নতুন ‘শুরু’র আগে মেসিকে ডাকছে যত রেকর্ড

এ মৌসুমেও বেশ কিছু রেকর্ড অপেক্ষায় আছে মেসির।ছবি: রয়টার্স

এ মৌসুমে বার্সেলোনাকে নিয়েই ব্যস্ত ছিলেন ক্রীড়া সাংবাদিকেরা। বায়ার্ন মিউনিখ চ্যাম্পিয়নস লিগ জিতে দেশের ফেরার পর থেকেই আলোটা নিজেদের দিকে টেনে নিয়েছে কাতালানরা। প্রথমে লিওনেল মেসি ক্লাব ছাড়তে চাইলেন। দশ দিন লম্বা সে যুদ্ধ শেষে সাদা পতাকা ওড়ানো হলো, আপাতত এক মৌসুমের জন্য ক্লাবে রয়ে গেছেন মেসি।

মেসি রয়ে গেলেও শান্তি মেলেনি সাংবাদিকদের। ইচ্ছার বিরুদ্ধে তাঁকে রেখে দেওয়া হয়েছে, ওদিকে ক্লাবে থাকার ইচ্ছা জানিয়েও বিদায় নিতে হয়েছে লুইস সুয়ারেজকে। সে বিদায়ও এমন ঢঙে যে, খেপে গিয়ে ক্লাবের বোর্ডকে আরেক দফা দুকথা শুনিয়ে দিয়েছেন মেসি। এই ডামাডোলে বার্সেলোনার যে মৌসুম এখনো শুরু হতে বাকি, সে তথ্যটাই ভুলে যাওয়ার দশা সবার। অবশেষে অপেক্ষা শেষ হচ্ছে বার্সেলোনা সমর্থকদের, আজ ভিয়ারিয়ালের বিপক্ষে বাংলাদেশ সময় রাত ১টায় ম্যাচ দিয়ে লিগ শুরু হচ্ছে মেসিদের।

বার্সেলোনার জার্সিতে সম্ভাব্য সবকিছু জিতেছেন মেসি। যত রেকর্ড গড়া সম্ভব সেগুলো হয়ে গেছে। এ মৌসুমে তাই বাড়তি কোনো প্রেরণা থাকার কথা নয়। কিন্তু ক্লাব সভাপতি জোসেপ মারিয়া বার্তোমেউর ওপর যতই রাগ করুন না কেন, বার্সেলোনার জার্সিতে সম্ভাব্য সেরা পারফরম্যান্স দেখানোর পণ করেছেন মেসি। আর যদি আগামী মৌসুমে ক্লাব ছাড়ার সিদ্ধান্ত থেকে সরে না আসেন, তবে রাজকীয়ভাবেই বিদায় নিতে চাইবেন বার্সা অধিনায়ক। গত মৌসুমে দুর্দান্ত সময় পার করেছেন মেসি। ৩১টি গোল করেছেন, গোলে সহায়তা ছিল ২৫টি। গত পাঁচ বছরে এতগুলো গোল বানিয়ে দেননি মেসি। ম্যাচ প্রতি ৫.৯১টি ড্রিবল করেছেন, যা ক্যারিয়ার সর্বোচ্চ ছিল! এ মৌসুমে বিদায় উপহার হিসেবে সেটাকেও নিশ্চয় টপকাতে চাইবেন ৩৩ বছর বয়সী আর্জেন্টাইন ফরোয়ার্ড।

এ মৌসুমে মেসি বেশ কিছু রেকর্ড ভাঙার পথে আছেন। এর মধ্যে কয়েকটি বলতে গেলে নিশ্চিত হয়েই আছে। শুধু চোটমুক্ত থাকলেই একটি রেকর্ড নিশ্চিত তাঁর। লা লিগায় বার্সেলোনার পক্ষে সবচেয়ে ম্যাচ খেলার রেকর্ড জাভি হার্নান্দেজর। কিন্তু তাঁর ৫০৫ ম্যাচের রেকর্ডটি মেসি দখলে নিতে পারবেন আর মাত্র ২১ ম্যাচ খেললেই। ক্লাবের হয়ে জাভির সবচেয়ে বেশি ম্যাচ খেলার রেকর্ডটিও মেসির দখলে যাওয়ার অপেক্ষায়। বার্সেলোনার হয়ে সব প্রতিযোগিতা মিলে ৭৬৭ বার মাঠে নেমেছেন জাভি। এবার লিগ, কোপা দেল রে, চ্যাম্পিয়নস লিগ ও স্প্যানিশ সুপার কাপ মিলিয়ে ৩৭বার মাঠে নামলেই রেকর্ডটি মেসির হয়ে যাবে।

লিগে নির্দিষ্ট কোনো ক্লাবের হয়ে সবচেয়ে বেশি ম্যাচ খেলার রেকর্ডটিও মেসির নাগালে ছিল। কিন্তু রিয়াল মাদ্রিদের মানোলো সানচিসের রেকর্ডটা লিগের বর্তমান ফরম্যাট অনুযায়ী অন্তত এ মৌসুমে ভাঙা হবে না তাঁর। সানচিস রিয়ালের হয়ে ৫৩৩টি লিগ ম্যাচ খেলেছেন। মেসি সব ম্যাচ খেললেও এবার শুধু তাঁকে ছুঁতেই পারবেন।

মেসি বরং যে রেকর্ড গড়া সম্ভব, সেদিকেই নজর দিতে চাইবেন। গত মৌসুমে কোনো শিরোপা পাননি। এক যুগ পর এমন নিষ্ফলা মৌসুম কাটিয়েছেন আর্জেন্টাইন ফরোয়ার্ড। ফলে ক্যারিয়ারের শিরোপা সংখ্যা ৩৪-এই আটকে আছে তাঁর। শুধু এক ক্লাবের হয়ে সর্বোচ্চ শিরোপা জেতার রেকর্ড এখনো রায়ান গিগসের। ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের হয়ে ৩৬টি শিরোপা জিতেছেন গিগস। ক্যারিয়ারের তৃতীয় ট্রেবল জয় করতে পারলেই গিগসকে পেছনে ফেলে দেবেন মেসি। কাজটা প্রায় অসম্ভব, কিন্তু ক্লাবকে বিদায় বলার সেরা উপায় তো এটাই।

ফ্রি কিক থেকে গত মৌসুমে বেশ কিছু গোল করেছেন মেসি।
ছবি: রয়টার্স

একটি রেকর্ড অনায়াসেই হওয়ার কথা মেসির। সেই কবে ২০০৫-০৬ সালে ৮ গোল করেছিলেন মেসি। ক্যারিয়ারে এর পর কোনো মৌসুমে ১৬ গোলের কম দেননি। এবার মাত্র ১০ গোল হলেই পেলের রেকর্ড ভেঙে দেবেন মেসি। সান্তোসের হয়ে ৬৪৩ গোল তিনবারের বিশ্বকাপজয়ী ব্রাজিলিয়ান কিংবদন্তির, কোনো এক ক্লাবের জার্সিতে প্রতিযোগিতামূলক ম্যাচে সর্বোচ্চ গোলের রেকর্ড সেটি। বার্সেলোনার হয়ে ৬৩৪ গোল হয়ে গেছে মেসির।