দেশের ফুটবলে বিতর্কের কেন্দ্রে এখন রেফারিং। আজ এই ক্লাব রেফারিং নিয়ে অভিযোগ তুলছে তো, কাল ওই ক্লাব। কখনো ন্যায্য অভিযোগ, আবার কখনো হারলেই রেফারির ঘাড়ে সব দোষ চাপানোর পুরোনো অভ্যাস। তবে ভুল করলে রেফারিরা শাস্তিও পাচ্ছেন। গত মাসে স্বাধীনতা কাপ ও এ মাসে অনুষ্ঠিত ফেডারেশন কাপ মিলে ৩–৪ জন রেফারি শাস্তি পেয়েছেন বলে বাফুফের রেফারিজ কমিটি সূত্রে জানা গেছে।

বাজে রেফারিং করে কারা শাস্তি পেয়েছেন, সেটি অবশ্য প্রকাশ করেনি কমিটি। তবে জানা গেছে, শাস্তি হিসেবে অভিযুক্ত রেফারিদের পরে এক বা একাধিক ম্যাচে দায়িত্ব পালন থেকে বিরত রাখা হয়।

রেফারি ভুল করলে শাস্তি পায়, এটা চলমান প্রক্রিয়া। সম্প্রতি কয়েকজন শাস্তিও পেয়েছে। এখন কঠিন পরিস্থিতি চলছে।
ইব্রাহিম নেসার, বাফুফের রেফারিজ কমিটির ডেপুটি চেয়ারম্যান

রেফারিং নিয়ে বিভিন্ন ক্লাবের অভিযোগের পর ভিডিও দেখে কিছু ঘটনার সত্যতা খুঁজে পাচ্ছে রেফারিজ কমিটি। ৬ জানুয়ারি ফেডারেশন কাপে মোহামেডান–রহমতগঞ্জ সেমিফাইনালে রেফারি জালাল উদ্দিনের বিরুদ্ধে মোহামেডানের আনা ৪টি অভিযোগের ৩টিরই সত্যতা খুঁজে পায়নি রেফারিজ কমিটি। তবে কমিটি মনে করছে, মোহামেডানকে একটি ন্যায্য পেনাল্টি থেকে বঞ্চিত করেছেন রেফারি।

একই টুর্নামেন্টে আবাহনী লিমিটেডের বিপক্ষে সেমিফাইনালে সাইফ স্পোর্টিংয়ের পরপর দুটি পেনাল্টি গোল বাতিল করে দেন রেফারি সাইমুন হানান। সাইফের অভিযোগের পর কমিটির পর্যবেক্ষণ—রেফারি সঠিক সিদ্ধান্তই দিয়েছিলেন।

সালম মুর্শেদী নাকচ করে দিলেও সালাউদ্দিন মনে করেন বিদেশি রেফারি আনা যেতে পারে
ফাইল ছবি

আবার শেষ আটের ম্যাচে বক্সের বাইরে ফাউল হলেও আবাহনীকে অন্যায্য পেনাল্টি দেন বলে রেফারি মিজানুর রহমানের বিরুদ্ধে আনা শেখ জামালের অভিযোগকে সঠিক মনে করছে রেফারিজ কমিটি। ওই ম্যাচের শুরুতে শেখ জামালের নাইজেরিয়ান স্ট্রাইকারকে বক্সের ভেতর ফাউল করা হলেও রেফারি সেটি এড়িয়ে যান। কমিটি মনে করে, ওই ফাউলে পেনাল্টি দেওয়া উচিত ছিল।

এই অবস্থায় বিদেশি রেফারি আনার দাবি তুলেছে সাইফ স্পোর্টিং। পরশু মোহামেডানের কর্মকর্তারাও বাফুফে সভাপতি কাজী সালাউদ্দিনের সঙ্গে দেখা করে রেফারিং নিয়ে প্রতিকার চেয়েছেন। সালাউদ্দিনও বিদেশি রেফারির পক্ষে মত দিয়েছেন। অবশ্য গত বছর ফেব্রুয়ারিতে তিনি এ মৌসুম থেকে ভিএআর চালুর কথা বললেও সেটি বাস্তবায়ন হয়নি।

গত বছর প্রিমিয়ার লিগে বসুন্ধরা কিংসের বিপক্ষে রেফারি জালাল উদ্দিন শেখ জামালের গোল বাতিল করলে শোরগোল পড়ে যায়। বাফুফে তখন রেফারিজ কমিটি ভেঙে দিয়েছিল। বাফুফের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি সালাম মুর্শেদী নতুন রেফারিজ কমিটির প্রধান হয়ে বাফুফের এক কর্মীকে বরখাস্ত করেন। অভিযোগ ছিল ওই কর্মী তখন রেফারিদের ম্যাচ বরাদ্দসহ সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করতেন।

রেফারিদের ভুল কমাতে প্রযুক্তির সাহায্য নেওয়ার কথা বলছেন কেউ কেউ
ছবি: প্রথম আলো

বাফুফের হেড অব রেফারিজ আজাদ রহমান চলমান রেফারিং বিতর্ক নিয়ে মন্তব্য করতে রাজি হননি। রেফারিজ কমিটির ডেপুটি চেয়ারম্যান ইব্রাহিম নেসার বলেছেন, ‘রেফারি ভুল করলে শাস্তি পায়, এটা চলমান প্রক্রিয়া। সম্প্রতি কয়েকজন শাস্তিও পেয়েছে। এখন কঠিন পরিস্থিতি চলছে। তাই কোনো কথা বলতে পারব না।’

বিতর্কমুক্ত রেফারিং পেতে রেফারিদের মানোন্নয়নে জোর দিচ্ছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক রেফারি। তিনি বলেছেন, শীর্ষ পর্যায়ের একটি ম্যাচ পরিচালনা করে রেফারিরা মাত্র ৩ হাজার টাকার মতো পান। তা–ও টাকা বাকি পড়ে। এভাবে ভালো রেফারিং হয় না। সাবেক ফিফা রেফারি তৈয়ব হাসান মনে করেন, রেফারিং নিয়ে বিতর্ক কমাতে প্রযুক্তির সাহায্য নেওয়া উচিত। তবে তিনি বলেছেন, ‘রেফারিদের ত্রুটিবিচ্যুতি থাকলেও কেউ ইচ্ছাকৃতভাবে ভুল করেন না।’