দুই মিনিটের জাদুতে জিতল টটেনহাম

শেষ মুহূর্তে জয়ের পর দর্শকদের সঙ্গে উদযাপন টটেনহামের খেলোয়াড়দেরছবি: এএফপি

গোল করেই দর্শকদের দিকে ভোঁ–দৌড় দিলেন স্টিভ বারউইন। পেছন থেকে তাঁকে ক্রেন দিয়ে টেনে ধরলেও হয়তো থামানো যেত না!

একদম শেষ মুহূর্তে গোল করে দল জেতানোর মতো আনন্দ যে আর কিছুতে হয় না। এক দর্শকের কানটুপি ধরে তাঁর সেকি আনন্দ! টটেনহাম গোলকিপার উগো লরিসও ততক্ষণে যোগ দিয়েছেন বারউইনের উদ্‌যাপনে।

কিং পাওয়ার স্টেডিয়ামে তখন অন্য প্রান্তে টটেনহামের বাকিরা মিলে উদ্বাহু উদ্‌যাপনে মেতেছেন। শুধু মাঠটা যে দলের—লেস্টার সিটির দর্শকেরা পাথরের মতো বোবা বনে গেছেন। যোগ করা সময়ের পঞ্চম মিনিটেও জয়ের পথে ছিল লেস্টার। দুই মিনিটের মধ্যেই কিনা দল হেরে গেল!

ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে লেস্টারের মাঠে কাল এমন রোমাঞ্চকর এক ম্যাচই দেখা গেল। স্কোরলাইন বলছে, লেস্টারকে ৩-২ গোলে হারিয়েছে টটেনহাম। ম্যাচে সময় যত গড়িয়েছে, উত্তেজনা ততই পেখম মেলেছে। প্রথমার্ধে ১-১ গোলে সমতায় ছিল দুই দল। বিরতির পর ৭৬ মিনিটে এগিয়ে যায় লেস্টার।

নির্ধারিত সময় পর্যন্ত লেস্টার এই গোল ব্যবধানে এগিয়ে থাকলেও যোগ করা সময়ের শেষ অঙ্কে গিয়ে নায়ক বনে যান টটেনহামের ডাচ্‌ ফরোয়ার্ড স্টিভ বারউইন। বদলি হয়ে নেমে ৯৫ ও ৯৭ মিনিটে করেন জোড়া গোল। ব্যস, অবিস্মরণীয় এক জয় তুলে নেয় টটেনহাম। শেষ কবে প্রিমিয়ার লিগের কোনো ম্যাচে যোগ করা সময়ে এমন রোমাঞ্চ দেখা গেছে?

২০১১-১২ মৌসুমে ম্যানচেস্টার সিটি-কুইন্স পার্ক রেঞ্জার্সের মধ্যে সেই ম্যাচ মনে আছে তো? লিগ শিরোপা নিষ্পত্তির শেষ দিনে মাঠে নেমেছিল দুই ম্যানচেস্টার। দুই দলের মধ্যে পার্থক্য ছিল শুধু গোল ব্যবধানের।

সিটিকে তো রীতিমতো পাহাড় ডিঙোতে হয়—ম্যাচে ২-১ গোলে পিছিয়ে থেকেও যোগ করা সময়ে অবিশ্বাস্যভাবে আরও দুই গোল করে তুলে নেওয়া জয়ে শিরোপা নিজেদের করে নেওয়ার পাশাপাশি প্রিমিয়ার লিগে অন্যতম সেরা মুহূর্তের জন্ম দিয়েছিল ম্যানচেস্টার সিটি।

সেই ম্যাচটা মনে করিয়ে দেওয়ার পাশাপাশি একটি জায়গায় ম্যাচটা ছাপিয়েও গেছে টটেনহাম। ৯১ মিনিট ১৪ সেকেন্ড পর্যন্ত সে ম্যাচে পিছিয়ে থেকে জয় তুলে নিয়েছিল সিটি। টটেনহাম কাল পিছিয়ে ছিল ৯৪ মিনিট ৫২ সেকেন্ড পর্যন্ত। প্রিমিয়ার লিগে কোনো ম্যাচে সবচেয়ে বেশি সময় পর্যন্ত হারের মুখে থেকে শেষ পর্যন্ত জয় তুলে নেওয়ার নজির গড়ল টটেনহাম।

ধারার বিপরীতে ২৪ মিনিটে প্যাটসন ডাকার গোলে এগিয়ে যায় লেস্টার। টটেনহামের জালে স্বাগতিকদের সেটি ছিল প্রথম শট। কিন্তু প্রথমার্ধ শেষ হওয়ার আগে হ্যার কেইনের গোলে সমতায় ফেরে আন্তনিও কন্তের দল। ৭৬ মিনিটে জেমস ম্যাডিসনের গোলের পর লেস্টারের ঝুলিতেই পূর্ণ ৩ পয়েন্ট দেখছিলেন অনেকেই। টটেনহাম কোচ হিসেবে কন্তের প্রথম হারও দেখছিলেন কেউ কেউ।

কিন্তু এই দুই দলের ম্যাচে যে প্রচুর গোল হয়, তাই শেষ বাঁশি না বাজা পর্যন্ত কিছুই বলা যায় না—তা ভুলে গিয়েছিলেন অনেকেই। ২০১৪ সালে প্রিমিয়ার লিগে ফেরার পর লেস্টারের বিপক্ষে টটেনহামের ম্যাচে সব মিলে ৫৯ গোল হয়েছে। এ সময় শুধু আর্সেনাল-লিভারপুল (৬২) ম্যাচেই লেস্টার-টটেনহাম ম্যাচের চেয়ে বেশি গোল হয়েছে। তাই নাটকের তখনো বাকি ছিল।

টটেনহাম ডিফেন্ডার ম্যাট ডোহার্টির কাছ থেকে বল পেয়ে ৯৫ মিনিটে সেই নাটকের শেষ অঙ্ক শুরু করেন বারউইন। ২-২ গোলে সমতায় ফেরে টটেনহাম। দুই মিনিট পরই কেইনের দারুণ থ্রু পাস থেকে এনে দেন অবিশ্বাস্য জয়।

যোগ করা সময়ে গোলের পর স্টিভ বারউইনের (বাঁয়ে) উদযাপন
ছবি: এএফপি

এ জয়ে ১৯ ম্যাচে ৩৬ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের পাঁচে উঠে আসা টটেনহাম কোচ কন্তে জানালেন, দলের এই হারের আগে হার না মানার মানসিকতাটাই তিনি এত দিন খেলোয়াড়দের মাঝে গেঁথে দেওয়ার চেষ্টা করেছেন, ‘আমরা দেখিয়ে দিয়েছি, কখনো হাল ছাড়ি না। নিজেদের দর্শনটা কী, খেলোয়াড়েরা তা দেখিয়ে দিয়েছে। আমাদের অবশ্যই শেষ পর্যন্ত লড়তে হবে, ফল বের করার চেষ্টা করতে হবে।’