ্রে একবার বলেছিলেন, ‘...কিন্তু ও কি পারবে স্টোকের মাঠে ঠান্ডা বৃষ্টির রাতে এমন কিছু (বার্সেলোনার মতো পারফরম্যান্স) করতে?’ এর পর থেকেই মজা করে হলেও ইংলিশ ফুটবলের কঠিন চ্যালেঞ্জ বোঝাতে এই কথাটা খুব বেশি ব্যবহার করা হয়। এই মৌসুমে চেলসির চ্যালেঞ্জ তো এমনিতেই পাহাড় সমান হয়ে গেছে। তার ওপর স্টোকের মাঠে লিগ কাপের ম্যাচে খেলার ‘আকাশচুম্বী’ চ্যালেঞ্জটা বোধ হয় একটু বেশিই হয়ে গেল। এমনই যে, স্টোকের ফিল বার্ডসলির লাল কার্ডের পর অতিরিক্ত সময়ের প্রায় পুরোটাই একজন বেশি নিয়ে খেলেও আর জিততে পারল না চেলসি। হ্যাজার্ডের মতো পেনাল্টি-বিশেষজ্ঞও ঠান্ডা রাখতে পারলেন না মাথা।
গত মৌসুমে প্রিমিয়ার লিগের পাশাপাশি এই প্রতিযোগিতাও জিতেছিল চেলসি। এবারও কী দারুণ ‘মিল’! লিগের দুর্দশার সঙ্গে হাত ফসকে গেল লিগ কাপও। সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে এই মৌসুমে চেলসি হেরেছে আটটি ম্যাচে। লিগে অবস্থান অবনমন অঞ্চলের মাত্র ৩ ধাপ ওপরে। ইংলিশ সংবাদমাধ্যমে জোর গুঞ্জন, আগামী শনিবার লিগে লিভারপুলের সঙ্গে ম্যাচটায় হারলেই পাততাড়ি গোটাতে হবে মরিনহোকে। তবে মরিনহোর দাবি, তিনি শান্তই আছেন।
দুর্দশা থেকে মুক্তির আশাতেই হয়তো, ম্যাচের পর সংবাদ সম্মেলনে তাঁর মন পড়ে রইল ‘ছুটি’তে, ‘আগামীকাল আমার ছুটি। আমার একটা সুন্দর পরিবার আছে। কাল ও বৃহস্পতিবার দিনটা বেশ উপভোগ করব। রাতে ভালোই ঘুম হচ্ছে।’
চাকরি থেকে ‘স্থায়ী ছুটি’র গুঞ্জনটাকে অবশ্য উড়িয়েই দিতে চাইলেন। তিন সপ্তাহ আগে চেলসি পরিচালকেরা মরিনহোর প্রতি প্রকাশ্যে আস্থা ভোট দিয়েছিলেন। চাকরি বাঁচাতে বার বার এমন ‘ওপর-ওয়ালা’দের ভোটের দরকার দেখছেন না মরিনহো, ‘এটার দরকার নেই। এর বেশি কিছুই আমার দরকার নেই।’ উড়িয়ে দিলেন খেলোয়াড়দের সমর্থন হারানোর গুজবটাও, ‘আসলেই কী আপনাদের মনে হয় খেলোয়াড়েরা আমার সঙ্গে নেই? এটা দুঃখজনক। আমার জন্য নয়, খেলোয়াড়দের জন্য। এটা ওদের প্রতি অসম্মানও।’
মরিনহোর মত এই মুহূর্তে চাপে নেই, তবে আর্সেন ওয়েঙ্গারের ওপর চাপটা তো প্রতি মৌসুমেই থাকে। গত কয়েক বছরে এমনিতেই খুব বেশি শিরোপা জেতা হয়নি, তবু ইংলিশ ফুটবলের অন্য সব শিরোপায় অন্তত একবার হলেও হাত ছুঁইয়ে দেখেছেন। অথচ আর্সেনালের রাজত্বে ১৯ বছরেও এখনো এই লিগ কাপটা ধরে দেখা হলো না ওয়েঙ্গারের। এ বছরও হচ্ছে না। শেফিল্ড ওয়েনেসডের কাছে কাল ৩-০ গোলের লজ্জা নিয়েই বিদায় নিল গানাররা। তবে হার ছাপিয়েও ওয়েঙ্গারের অস্বস্তি বাড়িয়ে দিয়েছে অ্যালেক্স অক্সলেড চেম্বারলেইন ও থিও ওয়ালকটের চোট। ম্যাচ শেষে ওয়েঙ্গার একটু ‘স্বস্তি’ খুঁজে নিলেন নিজের সিদ্ধান্তে, ‘আমি খুব ভালো করেছি অ্যালেক্সিস (সানচেজ) ও (মেসুত) ওজিলকে না নামিয়ে।’ সূত্রঃ এএফপি, ইএসপিএন।